Published on

“****” ম্যাম গার্ড পড়ছিলঃ বুঝতে পারছিলাম না, প্যান্ট সামলাবো নাকি কলম !!!

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

বছর পাঁচেক আগের কথা । মফস্বল শহর থেকে ঢাকার এক দেশ বিখ্যাত কলেজে এইচ এস এসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হলাম। বাবা মা ছেড়ে একা একা ঢাকা শহরে এসেছি ,মন ভার হয়ে থাকতো সবসময় । কিন্তু কলেজের স্যার আর ম্যামদের ক্লাসগুলো উপভোগ করতাম খুবই।

.

প্রত্যেকজন স্যার এবং ম্যাম ছিলেন প্রচন্ড পেশাদারিত্বের অধিকারী । সবার চোখে মুখে ছিল তাঁদের ছাত্রদের কিছু শেখানোর প্রবল আগ্রহ । ম্যাথ ডিপার্টমেন্ট এর এক শিক্ষক তো ছিলেন প্রবাদতুল্য মানুষ । শুধু একাডেমিক পড়াশোনাই নয়, নীতি,নৈতিকতা,আদব,কায়দা শেখানোরও প্রচন্ড চেষ্টা করতেন আমাদের স্যার এবং ম্যামরা । কলেজের অধ্যক্ষের মুখে তো লেগেই থাকতো,‘আমি ভালো ছাত্র চাই না , ভালো মানুষ চাই’।

.

বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো অগণিত ভালো ছাত্র কলেজ থেকে আগেও বের হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে ।কিন্তু কয়জন ভালো মানুষ বের হচ্ছে তা গবেষণার বিষয় ।

.

টিচারদের এমন আন্তরিকতা থাকার পরেও , তাঁদের সঙ্গে বিশেষ করে ম্যাডামদের সঙ্গে আমারই কয়েকজন সহপাঠী এবং সিনিয়র ভাইদের বেয়াদবি দেখে টাসকি খেয়ে গেছলাম ।

ম্যডামরা যখন রোল কল করতেন (বিশেষ করে ম্যাডাম অল্প বয়স্কা এবং সুন্দরী হলে ) তখন পোলাপান একটু ন্যাকামো করে, নাকি স্বরে ইয়েস ম্যাম বলে রেসপন্স করত ।

বায়োলজী ক্লাসগুলোতে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে ম্যডামদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা হত ।পোলাপানের আড্ডার জটলা থেকে টুকরো টুকরো কথা কানে আসতো ......... অমুক ম্যডামকে শাড়ি পড়লে যা লাগে না , ...... তমুক ম্যডাম একটা *** , অমুক ম্যডামের সেই ফিগার ......

আরো অনেক কথা যেগুলো শালীনতার মাত্রা অতিক্রম করে যাবে । এখানে না বলাটাই শ্রেয় ।

.

বেয়াদবি এই পর্যন্ত থাকলেও সহ্য করা সম্ভব ছিল । কিন্তু একদিন এক ম্যডামের ক্লাসে পেছনের দিকের বেশ কয়েকটা বেঞ্চের পোলাপান একসঙ্গে ফোনের লাউড স্পীকারে পর্নমুভি ছেড়ে দিয়েছিল ।

ম্যাডাম সেদিন কাঁদতে কাঁদতে ক্লাস থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ।

(এরকম কাহিনী অন্য একটা ক্লাসে অন্য একজন ম্যডামের সঙ্গেও করা হয়েছিল )

কলেজ লাইফের এই ঘটনা গুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করতাম । ভুলেও গিয়েছিলাম এইগুলো । কিন্তু কিছুদিন আগে আমাদের কলেজের ফেসবুক ফ্যান পেইজে (যেটা চালায় কলেজের প্রাক্তন এবং বর্তমান স্টুডেন্টরা) একটা ট্রোল দেখে (ছবিতে দেখুন) আবারো টাসকি খেয়ে গেলাম । এতদিন যা কিছু ক্লাস রুমে করা হতো , যা কিছু মনের মধ্যেই চাপা পড়ে থাকতো বা বন্ধুদের আড্ডার সার্কেল থেকে বের হতে পারত না , তা ফেসবুকের খোলা বাজারে ঢাকঢোল পিটিয়ে জানান দিয়ে দেওয়া হল । বেয়াদবিটাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হল আরকি ।

...... **** “****” ম্যাম গার্ড পড়ছিলঃ বুঝতে পারছিলাম না, প্যান্ট সামলাবো নাকি কলম !!!

