- Published on
নীল রঙের অন্ধকার (চতুর্থ কিস্তি)
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
# “আমার নাম আমান্ডা । আমার মনে হচ্ছে পর্নোগ্রাফি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অন্যানাদের জানানো উচিত যাতে তারা সাবধান হতে পারে। আমার সঙ্গী ছিল মারাত্মক রকমের পর্নআসক্ত। শুরু থেকেই সে আমাকে বুঝাতে শুরু করে যে ,পর্ন আসলে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার আর সবাই কম বেশি এটা দেখে। সে তার বন্ধুদের কথাও বলতো যে, তারাও পর্ন দেখে থাকে। কষ্টকর হলেও আমি শুরু থেকে তার এই আচরণের সাথে মানিয়ে নিতে চাইতাম কিন্তু দিন দিন এটা অসহ্যকর পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। দেড় বছর ধরে নিজের মনের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার স্বামী তখন দিনে প্রায় ৩ বার পর্ন ভিডিও দেখতো। তার চিন্তাভাবনা সব কিছু জুড়েই ছিল পর্ন। এছাড়া শারীরিকভাবে সে আমাকে নির্যাতন করতে শুরু করে। সে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পর্নমুভির মতো করে ধর্ষণ করতো।আমার মাথায় গুলি ভরা পিস্তল তাক করে মেরে ফেলার হুমকি দিত। আমি বুঝতে পারলাম, সে পর্ন এর কল্পনার জগত আর বাস্তব জগত মিশিয়ে ফেলেছে। সেখানে যা দেখতো, আমার সাথে একই আচরণ করার চেষ্টা করতো। [১]
# আমার বয়স একান্ন বছর, আমি এক প্রতিবন্ধী কন্যার মা। পর্ন আমার পরিবারকে ধ্বংস করে ছেড়েছে ।
আমি ষোল বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়েছিলাম এমন একজন মানুষের সাথে, যে জানতই না যে একজন নারীর সাথে কীভাবে চলতে হয়। সে সবসময় হতাশাগ্রস্ত ছিল। তার সমস্যাটা কী ছিল সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিল না । অফিস থেকে ফিরে বিছানার এক পাশে এক ল্যাপটপ নিয়ে শুয়ে থাকত। যখন আমি তার সাথে কথা বলতে যেতাম
তখন সে ল্যাপটপটা দ্রুত নামিয়ে রাখত আর বলত যে সে বাথরুমে যাবে। এরপর যখন আমি চলে যেতাম তখন সে ফিরে আসত আর আগের মতোই কাজ করত। এক রবিবার সকালে আমার এক ছেলে হাঁটার সময় তাকে ল্যাপটপে পর্ন ডাউনলোড করতে দেখতে পেল। আমার ছেলেই আমাকে জানাতে দেরি করলনা।
.
অবশেষে আমি সমস্যাটা জানলাম। এর এক বছরের মধ্যেই আমরা তালাক নিই। ছয় বছর হল আমাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার। আমার চিন্তা আমাদের প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে, যার দেখাশোনার দিকে ওর কোন নজরই নেই।
তালাকের এক বছর পরে আমি আরেকজন মানুষকে পাই যাকে দেখে সত্যিই ভাল মনে হয়, কিন্তু তারও ঠিক একই
সমস্যা আছে। যখন বাসায় আসে তখন থেকে কাজ করতে বাইরে যাওয়ার সময় পর্যন্ত সে তার ঘরে থাকে। সে সপ্তাহে
পাঁচদিন এমন করে । তার কোন বন্ধু নেই; সে হতাশায় ভুগছে; তার আছে পর্নের ১০০টি ডিভিডি আর ২০০টি ম্যাগাজিন ।
এমনকি সে এক নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত । সে আমাদের মাঝে একটা ভাল সম্পর্কের সব সুযোগকে নষ্ট
করেছে। সে কোন নারীর সাথেই সামাজিক হতে পারে না এবং নারীদেরকে শুধু পণ্য হিসেবেই দেখে। প্রকাশ্যেই স্বীকার
করে যে সে কখনো সুখী হবে না কিন্তু তারপরও সে পর্নের প্রতি আসক্তির এতটাই গভীরে গেছে যে সেখান থেকে সে ফিরে
আসতে পারে না। আমার ভয় হল, যদি তার মা-বাবা(যারা খুব অসুস্থ) মারা যায়, তাহলে সে আরো গভীরভাবে
পর্নের প্রতি আসক্ত হবে।
.
আমার বোন একটি তের বছর বয়সী ছেলেকে দত্তক নিয়েছিল।ছয় বছর বয়সে তাকে এবং তার ভাইবোনদের উদ্ধার করে ডিএসএস। এই ছেলেমেয়েগুলোর মা-বাবা পর্ন দেখত। আর পর্ন দেখার সময় তারা বাচ্চাদেরকে শোয়ার ঘরের মেঝেতে থাকতে বাধ্য করত। টেলিভিশনে যেসব যৌনকর্ম দেখানো হত সেগুলোর অনুকরণ করতে এই দুই, পাঁচ ও ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে
তারা বাধ্য করত। বাচ্চাগুলো এমন করতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পেটানো হত। সেখানে থাকত
বাচ্চাদের এক চাচা- সেও পর্ন দেখত। তার বিকৃত লালসার শিকার হয় শিকার হয় পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি।
আমি চাই সরকার পর্নমুভি নিষিদ্ধ ঘোষনা করুক । ইন্টারনেট জুড়ে রয়েছে পর্নমুভির বিশাল ভান্ডার যা প্রতিদিন হাজারো জীবন ধ্বংস করছে , যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে । আমি এখন আরেকটি সম্পর্কে
জড়াতে ভয় পাই। আমি যে আরো আঘাত সহ্য করতে পারব তা আর বিশ্বাস হয় না। [২]
.
