- Published on
‘অনিবার্য যত ক্ষয়’ (শেষ পর্ব)
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম
আমেরিকান আর্মির__ মহিলা সদস্যরা শত্রুদের নিয়ে ততোটা বেশী শংকিত থাকে না , যতটা বেশী শঙ্কিত থাকে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের হাতে যৌন নিপীড়িত হবার ভয়ে ......”__।
একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই এই কথা গুলো বললেন ডোরা হারনান্দেজ যিনি প্রায় দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করেছেন আমেরিকান নেভী এবং আর্মি ন্যাশনাল গার্ড এ । ডোরা হারনান্দেজ সহ আরো কয়েকজন প্রবীণ ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা হচ্ছিল যারা আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন অনেক বছর , ইরাক এবং আফগানিস্থান যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন । এই ফ্রন্টগুলোতে কোনমতে তারা সারভাইভ করতে পেরেছেন কিন্তু পুরো কর্মজীবন জুড়ে তাদেরকে আরোও একটি যুদ্ধ করতে হয়েছে নীরবে-এবং সেই যুদ্ধে তারা প্রতিনিয়তই পরাজিত হয়েছেন । তাদের সেই নীরব যুদ্ধ ধর্ষণের বিরুদ্ধে ।
পেন্টাগনের নিজেস্ব রিসার্চ থেকেই বের হয়ে এসেছে যে আমেরিকান সামরিক বাহিণীর প্রতি চার জন মহিলা সদস্যের একজন তাদের ক্যারিয়ার জুড়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ।
(পড়ুনঃ মুখোশ উন্মোচনঃ পর্ব-১: https://bit.ly/2OhCeO0 ) আমেরিকার সামরীক বাহিনীতে চলমান যৌন নির্যাতনের কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে মিলিটারি ক্যাম্পগুলোতে পরনোগ্রাফিক ম্যাগাজিনের সহজলভ্যতা । যৌন নির্যাতনের হার কমানোর জন্য মিলিটারি ক্যাম্পগুলোতে এইসব ম্যাগাজিন ক্রয় বিক্রয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে । জয়েন্ট চীফ অফ স্টাফ বলেছেন ,“আমাদের বাহিনীতে বিরাজমান এই যৌন নির্যাতনের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতেই হবে । আর এজন্যেই সামরিক ঘাঁটি গুলোতে পরনোগাফিক ম্যাগাজিন কেনাবেচা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে”।
[তবে এই পদক্ষেপ অবস্থার কতটা উন্নতি ঘটাবে তাতে অনেকেই সন্দিহান। কারণ ক্যাম্পগুলো থেকে খুব সহজেই পর্ণসাইটে প্রবেশ করা যায়]
অনেকেই একটা ভুল ধারণা নিয়ে থাকেন আমি তো শুধু পর্ণমুভি দেখছি ,ওইগুলো করছি না । কারো কোন ক্ষতি করছিনা । পর্ণ দেখা দোষের তো কিছু না । পর্ণ দেখার সঙ্গে ধর্ষণ বা শিশু নির্যাতনের কোন সম্পর্ক নেই ; এইগুলো পর্ণ সহজলভ্য হবার আগেও ছিল এখনো আছে । এই ভুল ধারণাগুলো ভেঙ্গে দেবার জন্য এই লিখাটাই (সিরিজের প্রথম দুটি লিখা পড়ুন এখানে- **http://tinyurl.com/heblrdw, http://tinyurl.com/h2uwum2 **) যথেষ্ট ইনশা আল্লাহ্ ।
একেবারেই একাডেমিক ধাঁচের লিখা এটি । রসকষহীন । ধৈর্য ধরে পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইলো পাঠকদের নিকট ।
শিশু যৌন নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি -ডঃ ডায়ানা ই.এইচ.রাসেল