কলেজের রানিং স্টূডেন্টদের বানানো এই ট্রোলে আবার দেখলাম বেশ কয়েকজন রসিক সিনিয়র ভাইয়া কমেন্ট করে ব্যাপক মজা নিয়েছেন (ছবিতে দেখুন)

এই ম্যডামগুলোই স্টুডেন্টদের কিছু শেখাবেন বলে , রাত জেগে ক্লাসের প্রিপারেশান নেন, চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট ঠাই দাঁড়িয়ে ক্লাস নেন , বক বক করেন , ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে লিখতে চকের গুঁড়ো খান , ফ্যানের নিচে থেকেও দর দর করে ঘামেন । যারা এতটা আন্তরিকতা , এতটা স্নেহ , এতটা মমতা দিয়ে ক্লাসে পড়ানোর চেষ্টা করেন , তাঁদের সঙ্গেই এমন ব্যবহার করা হল ? এটা জাস্ট তাদের মুখের কথা , কিন্তু এটাই কি কুৎসিত একটা ইঙ্গিত দেয় । তাহলে চিন্তা করুন তাদের মনের ভেতরে কি লুকিয়ে আছে , ম্যামদের নিয়ে তাদের চিন্তা ভাবনা কতদূর গড়িয়েছে!

.

কিছু সিনিয়র ভাইয়দের দেখলাম ওইখানে কমেন্ট করে মজা নিয়েছেন এবং লাইক দিয়েছেন , বুঝলাম না কী করে তারা এমনটা করতে পারলেন। ছোট ভাইগুলার নাহয় এখনো ম্যাচিউরিটি আসে নি ,তারা নাহয় একটা ভুল করে ফেলেছে , সিনিয়র হিসেবে তাদের উচিত ছিল সেই ভুল শুধরিয়ে দেওয়া । কিন্তু তারা সেই ভুল শুধরিয়ে না দিয়ে কমেন্ট করে তাদেরকে আরো উৎসাহ দিলেন !এরাই না দেশের সবচেয়ে মেধাবী সন্তান ? দেশ ও জাতির গর্ব ? দেশ না একদিন এরাই চালাবেন ? এদের টিচারও যদি এদের সেক্স ফ্যান্টাসির শিকার হওয়া থেকে রেহাই না পায় , তাহলে তাদের সহপাঠী, অফিসের কলিগ, অধীনস্থ নারী কর্মচারীরা কী করে রেহাই পাবে ?

এরকম একটা প্রজন্ম নিয়ে আমরা কী স্বপ্ন দেখব, বলুন ? এদের হাতে যখন দেশ চালানোর ভার পড়বে তখন কী অবস্থা হবে এই দেশের ?

.

বাংলাদেশে আজ এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছ যেখানে স্টুডেন্টদের হাতে মহিলা শিক্ষকদের টিজিং এর শিকার হতে হয় । ঘটনা গুলো চাপা পড়ে থাকে । লোক লজ্জা আর মান সম্মান খোয়ানোর ভয়ে এইগুলো কেউ প্রকাশ করেন না । আর এইগুলো বলে বেড়ানোর কথাও না । একবার এক আড্ডায় আমার ভার্সিটির পোলাপানের অন্য একটা ভার্সিটির মহিলা ফ্যাকাল্টিদের ফিগার এনালাইসিস শোনার দুর্ভাগ্য হয়েছিল । বেশিক্ষন সেখানে বসে থাকতে পারিনি ।

.

(এখানে আমার একটা ব্যক্তিগত অব্জারভেশান বলে রাখি – এইটা জাস্ট আমার পার্সোনাল একটা মতামত - স্টুডেন্টদের হাতে ম্যামদের নাকাল হবার পেছনে ম্যামরা নিজেরাও অনেকটা দায়ী । যেই লেভেলের সাজগোজ আর পোশাক আশাক পরে কিছু কিছু ম্যাম ক্লাস রুমে যান , অমুকের গায়ে হলুদ, তমুকের বৌভাতে উনারা যেরকম মাঞ্জা মেরে ফটোগ্রাফারদের হাতে শরীর ছেড়ে দেন এবং পরে সেইছবি গুলো ফেসবুকে আপলোড করেন, তাতে একজন স্টুডেন্টের পক্ষে তাদেরকে নিয়ে খুব ভালো কিছু ভাবা সম্ভব নয় )

.

