Published on

নীল রঙের অন্ধকার (ষষ্ঠ কিস্তি)

আমি সুমন(ছদ্মনাম),বয়স ১৯ বছর।

একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমার জন্ম গ্রামের একটি ছোট পরিবারে।

আজ আমি আমার জীবনের ছয়টি বছরের কিছু গোপন কথা আপনাদেরকে বলব।

আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। সেই সময়টাতে আমাদের গ্রামে ভিসিডি ভাড়ায় আনা হতো এবং প্রায় সব বয়সের মানুষজন দেখতো। তখন বাংলা মুভিগুলোই দেখানো হতো। ভিসিডি আনা নেয়ার কাজটি যারা করতো একটা সময় তাদের সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায়।

সে বছর বৈশাখী মেলার দিন কয়েকজন বন্ধু মিলে মুভি দেখছি, তখন রাত প্রায় ১টা। একজন একটা মুভি চালালো যেটা ছিলো পর্নমুভি। আমি অবশ্য দেখতে চাইছিলাম না। সেইদিনই প্রথম পর্নমুভির সঙ্গে আমার পরিচয়।

এর মধ্যে আর কোন দিন পর্ন দেখিনি। তবে যখন ক্লাস সিক্সের শেষের দিকে- হঠাৎ একদিন রাতে দাদা সম্পর্কের একজনের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয় (সেই সময়টাতে অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে আমার স্পষ্ট কোন ধারণা ছিলো না)। তো ওই ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হচ্ছিল । একটা সময় দেখলাম উনি সেক্স রিলেটিড কথা বেশি বলছেন। আমি উনাকে অনেক সম্মান করতাম তাই পুরোটা সময় তার বিভিন্ন কথা শুনে গেলাম। ওইদিন রাতের কিছু কিছু কথা আমার মনে কৌতুহলের জন্ম দিয়েছিল। যাইহোক এভাবে আমার ক্লাস সিক্স শেষ হলো।

ক্লাস সেভেনে ।

পড়াশোনার চাপ অনেক, আমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।এর মাঝে কয়েকজন বন্ধুর গ্রার্লফ্রেন্ড হয়। আমার কিছু কিছু বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে । তখন যেগুলো জেনেছিলাম তার প্রায় সবই ছিল ভুল তথ্য ।যাইহোক,সেভেনের শেষ দিকে একটা মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক হয়ে যায়(যদিও এটা এই বয়সের জন্য নয়)। এর মাঝে আমি আরো ৪ বার ভিসিডিতে পর্নমুভি দেখি।

ক্লাস এইট।

পড়াশোনা আর আমার নতুন প্রেম,এই দুইটা নিয়েই আমার সময় কাটতো। অনেক ভালোই চলছিলো সম্পর্কটা আমার । আমি ওই মেয়েটার প্রতি খুবই দুর্বল হয়ে যায় (এই বয়সের প্রেম জীবনে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে, নিজের জীবন থেকেই আমি তা শিখেছি)। আমি একটা মাল্টিমিডিয়া ফোন নেই।মাঝে মাঝে মেমোরি কার্ডে পর্নমুভি এনে দেখতাম। ক্লাস এইটের শেষদিকে দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ব্রেকআপ হয়ে যায়। ঠিক এর পর থেকেই আমার জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়।

ক্লাস নাইন।

আমি একা হয়ে পড়ি, মনে বিষণ্ণতা। তখন একা থাকতে বেশি ভালো লাগতো।আস্তে আস্তে আমি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। তখন মোবাইলে টানা দুইমাস পর্নমুভি দেখলাম। একদিন আমার এক বন্ধু একটা লিংক দিলো, আমি মেগাবাইট কিনে সেখানে যাই এবং কিছু গল্প পড়ি।আসলে এগুলো ছিলো চটি গল্প, যা পরে বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমি সময় পেলেই মেগাবাইট কিনে বিভিন্ন সাইটে গিয়ে চটি গল্প পড়তাম। গল্পগুলো আমি অনেক উপভোগ করতাম তখন। স্বাভাবিক ভাবেই মাস্টারবেশনের একটা প্রভাব শুরু হয় আমার মধ্যে। ক্লাস নাইন শেষ হয় এভাবেই ।

ক্লাস টেন।

আমি দেখলাম মেয়েদের প্রতি আমার কোন বিশ্বাস বা ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই, সব মেয়েকে মনে হয় প্রতারিণী (আসলে এটা আমি অনেক পরে বুঝতে পারি যে, প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হলে অনেকের কাছেই এমন মনে হয়)।

