- Published on
কিছু পিছুটান ১
ওর সঙ্গে আমার এতো দীর্ঘ সময়ের রিলেশন। এখন আমি ব্রেকাপ করে ফেলব? আমাকে ছাড়া কি ও বাঁচবে? অনেক কষ্ট পাবে না? ওর মন ভেঙ্গে যাবে না? আমার এতে পাপ হবে না? মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা এক না?
খুবই কমন একটা প্রশ্ন। এবং বরাবরের মতোই ভুল ধারণা। সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে চলো একটা দৃশ্যের কথা কল্পনা করি। একজন হিরোইনখোর। হিরোইন খাবার পিনিক উঠেছে। কিন্তু মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করছে। স্যার, আমাকে হিরোইন দেন, হিরোইন না খেলে আমি বাচবনা, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি মরে যাচ্ছি।
এখন তুমি বলো হিরোইঞ্চিকে চিকিৎসক যদি হিরোইন না দেয় তাহলে কি তার পাপ হবে? হিরোইঞ্চির মনে কষ্ট দেবার কারণে আল্লাহ্ তাকে পাকড়াও করবেন? হিরোইঞ্চির মন ভাঙ্গা মানে মসজিদ ভাঙ্গার সমান অপরাধ হবে? [1]
ইসলামের একটা বেসিক নিয়ম হচ্ছে সবার আগে আসবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। কোনো একটা কাজ করলে যদি দুনিয়ার সকল মানুষ অসন্তুষ্ট হয় কিন্তু আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হন তাহলে দুনিয়ার সকল মানুষকে অসন্তুষ্ট করে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য সেই কাজটি করতে হবে। এতে দুনিয়ার সকল মানুষ যদি অসন্তুষ্ট হয়, মনে কষ্ট পায়, কান্নাকাটি করে দুঃখের মহসমুদ্রও বানিয়ে ফেলে তাহলেও কোনো পাপ হবে না। কোনো অপরাধ হবে না। তোমাকে আল্লাহ্ এ জন্য পাকড়াও করবেন না।
এটা তুমি কখনোই অস্বীকার করতে পারবে না বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের মাধ্যমে তুমি প্রতিনিয়ত আল্লাহর আইনের অমান্য করে যাচ্ছো। কথা বলা, চ্যাট করা, দেখা সাক্ষাৎ করার মতো ছোটো যিনাহ থেকে শুরু করে হাত ধরা, স্পর্শ করা, এমনকি চূড়ান্ত পর্যায়ের জেনা করে যাচ্ছো। এখন তুমি এই পাপ থেকে বাঁচার জন্য ব্রেকাপ করতে চাচ্ছো। পাপ থেকে বাঁচতে চাচ্ছো আর আল্লাহ্ তোমাকে এ কারণেই শাস্তি দিবেন পাকড়াও করবেন এটা কেমন করে হতে পারে? এমন কথা কোনো লজিকের মধ্যে পড়ে?
ব্রেকাপ করার মাধ্যমে তুমি পাপের জীবন ত্যাগ করছ। ওর চোখের জলকে উপেক্ষা করে ওর চাইতে আল্লাহ্কে প্রাধান্য দিচ্ছো- যা আসলে বান্দার উপর আল্লাহর হক্ক। দুনিয়ার সব কিছুর উপর আল্লাহকে প্রাধান্য দেওয়া , আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে ভালোবাসা। তাহলে কিভাবে তুমি এ কথা বিশ্বাস করো যে তোমার এমন মহান স্যাক্রিফাইসের কারণে তোমার পাপ হবে?
মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান কথা- এটা কোনো হাদীস নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনোই এমন কথা বলেননি। মুসলিমদের মনে কষ্ট দেওয়া গুরুতরো পাপ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সে-ই মুসলমান, যার জিহ্বা ও হাতের অনিষ্টতা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। [2] কিন্তু ওই আগে যা বলা হলো আল্লাহর বিধান পালন করার ফলে কেউ যদি মনে কষ্ট পায় তবে তা পাপ হিসেবে গণ্য হবে না। হারাম রিলেশনের পাপ থেকে বের হয়ে আসলে কোনো অপরাধ হবে না।
ঠিকাছে বুঝলাম ব্রেকাপ করলে কোনো পাপ হচ্ছে না, কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও এটা কি ঠিক হচ্ছে? যে মানুষটা আমাকে এতোটা ভালোবাসে, আমিই তার জীবন মরণ সবকিছু, আমাকে ছাড়া সে কিছুই বোঝে না, তাকে এভাবে ছ্যাকা দেওয়াটা কি বিবেকবান কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব ? বা উচিত? তার জীবনটা কি আমি নষ্ট করে দিচ্ছি না?