বারবার চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখা ও তা দেখে মাস্টারবেট করার ফলে ব্যাক্তির বাস্তবে তা প্রতিফলিত করার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠতে থাকে।এক মানসিক রোগী ছিল যে আসলে ছিল স্যাডিস্টিক সিরিয়াল রেইপিস্ট।৯ বছর বয়স থেকেই মেয়েদের টর্চার করার ফ্যান্টাসি তার মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে।১২ বছর বয়সে সেসব চিন্তাকে মাথায় এনে শুরু হয় মাস্টারবেশন।তা চলতে থাকে প্রতি মাসে ২০ বার করে।২২ বছর বয়সে সে তার প্রথম স্ত্রী ও অন্যান্য মহিলাদের ধর্ষণ করে।অনেকের কাছে পর্ণ অল্প সময়ের জন্য আনন্দের খোরাক জোগালেও কেউ কেউ এর হাত ধরেই জন্ম দেয় নির্মম বাস্তবতার যা নিষ্পাপ কিছু জীবনকে বিষাদময় করে তুলে অকল্পনীয়ভাবে।
*ভার্নন গিবার্থের সঙ্গে সাক্ষাৎকার (__retired Lieutenant Commander with the NYPD and author of "Sex Related Homicide and Death Investigation: Practical and Clinical Perspectives") *যখন এসব ক্রিমিনালদের ঘটনা শুনি মানে তাদের ভিতরকার দুনিয়াটা স্পষ্ট চোখে দেখি, তখন এ বিষয়ে আর সন্দেহ থাকে না যে প্রকৃত নীরব ঘাতক কোনটি।এমন কিছু ফ্যান্টাসি আছে যা কোনদিনই বৈধ বা সভ্য না।কিন্তু এ ফ্যান্টাসিগুলোই কাউকে কাউকে আচ্ছামত পেয়ে বসে।এগুলো নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী।আর পরের ধাপে ব্যাক্তি শরণাপন্ন হয় পর্ণের।এতে করে ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট কোন ক্যাটাগরির উপর সে দিনের পর দিন দুর্বল হতে থাকে।ব্যাক্তি ভেদে তা ভিন্ন ভিন্ন।আর এক সময় সে লালসার জোয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহদের ওপর আর বাস্তবায়ন ঘটায় তার মনের ভেতর পুষে রাখা ফ্যান্টাসির।
ক্যাথারসিস থিওরি বা ক্যাথারসিস ইফেক্ট
এই টার্মটি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা।সহজ বাংলায় বলতে গেলে বিশোধন তত্ত্ব বা বিশোধন প্রভাব।মানে এই থিওরি মতে, পর্ণকে ব্যবহার করে আমরা আমাদের বর্বর ফ্যান্টাসিগুলোকে লাগাম দিতে পারি।অর্থাৎ আমাদের মনের ক্ষুধাকে সাময়িকভাবে মিটিয়ে আমরা ধর্ষণ বা যে কোন প্রকার সেক্সুয়াল ভায়লেন্স ঠেকাতে পারি।কারণ ধর্ষণ করার আকাঙ্ক্ষা তো পর্ণই মিটিয়ে দিচ্ছে।আবার কষ্ট করে বাস্তব জীবনে কারো মানহানি করার কি দরকার?
তাহলে এবার দেখা যাক যে এই থিওরি কতোখানি যুক্তিযুক্ত।একটা এক্সপেরিমেন্টের কথা উল্লেখ করবো যা পরিচালনা করেন হাওয়ার্ড, রিফলার ও লিটজিন।২৩ জন পুরুষকে নিয়ে এই এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের একটি পর্নোগ্রাফিক মুভি দেখানো হয় এবং তাদের উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করা হয়।এরপর পনেরো দিন প্রতিদিন নব্বই মিনিটের জন্য অ্যাডাল্ট পর্ণ দেখানো হয়।ফলে দেখা যায়, সবার মধ্যে শুরুতে যে উত্তেজনা কাজ করছিলো তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
কাঠামোগত দিক দিয়ে দুর্বল এই এক্সপেরিমেন্টে কিছুই প্রমাণ হয় না।প্রথমত, কি ধরণের পর্ণ সাবজেক্টরা দেখতে চায় তার ক্ষেত্রে কোন স্বাধীনতা ছিল না।বাধ্য হয়ে তাদের সবাইকে একই পর্ণ দেখতে হয়েছে।অথচ একেক জনের চাহিদা একেক রকম।তাই অল্পতেই তাদের উৎসাহ ফুরিয়ে গেছে।দ্বিতীয়ত, লম্বা সময় ধরে এবং একটানা চলে আসা যে কোন কাজই মানুষকে একঘেয়েমি করে তুলে।তাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।
এর বিপরীতে দেখবো জিলম্যান ও ব্রায়ান্ট এর এক্সপেরিমেন্ট।দুইটা গ্রুপে সাজানো হয় স্যাম্পলদের।প্রথমটা তৈরি করা হয় সমান সংখ্যক তরুণ ও তরুণী নিয়ে।এই আন্ডারগ্র্যাজুয়েটদের ডাকা হয় ২টি মিডওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে।পরবর্তী গ্রুপটাতেও থাকে সমান সংখ্যক তরুণ তরুণী।তবে তারা স্টুডেন্ট নয়।