আসলে সারারাত ধরে পর্নমুভিতে নারীদের বস্ত্র হরণ দেখলে , আইটেম সং দিয়ে ফোনের মেমরি লোড করে রাখলে নারীদেরকে নিয়ে খুব একটা ভাল চিন্তা করা সম্ভব হয়না । নারীরাও যে মানুষ , তাদেরও হৃদয় আছে, তাদেরও মন আছে , একজোড়া চোখ আছে সেই চোখের ভেতরে একটা আকাশ আছে এগুলো অনুধাবন করা যায়না । তাদেরকে শুধু একটা মাংসপিণ্ড মনে হয় যা নিয়ে উদ্দাম ফুর্তি করা যায়, রাত কাটানো যায়, কিন্তু ভালবাসা যায় না, তার চোখের তারায় হারিয়ে যাওয়া যায় না , তাদেরকে সম্মান করা যায়না ।

.

ম্যামদের নিয়ে যারা এরকম চিন্তা ভাবনা করতে পারে তারা তাদের “জাস্ট ফ্রেন্ড” কিংবা ছোট বোন বড় বোন হিসেবে দেখা আশেপাশের মেয়েদের নিয়ে কোন লেভেলে চিন্তা করতে পারে তা মাথায় একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যায় । মুখের সামনে আপু আপু বা দোস্ত দোস্ত করে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও , ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকলেও এইসব ছেলেরা তাদের সেই আপুদের বা ইয়ার দোস্তদের অনুপস্থিতিতে তাদের ফিগার নিয়ে যে পোস্টমর্টেম করে তার রিপোর্ট জানলে কোন ভদ্র মেয়ের পক্ষে তাদের সঙ্গে মেশা দূরে থাক কথা বলাও সম্ভব নয় । ফেসবুকে আপুদের আপলোড করা পিক দিয়ে যে তার কত “জাস্ট ফ্রেন্ড” ছেলে বন্ধু যৌবন জ্বালা নিভায় তা যদি এইসব আপুরা জানতো !

তবে আজকাল দিন বদলাইয়া গেছে । আজকালকার মেয়েরা নাকি তাদেরকে কেউ হট চিক , সেক্সি বললে খুশিই হয় । কোথায় চলেছে আমাদের এই সমাজটা, কোথায় যাচ্ছি আমরা ? আবহমান বাংলার সেই লজ্জাবতী নারীরা কোথায় গেল আজ?

.

জীম তানভীর ভাইয়ের একটা লিখার কিছু অংশ এখানে তুলে দিতে ইচ্ছে করছে,

............ছেলেরা যখন মেয়েদেরকে “slave” হিসেবে দেখতে শেখে তখন মেয়েরা শেখে শিলা হতে হবে,তাতে যৌবনজ্বালায় বিকারগ্রস্ত ছেলেদের চড়কির মত ঘোড়ানো যাবে। তারা শেখে পার্লারে গিয়ে কি সব পেডিকিউর মেনিকিউর না করলে নাকি স্ট্যাটাস থাকে না।

তারা শেখে বড় মডেল কিংবা অভিনেত্রী হওয়ার জন্য নিজের চরিত্রকে ফটোগ্রাফার কিংবা প্রডিউসারের কাছে নিজের চরিত্র বিকিয়ে দেয়া দোষের কিছু না।

তারা সানন্দা টাইপের ম্যাগাজিনগুলো বিমুগ্ধ নয়নে পড়তে থাকে আর বুঝে ফেলে শরীর দেখিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার মূলমন্ত্র।

.

তারা হিন্দী সিরিয়াল দেখে আবিষ্কার করে নিজেকে সাজিয়ে রাখা হল স্মার্ট মেয়েদের কাজ !এই যদি আমরা শিখি,আমরা কিভাবে আশা করতে পারি একটা ছেলে একটা মেয়েকে সম্মান করবে ?

সম্মান অর্জন করা যায় শরীর দেখিয়ে? সৌন্দর্য দিয়ে ? সেক্সি মেয়ে দেখলে আমাদের চোখ বিনয়ে নুয়ে পড়ে নাকি কি যেন খুজে বেড়ায় ? একটা মেয়ে কি গায়ের উপর থেকে ওড়না ফেলে দিয়ে আশা করে তার দাম বাড়বে ?

আজকে যে ছেলেটা জন্ম নিয়েছে সে শরীর নাচিয়ে কুদিয়ে বেড়ানো মিলার মিউজিক ভিডিও দেখে কি ভাববে সেটা কি আমরা চিন্তা করেছি ???