এই সময়টাতে আমি যৌনতার ব্যাপারে প্রচন্ড কৌতুহলী হয়ে উঠি।চটি গল্প বাদ দিয়ে আনলিমিটেড প্যাক কিনে পর্ন ডাউনলোড করতাম আর সেগুলো দেখতাম। তখন আমার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যেতে থাকে। তবুও আমি পর্ন দেখতে থাকি(আসলে পর্ন আর মাস্টারবেট, এই দুটোর মাঝে একটা সম্পর্ক সবসময় থাকে)। পর্ন না দেখলে তখন আর ভালো লাগতোনা। এমনও হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার আগের রাতেও আমি পর্ন দেখে তারপর ঘুমিয়েছি। সুতরাং আপনারা বুঝতেই পারছেন তখন কি মারাত্মক পর্ন আসক্ত ছিলাম আমি। এমনও দিন গেছে আমি চার বারেরও বেশি পর্ন দেখেছি । এসএসসি পরীক্ষার পরের ফ্রি সময়টাতে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এসএসসি রেজাল্ট ভয়াবহ রকমের খারাপ হয়।

কলেজে ভর্তি হতে এলাম শহরে। তবে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারিনা, স্যার ক্লাস করান আর আমি টেবিলের নিচে ফোন রেখে পর্ন ডাউনলোড করি। র্ফাস্ট ইয়ারের মাঝোমাঝি সময়ে আমি পিসি নিলাম। কম্পিউটারে এইচডি পর্ন দেখা শুরু হল। হয় দোকান থেকে টাকায় কিনে অথবা বন্ধুদের মোবাইল থেকে নিয়ে দেখি। কিছুদিন পর ব্রডব্র্যান্ড কানেকশন নেই- তখন অবস্থা আরো খারাপ হয়।কেননা অনলাইনে এইচডি পর্ন দেখা যায় যেকোন সময়।

একটা সময় আমি দেখলাম আমার কিছু মনে থাকে না- অথচ নয় দশ বছর আগের কথা সব মনে থাকে।হাজারো সমস্যায় জীবন তেজপাতা। আমি এও বুঝতে পারছিলাম আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু পর্ন ছাড়া থাকতে পারছিনা। রাত ২টা বা ৩টা পর্যন্তও আমি পর্ন দেখি। যেহেতু আমি একা রুমে থাকতাম তাই আমি না চাইলেও বার বার দেখতে মন চাইতো।

একদিন ফেসবুকে এই (http://bit.ly/2niIvdK ) নোটটি দেখতে পাই । তখন আমার মনে হল “আমি হয়তো ভুল পথে আছি” এবং এর কিছুদিন পর আমি আরো একটি স্টেটাস দেখতে পাই পর্নোগ্রাফিঃ মানবতার জন্য হুমকি (https://www.facebook.com/lostmodesty/ ) নামের একটি পেজে। সেদিন থেকে আমার ভেতর অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে।আমি অনেক চিন্তা করি, কি করা যায় ? কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। আমি দেখলাম আমার ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম “আর না” !!!!

[এই নোটটিতে(http://bit.ly/2niIvdK ) কিছু সমস্যা আছে। পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি থেকে বাঁচার জন্য এখানে মেডিটেশান করার কথা বলা হয়েছে। মেডিটেশান করা শিরক। পড়ুন এই সিরিজের (http://www.quraneralo.com/quantam_1/ ) সব কয়টি লিখা- লস্ট মডেস্টি]

কিছু বিষয় নিয়ে অসংখ্যবার চিন্তা করেছি। পরে গুগলের সহায়তায় কিছু তথ্য পেলাম। একটা সময় নিজেকেই প্রশ্ন করলাম----

(ক) পর্ন/মাস্টারবেশনের এর সুফল কী ?

-আমি এর কোন ভালো দিক খুজে পাইনি। শুধু মনের অদৃশ্য শান্তনা।

(খ) পর্ন/মাস্টারবেশনের এর কুফল কী ?

-প্রথমে আমি দেখলাম এটা ব্রেইনের ক্ষতি করছে। আমার অনেক কিছুই মনে থাকেনা, মেজাজ খিটখিটে থাকে সবসময়।

শারীরিক ভাবে ক্ষতি হয়, আগে আমার যেখানে একটা কাজ করতে ৫মিনিট লাগতো, সেটা করতে এখন ১০মিনিটের মত সময় লাগে। বিভিন্ন অসুস্থতা সবসময় লেগেই থাকে।

মেয়েদেরকে সবসময় ভোগ্যপণ্য মনে হয়। একজন মেয়ে মানুষকে দেখলেই মনে হয় এও হয়তো সেই ধরনেরই মেয়ে।