হিরোইঞ্চির সেই উদাহরণে ফেরত যাওয়া যাক। বলোতো তোমার কাছে কোন কাজটা মানবিক মনে হচ্ছে? হিরোইঞ্চিকে হিরোইন খেতে দেওয়া নাকি সে যেন হিরোইন না পায় এমন ব্যবস্থা করা? একজন সিরিয়াল কিলারকে খুন করতে দেওয়া তোমার কাছে মানবিক নাকি তাকে খুন করতে না দেওয়া? একজন মানুষকে আত্মহত্যা করতে দেওয়া তোমার কাছে মানবিক নাকি আত্মহত্যা থেকে রক্ষা করে সুখময় জীবনের পথে পরিচালিত করা?
ওর সাথে প্রেম করে পাপ করা জেনা ব্যাভিচার করে ওকে জাহান্নামের জন্য প্রস্তুত করা কি প্রকৃত মানবতা নাকি সাময়িক কিছু কষ্ট দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো প্রকৃত মানবিকতা? প্রেমের নামে তার টাকা নষ্ট করা, সময় অপচয় করা, ক্যারিয়ার নষ্ট করা প্রকৃত মানবিকতা নাকি সাময়িক কিছু কষ্ট দিয়ে টাকা সময় ক্যারিয়ার বাঁচানো প্রকৃত বিবেকবান মানুষের কাজ ?
তার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে ওর জন্য ভালো হবে- এটা তোমার নিছক ধারণা। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা তো ভিন্ন। প্রেমের বিয়ের পরিণতি কেমন, প্রকৃত বাস্তবতা কি তা নিয়ে আমরা এর আগেই আলোচনা করে এসেছি। প্রয়োজনে আরেকবার আলোচনাগুলো পড়ে আসো। তুমি ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ একটা জীবন থেকে তাকে মুক্ত করে দিচ্ছো। এখন সে যে কষ্টটা পাবে তা অল্প কিছুদিনের জন্য। জীবনে ঘুরে দাড়ানোর সময় ও সুযোগ পাবে। কিন্তু সম্পর্ক চালিয়ে গেলে এক বিভীষিকাময়য় জীবন কাটাতে হবে তাকে। এবং তোমাকেও।
.
আল্লাহ্র সঙ্গে মানুষের কি কোনো শত্রুতা আছে? আল্লাহ্ কি মানুষকে কষ্ট দিতে চান? যদি বিয়ে বহির্ভূত এমন প্রেম ভালোবাসার মধ্যে কল্যাণ থাকতো তাহলে আল্লাহ্ কি তা হারাম করতেন? দুনিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করলেও কৃতজ্ঞতাবোধে মানুষ কতো কি বিনিময় দেয়। তুমি আল্লাহর জন্য স্যাক্রিফাইস করছো, ব্রেকাপ করছো সকল রাজার রাজা এই সাত আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ্ তোমাদের জীবনে বারাকাহ ঢেলে দিবেন। কল্যাণে কল্যাণে ভরিয়ে তুলবেন।
তার কান্নাকাটি মন খারাপ হবে ভেবে তুমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে তাকে সাময়িক কিছুটা সুখ হয়ত দিতে পারবে তুমি। তবে দিনশেষে যা করবে তা হলো তাকে এবং তোমাকে ধ্বংসের আয়োজন । তুমি যদি সত্যিকার অর্থেই তার ভালো চাও, কল্যাণ চাও তাহলে বৃহত্তর কল্যানের স্বার্থেই কিছুটা কঠোর হও।
সে অভিশাপ দিচ্ছে দিতে দাও, ভয় পেও না। এই অভিশাপে কিছুই হবে না। সে কান্নাকাটি করছে , তাকে কান্নাকাটি করতে দাও। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রেখেছে অগোছালো জীবন যাপন করছে, তাকে করতে দাও। প্রথম প্রথম কষ্ট হবে। কিছুদিন যাবার পর মোহান্ধ মন মুক্তি পাবে। সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। সে তার ভুল বুঝতে পারবে।
চলবে ইনশা আল্লাহ …
[১] মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা একই কথা – এটা কোনো হাদীস নয়।
[২] সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০