Published on

নীল রঙের অন্ধকার (পঞ্চম কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।

বিশোর্ধ্ব এক পর্ন-আসক্ত তরুণের জীবনের একটি দিন

আমি পর্নে আসক্ত।

আমি সবসময় এরকম না, কিন্তু অনেক দিন থাকে যেদিন ঘুম থেকে উঠে কোন কিছুই করতে ইচ্ছা

হয় না। বরং ঠিক করি, দিনটা যাবে পর্ন দেখে, হস্তমৈথুন করে, খাওয়া-দাওয়া করে এবং ঘুমিয়ে। হয়তো আমি এটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখি না, তাও কীভাবে যেন হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে, মোটামুটি ১০ম বারের বেলায় যথাসম্ভব চেষ্টা করি একদমই না ভাবতে, যে আমি বেশ ভাল পরিমাণ সময়ই সম্পূর্ণ অচেতনতায় কাটাচ্ছি। পোষায় না যদিও। শুধু কয়েক মুহুর্তের যৌন-আনন্দ। এমনকি কখনো তাও না, শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস একটু দ্রুত হওয়া। (পর্নের) চেহারাগুলোর কথা চিন্তা করি, নিজেকে ওদের জায়গায় কল্পনা করি। আমার পছন্দের পর্নের টাইপ হল যেগুলোতে গ্রুপ-সেক্স থাকে। কিছু বন্ধু-বান্ধব একত্র হওয়া শুধুমাত্র যৌনতার খাতিরে। তেমন কোন ব্যাপার না। তাদের লজ্জা করে না, নাই অপরাধবোধ, নাই খেদ। শুধু মেনে নেওয়া। শুধু সেক্স। শুধু নগ্ন হওয়া, একে অপরের দিকে মুচকি হাসা। ভাল।

আমার ভাল লাগে।

প্রায়ই চিন্তা করি, আমি ওরকম করতে পারতাম কি না- নিজের কাছে নিজের যৌনতার স্বীকৃতি পাওয়া এবং যতটা চাই ততটা মুক্ত আর উদার হওয়া।

আমি সবসময় বুঝতে পারি কোনটা মেকি, আসল না। আমি ঐ ভিডিওগুলো একদমই সহ্য করতে পারি না, যেগুলো দেখেই বুঝা যায় মানুষগুলো অভিনয় করছে, অথবা যা-ই করুক, বাধ্য হয়ে করছে। মাঝেমাঝে আমি হয়তো ওটাও দেখবো এবং হস্তমৈথুনও করব। কোন সীমা নেই, শুধু হস্তমৈথুন করতে চাই। নিজেকে অচেতনতায় ফেলে দিয়ে অনুভূতিহীন হতে চাই। ভাবা শুরু করি, কতটা সেক্স আমি মিস করছি এবং আমি সত্যিকারের রিলেশনশিপকে কতটা ভয় পাই। এমনকি যে সব “রিলেশনশিপে” আমি ছিলাম, সবগুলোই পর্ন দ্বারা এত বেশি প্রভাবিত হয়ে গিয়েছিল যে একটা স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার সাথে ওগুলোর আর কোন পার্থক্য ছিল না। কোন ভালবাসা বা সম্মান ছিল না। খালি উত্তেজনা আর জটিলতা।

এখন রাত ৯টা বাজে, মনে হয় সকাল ৯টায় শুরু করেছিলাম, আজকে ক্লাসেও যাইনি, বাসার বাইরেও যাইনি (একবার বাদে। ম্যাকডোনাল্ড থেকে খাবার আনতে গিয়েছিলাম, কারণ ম্যাকডোনাল্ড আর পর্ন কেন জানি একসাথে ভালই যায়)। সারাদিনের মধ্যে আমার খুব বাজে সময় যায় যখন চিন্তা করি আমার জীবনে কখনো পরিবর্তন হবে না এবং আমি সবসময়ই আমার ভীতি ও সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে ভয় পাবো। তার চেয়ে বরং কম্পিউটারে বা সেল-ফোনে পর্ন দেখতে থাকি, অথবা মাথার মধ্যে কল্পনা করতে থাকি ওগুলো। এতে ভাল কিছু হয় না এবং ফলাফলটাও আসলে পোষায় না। আমি বেশ ক্লান্ত আর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। মাঝেমাঝে কষ্ট হয়। গতকাল থেকে গোসল করিনি। সম্প্রতি আমার একটা “রিলেশনশিপ” ব্রেক আপ হয়ে গেছে, আমি এখনো তা নিয়ে বিষণ্ণ। আমি পর্ন ছেড়ে দিতে পারছি না কারণ আমার মনে হচ্ছে এটা তাকে (এক্স-গার্লফ্রেন্ড) আমার সাথে কোনভাবে যুক্ত রাখছে। জগাখিচুড়ি টাইপ বিকৃত মানসিকতা আর কি!