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকেনা।

জীবনটা একঘেয়ে হয়ে যায়।

পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার সব নষ্ট হয়ে যায়।

নারী নির্যাতনে উৎসাহিত করে……

**আমি এ থেকে বের হয়ে আসতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না।**

প্রথমত এটা এমন এক নেশা, যেটা আমার কাছে মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে মনে হয়। মাছের ফাঁদে মাছে ঢুকতে পারে কিন্তু সেখানে থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন। এমন হয়েছে কয়েকদিন দুরে থেকেছি আবার শুরু হয়েছে। আমি ৫০ এরও অধিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি, কোন কোন সময় আমি সফল আবার কোন কোন সময় ব্যর্থ হয়েছি।

মাঝে এমন হয়েছে, যখন দেখছি আর পারছিনা তখন তাবলীগ জামতে চলে গেছি তিনদিনের জন্য। তখন দেখা গেলো আমার ভেতর আল্লাহর প্রতি একটা ভয় কাজ করে এবং ওগুলো দেখতে মন চাচ্ছে না।

এখন আমি এই কাজগুলো করছি-

১) কম্পিউটারে k-9 ওয়েব প্রটেকশন ইন্সটল করেছি, এবং এমন এক পাসওয়ার্ড যেটা আমিও যানিনা এবং পৃথিবীর কেউ যানে না।

k-9 এর ইউজার ইমেল(যে মেইল দিয়ে k9 রেজিঃ, ডাউনলোড, ইন্সটল করেছি) এর রিকভারি অপশন বন্ধ করেদিয়েছি, অথাৎ এই মেইলের পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে বা ভুলে গেলে এটা আর রিকভারি করা যাবে না।

মেইলের পাসওয়ার্ড ছোট কাগজে লিছে একটি কোরআন শরিফের ভিতরে রেখে দিয়েছি(যদিও এটা ঠিক হয়েছে কিনা জানিনা, তবে আমি পাপ থেকে মুক্তি পেতে এটা করেছি)।

ইউটিউবে অনেক স্কেন্ডাল বা পর্ন ছড়িয়ে থাকে, বিভিন্ন মুভিগুতে বেডরুমের দৃশ্য থাকে, যেগুলো আমাকে পর্ন দেখতে প্ররোচিত করে। আর এই কারনে এখন আগামী সাত দিনের জন্য ইউটিউ k-9 এর মাধ্যমে ব্লক করে রেখেছি। যেন আগামী সাত দিন ইউটিউব না দেখতে পারি(যদিও এটা অনেক কষ্টকর হবে)।

ফোনে যেন নেট ইউজ করতে না পারি সেই জন্য রাউটার বিক্রি করে দিয়েছি।

আমি অনেক অনেকবার দেখেছি কুরআন তেলাওয়াত বা নামাজ অথাৎ ধর্মীয় বিষয়গুলো মনকে সতেজ রাখে এবং কোন অপরাধ করার আগে বিবেক দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়। এ কাজগুলো আমি আগে করতাম না। এখন করার চেষ্টা করি।

সবার সাথে কানেক্টেড থাকোর চিন্তা করছি।

এখন আমি শপথ করি আজকের পর আর না, কিন্তু ? কিন্তু দেখা গেলো কাল আবারো সেই একই কাজ করে ফেলি।আমার বড় সমস্যা হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি আমি। আমি জানি এর কারাপ দিকগুলো কিন্তু ওই সময়টাতে আমার আর এইসব কথা মনে থাকে না।

…এখানে সংক্ষেপে কিছুটা লিখার চেষ্টা করেছি মাত্র । ভোর ৫টা বাজতে চললো প্রায় । প্রয়োজনে আমি আরো জানাতে পারবো। আমি চাই আমার মত কেউ যেন এমন না হয়। তরুণদেরকে সতর্ক করুন প্লিজ, আমার দেখা অনেক ছেলে তার জীবনকে নষ্ট করছে প্রতিনিয়তই। আমার জন্য দোয়া করবেন, আপনাদের জন্যও দোয়া রইলো। আমার পরিচয়টি গোপন রাখবেন।

আরো পড়ুন –

নীল রঙের অন্ধকার (প্রথম কিস্তি): https://goo.gl/38nyqS

নীল রঙের অন্ধকার (দ্বিতীয় কিস্তি): http://bit.ly/2hz9Pqu

নীল রঙের অন্ধকার (তৃতীয় কিস্তি): http://bit.ly/2hwkT5K

নীল রঙের অন্ধকার (চতুর্থ কিস্তি): https://goo.gl/8cUK9B

নীল রঙের অন্ধকার (পঞ্চম কিস্তি): https://goo.gl/DFL62I

পর্ণঃ জীবনের স্বাদ নষ্টকারী: https://goo.gl/doMrt0

আত্মোপলব্ধিঃ http://bit.ly/2ibGm4Z

k-9 ইন্সটল করার টিউটোরিয়াল - https://goo.gl/v69n2c