#......... আমি এখনও হাইস্কুলে পড়ি, আর আমি গত চার বছর ধরে পর্নের প্রতি আসক্ত। এর শুরুটা ছিল কৌতুহল,
প্রথমে আমি শুধু জানতে চাইছিলাম যে এটা কী, তারপর কিভাবে কিভাবে যেন আমি এটাতে আসক্ত হয়ে পড়লাম । আমার অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে এখন আমি খারাপ চিন্তা ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকাতেও পারি না।
স্কুলের বাইরে বা শপিংমলে হাঁটার সময় বন্ধুদের সাথে থাকলেও আমি শঙ্কিত থাকি।
.
আমি পর্ন দেখতে থাকলাম, আর এক বছর পর আমি মানুষকে অশ্লীল মেসেজ পাঠাতে শুরু করলাম, যা আমাকে যৌনকর্মের
প্রতি আগ্রহী করে তুলল, এর কয়েক মাস পরে আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারাই, কারণ আমি তার প্রতি কিছু ভুল
আচরণ করেছিলাম।আর এখন আমি কোন মেয়ের সাথে দেখা করতেও ভয় পাই।আমার কৌতুহলের সাড়ে চার বছর পরে অবশেষে আমি একজনের কাছ থেকে সাহায্য পেলাম।আমি পর্ন দেখা শুরু করেছিলাম এবং সাহায্য পেয়ে আমি তা বাদ দিয়েছি। আর আমি এ নিয়ে গর্বিত। [৩]
# ...... আমার নাম সেলিনা । আমি ইউ.এস.এ তে থাকি । আমি মনে করি পর্নমুভি পারিবারিক বন্ধন দুর্বল করে ফেলে , আত্মীয়তার সম্পর্কের বাঁধন আলগা করে ফেলে , মাঝে মাঝে ছিড়েই ফেলে । একদিন আমি হুট করেই আবিষ্কার করে বসলাম আমার এক আংকেল (উনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন ) ভয়ংকর রকমের পর্ন আসক্ত । কয়েক বছর আগে উনার ছোট বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন্য আমি কিছুদিন উনার বাসায় ছিলাম । এই সময় একদিন আমি একটা ক্লজেটে প্রচুর পরিমাণ পর্নমুভির সিডি পেয়ে গেলাম । এই সিডি গুলো ছিল এমন কতগুলো ক্যাটাগরির যা ভাবলে আমার গা ঘিন ঘিন করে ওঠে – ঘৃণায় । ইনসেস্ট, রেপ , টীনিস ... ছি ,ছি । কি জঘন্য । নিমিষেই আংকেলের ওপর থেকে আমার সব বিশ্বাস , শ্রদ্ধা উবে গেল কর্পূরের মতো । সেই সাথে ছোটবেলায় তার সাথে কাটানো চমৎকার সময়গুলো, স্মৃতি গুলো আমাকে এক বিরাট প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল । তার সঙ্গে কুস্তি খেলা , তার কোলে বসে টিভি দেখা এগুলো কি শুধু নিখাঁদ স্নেহ, ভালোবাসার প্রকাশ ছিল নাকি অন্য কিছু ......? যেহেতু এর সঠিক উত্তর আমার কাছে নাই তাই আমি তাকে আর বিশ্বাস করতে পারি না । আমার মেয়ে তার আশেপাশে থাকলে আমি অস্বস্তি বোধ করি ।
.
পর্ন আসক্তদের বলতে চাই – তোমরা কি খুশি হবে যদি তোমাদের কোন নিকটাত্মীয় দেখে ফেলে তুমি ইনসেস্ট পর্ন দেখছো ? কেমন লাগবে তোমার তখন ? [৪]
.
(ভাই, একবার ভাবুনতো আপনার আদরের ছেলে-মেয়ে ,ভাগ্নে- ভাগ্নী , ভাতিজা- ভাতিজি , ছোট বোন বা অন্য কোণ নিকটাত্মীয় যদি কোণ দিন কোণ ভাবে আপনার পর্ন আসক্তির কথা জেনে যায় তারা কতটা কষ্ট পাবে । আপনাকে তারা হয়তো হিরোর আসনে বসিয়েছিল, আপনাকে পদে পদে অনুসরণ করতো ,আপনার মতো হতে চাইতো , আপনার কাছে তারা নিরাপত্তা খুঁজে পেত । আপনার অন্ধকার জগতের হদিস পাবার পরেও তাদের কাছে আপনি কি আর সেই আগের আপনি থাকবেন ? তাদের কাছে মুখ দেখাবেন কি করে ? )
চলবে ইনশা আল্লাহ্ …।
রেফারেন্সঃ
[২] https://fightthenewdrug.org/