ব্যাপার হল, আমি বেশ স্বাভাবিক একটা মানুষ, স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র। আমি চমৎকার বৈজ্ঞানিক জিনিস-পত্র পড়াশোনা করি এবং ক্লাস নিই। কিন্তু তাও, আমার ভাল লাগে না এগুলোর কোনটিই। যখন এই মানসিকতায় প্রবেশ করি, কোন কিছুরই পরোয়া করি না তখন। কোন কিছু চিন্তা করতে চাই না, সব ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করে। মনে হতে থাকে সবকিছুই আমার অধিকারসূত্রে পাওয়া। কোন কিছুর জন্যই আমি কৃতজ্ঞ না। লজ্জা, অপরাধবোধ আর আশাহীনতার সবচেয়ে গভীর গর্তে পড়ে আছি আমি। আত্মসম্মান জানালা দিয়ে পালায়, শুধু চিন্তা করি কতটা ঘৃণা করি নিজের জীবনকে এবং কতটা চাই মারা যেতে। পর্নে আসক্তির মাত্র দশ বছরের মাথায় জিনিসগুলো বিবর্তিত হয়ে পরোক্ষভাবে আত্মঘাতী চিন্তায় পরিণত হয়েছে।

মজার ব্যাপার হল, হয়তো আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং আমি আরো একবার নিজেকে বুঝাতে সক্ষম হব যে পর্ন-আসক্তিকে চিরতরে দূর করে ফেলব। পৃথিবী আমার হাতের মুঠোয় থাকবে, আমি চমৎকার সব কাজ করব। কিন্তু যে মুহূর্তে মনে হবে ব্যাপারগুলো আমার মন মত হচ্ছে না, আবার আমি যৌনতার সেই অন্ধকার গর্তে পড়ে যাব। যৌনতা খারাপ না। এটা স্বাভাবিক এবং সুন্দর। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পর্ন আমার জন্য এটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নারীর প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গীকে নষ্ট করেছে পর্ন, যেটাকে কি না আমি ভালবাসি ও কদর করি বলে দাবী করি। পর্ন হয়তো সবার জন্য এরকম না, কিন্তু আমাকে এটা ধ্বংস করে ফেলছে। আমাকে ধসিয়ে দেয় প্রতিটিবার। তাহলে কেন আমি বারবার এখানে আসি? কারণ এটা পরিচিত, এবং আমি নিরাশ হয়ে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছাই যে তখন আর কোন কিছুর পরোয়া করি না। আমি এর আদ্যোপান্ত জানি, জানি কীভাবে এতে ঢুকতে হয় এবং কীভাবে এটা থেকে বের হতে হয়।

এই সময়টায় আমার সামনের যৌনদ্দীপক ছবি এবং “যৌন তৃপ্তি” ছাড়া অন্য আর কিছু থাকে না। অনেকবার চেষ্টা করেছি এটা দূর করার। খুব বেশি হলে কয়েক মাস যাওয়ার পর এই অভ্যাস মাথা-চাড়া দিয়ে উঠে আমাকে বুঝায় যে আমি সর্বোচ্চ এই পর্যন্তই আসতে পারব এবং এটাই আমার যৌনতা আর পুরুষত্বকে সংজ্ঞায়িত করে। আমি ভবিষ্যতে নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করব, কিন্তু এখন আমি বিষণ্ণ ও ভীত যে সারা জীবন এভাবেই চলতে থাকবে।

নিজের উপর ক্ষুব্ধ আমি, ক্ষুব্ধ নিজের অতীতের উপর, শৈশব আর সংস্কৃতির উপর, যা কিছু আমাকে নারী ও যৌনতার মাঝের সম্পর্ক শিখিয়েছে। আমি তাদেরকে দুষতে চাই, যারা আমাকে শিখিয়েছে নিজের অনুভূতি আর উদ্বেগকে চেপে রেখে সবকিছু ঠিক আছে ভান করতে।

আমি ঠিক নেই।

আমি একলা, আমি ভীত।

মনে হচ্ছে যা-ই করছি, আমাকে জোর করে করানো হচ্ছে এবং আমি যা চাই, তা থেকে আমাকে আটকে রাখা হচ্ছে। আমি কি চাই, তাও জানি না। কাউন্সেলিং ও গ্রুপ-থেরাপি নিচ্ছি। দেখা যাক কি হয়। এতদিনে সামান্য উন্নতি হলেও নিজের উপর খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারিনি। যখন পা পিছলে যায়, এখানে এসে পড়ি, মনের একদম অস্পষ্ট একটা জায়গায়, যেখানে কোন কিছুরই মানে নেই, যে জায়গাটা আমার জীবনের সব ভালকে ঢেকে দেয়। আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ক্লান্ত লাগে, অনেক ক্লান্ত... এবং আসক্তি চলতেই থাকে।

আমি একজন পর্ন-অ্যাডিক্ট।

----------------------------------------------------------------

দুর্ভাগ্যবশত উপরের এই ব্যক্তিগত কাহিনীটি মানুষ যতটা মনে করে তার চেয়েও কমন। এখন অসংখ্য তরুণ পর্ন দেখার খারাপ ফলগুলো উপলব্ধি করছে এবং মুক্ত হতে চাইছে। কিন্তু পর্ন অত্যন্ত আসক্তিকর প্রকৃতির হওয়ায় তারা নিজেদেরকে বিষণ্ণতা, (পর্নের উপর) নির্ভরশীলতা, এবং স্ব-চিকিৎসার এক চক্রে আটক অবস্থায় আবিষ্কার করছে। রিলেশনশিপ এবং আত্মমর্যাদাবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, আসক্তির শেকলে আটকা পড়ে।

“আপনি” কী করতে পারেন

পর্ন খুবই আকর্ষণীয় আর উত্তেজনাময় মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে এটা যা করে তা হল, দর্শককে আসক্ত করা এবং তার সম্পর্কগুলোর ক্ষতি করা। আর্টিকেলটা শেয়ার করে পর্ন দেখার ক্ষতি এবং ফলাফল বিষয়ক এই আসল কাহিনীর প্রতি আলোকপাত করতে পারেন।

(মূল লিখাটি- www.fightthenewdrug.com সাইট থেকে সংগৃহীত)

(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)

পড়ুন প্রথম চার কিস্তি –

প্রথম কিস্তি

দ্বিতীয় কিস্তি

তৃতীয় কিস্তি

চতুর্থ কিস্তি