এবার শুরু হয় এক্সপেরিমেন্ট।তাদেরকে অনেকগুলো অপশন দেওয়া হয় মানে কে কী ধাঁচের পর্ণ দেখতে চায়।একটা নির্দিষ্ট সময় পরে দেখা যায়, তারা যখন একটা ক্যাটাগরি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে তখন ঝাঁপিয়ে পড়ছে অন্য আরেকটায় যা আগেরটার তুলনায় আরো বর্বর।মানে যেগুলো খুব অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
মাস্টারবেশন এর ফ্যাক্টরটাও এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা দর্শকদের কামবাসনাকে আরো জোরদার করে। তবে অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই মাস্টারবেশনের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে তার কল্পনার মানুষটির সাথে বাস্তবে মিলিত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।কিন্তু যখন দেখে বৈধভাবে তা হয়তো কোনদিন সম্ভব না, তখনই তাদের কেউ কেউ ভিতরের রাক্ষসটাকে টেনে বের করে আনে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেটে এর বহু উদাহরণ দাঁড় করানো যায়।
তাই বলা চলে, ক্যাথারসিস থিওরির মূলত কোন ভিত্তি নাই।
অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রতি এক গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে পর্ণাসক্ত বাচ্চাদের বাড়তি উগ্রতার কথা।প্রায় সবার কাছেই ইন্টারনেট সহজলভ্য ও এদের ৯০% স্বীকার করেছে যে অনলাইনে পর্ণ দেখার অভ্যাস আছে।এক চতুর্থাংশ জানিয়েছে, বড় ভাই বা বোনের সহায়তায় বা কোন বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে তারা পর্ণের জগতে পা ফেলেছে, অনেক সময় অনিচ্ছা সত্তেও।আরেক চতুর্থাংশ বলেছে, অনলাইনে যাওয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল পর্ণ দেখা।যখন আলাদাভাবে ডেকে অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তখন তাদের প্রায় প্রত্যেকে তাদের সন্তানের অনলাইন ব্রাউসিং নিয়ে সন্দেহপ্রবণ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
আচ্ছা! এটা কি হতে পারে যে পর্ণের মাধ্যমে ধর্ষণ রোধ সম্ভব?-রবার্ট পিটারস্
পর্নোগ্রাফির পক্ষে যারা, তারা লম্বা সময় ধরেই বলে আসছে যে যেসব ব্যাক্তি সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স ঘটানোর ইচ্ছা রাখে, পর্ণ তাদের সেই খায়েশকে লাগাম দেয় ও তাদের শান্ত করে।অনেকের ক্ষেত্রে তা সত্য হতে পারে কিন্তু একটু আগে যে পরিসংখ্যান দেখানো হল তাতে কি মনে হয় এতে লোকসানের চেয়ে লাভ বেশি হয়?মোটেই না।আর যদি তাই হতো তাহলে দিনের পর দিন এই অপরাধীদের সংখ্যা বাড়ছে কেনো? কারণ আজকের যুগে আমরা এটাকে বেশ সহজলভ্য করে তুলেছি তা যে ক্যাটাগরির কথাই বলুন না কেনো। সম্প্রতি এক গবেষণায় এসেছে, যারা চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখে অভ্যস্ত তাদের অর্ধেকের বেশি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বাচ্চা মেয়েদের উত্যক্ত করার অভিযোগে।সামাজিক গবেষণাগুলো থেকেও প্রতীয়মান হয় পর্ণের সাথে যৌন অপরাধের জোরদার সম্পর্কের কথা।
#অনিবার্যযতক্ষয়
(শেষ)
(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)
পড়ুন-
অনিবার্য যত ক্ষয় (প্রথম পর্ব) -https://bit.ly/2N7SbtA
‘অনিবার্য যত ক্ষয়’ (দ্বিতীয় পর্ব) - https://bit.ly/2x5OdHU
মুখোশ উন্মোচনঃ পর্ব- ৩ https://bit.ly/2p6dopk একেই বলে সভ্যতা (প্রথম পর্ব) !!!:** https://tinyurl.com/yaky6j8b**
রেফারেন্স-