- Published on
হে আমার মেয়ে (শেষ কিস্তি) !!!
উপদেশ নং-১৬
হে আমার মেয়ে! তুমি এ বিষয়টি ভুলে যেও না যে, আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে নারী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার সহপাঠীকে পুরুষ বানিয়েছেন। তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এমন উপাদান যুক্ত করা হয়েছে, যার কারণে তোমরা একে অপরের প্রতি ঝুকে পড় । সুতরাং তোমাদের কেউ এমনকি পৃথিবীর সকল মানুষ মিলে চেষ্টা করলেও আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে না। তারা কখনই নারীপুরুষের ব্যবধান উঠিয়ে দিয়ে উভয়কে সমান করতে পারবে না এবং নারী-পুরুষের পরম্পরের দিকে আকর্ষণকে ঠেকাতে পারবে না।
যারা সভ্যতার নামে নারী-পুরুষের মধ্যকার ব্যবধান উঠিয়ে দিতে চায় এবং উভয় শ্রেণীর জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে কর্মক্ষেত্রে মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আহবান জানায় তারা মিথ্যুক । কারণ, এর মাধ্যমে তারা নিজেদের মনের চাহিদা মেটাতে চায় এবং অন্যের স্ত্রী-কন্যাকে পাশে বসিয়ে নারীদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চায় । সেই সাথে আরও কিছু করার সুযোগ পেলে তাও করতে চায়। কিন্তু এ কথাটি এখনও তারা খোলাসা করে বলার সাহস পাচ্ছে না। সুতরাং তারা নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা, সভ্যতা ও উন্নয়নের যে সুর তুলছে তা নিছক সস্তা বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। এ সমস্ত কথার পিছনে তাহজুৰ-তামাদ্দুন, সভ্যতাউন্নতি অর্জন আদৌ তাদের উদ্দেশ্য নয়। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মুসলিম সমাজকে তারা বোকা বানাচ্ছে ।
তারা যে মিথুক তার আরেকটি কারণ হল, যেই ইউরোপ-আমেরিকাকে তারা নিজেদের আদর্শ মনে করে এবং যাদেরকে তারা সভ্যতা, সংস্কৃতি ও উন্নতির পথ প্রদর্শক মনে করে মূলত তারা প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে নি। তারা যেটিকে সভ্যতা ও সংস্কৃতি মনে করে মূলত সেটি সভ্যতা ও সংস্কৃতি নয় । তাদের ভাষায় সত্য তা নয়, যা মিথ্যার বিরদ্ধাচারণ করে। বরং সত্য, সভ্যতা হচ্ছে তা যা প্যারিস, লন্ডন, নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। তাদের ধারণায় নাচ, গান, বেহায়াপনা, উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ হওয়া, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষায় অংশ নেওয়া, নারীদের খেলার মাঠে নাম এবং সমুদ্র সৈকতে গিয়ে বস্ত্রহীন হয়ে গোসল করাই সভ্যতা ও সংস্কৃতির মানদণ্ড।
আর প্রাচ্যের দেশ তথা মুসলিমদের মসজিদ, মাদরাসা, মদীনা, দামেস্ক এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ইসলামী প্রতিষ্ঠানে যে উন্নত চরিত্র, সুশিক্ষা, নারী-পুরুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন পবিত্রতার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের ধারণায় তা মুসলিমদের পশ্চাদমুখী হওয়ার এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ঘুরে আসা বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সেখানে বসবাসকারী অনেক পরিবার নারীপুরুষের খোলামেলা চলাফেরাতে সন্তুষ্ট নয় এবং এটি তাদেরকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজ তারা বিকল্পের সন্ধান করছে।
ইউরোপ-আমেরিকায় এমন অসংখ্য পিতা-মাতা আছে, যারা তাদের যুবতী মেয়েদেরকে যুবক পুরুষদের সাথে চলাফেরা করতে ও মিশতে দেয় না। তারা তাদের সন্তানদেরকে সিনেমায় যেতে দেয় না। শুধু তাই নয়, তারা তাদের ঘরে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনামুক্ত চ্যানেল ব্যতীত অন্য কিছু ঢুকায় না। অথচ পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজ অধিকাংশ মুসলিম দেশের মুসলিমদের ঘর এগুলো থেকে মুক্ত নয়।
এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীর কথা হচ্ছে, সহশিক্ষা প্রবল যৌন আকাঙ্খা কে দমন করে। চরিত্র সংশোধন করে এবং দেহ থেকে বাড়তি যৌন চাহিদাকে দূর করে দেয়। আমি তাদের জবাবে বলতে চাই যে, আপনারা কি রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখেন না? যেই রাশিয়া কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না, কোন পাত্রীর উপদেশে কর্ণপাত করে না, তারা কি সহশিক্ষা ও নারী পুরুষের সহ অবস্থানের খারাপ পরিণামের শিকার হয়ে তা থেকে ফেরত আসার ঘোষণা দেয় নি?
আমেরিকা প্রসঙ্গে আসি। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে যে, অবিবাহিত ছাত্রীদের মধ্যে গর্ভবতীর সংখ্যা সেখানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । এটি তাদের অন্যতম একটি বিরাট সমস্যা । আপনারা কি মুসলিম দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমন সমস্যা দেখতে চান?
বরতমান সময়ে আমেরিকা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যৌন শিক্ষা নামক একটি বিষয় সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে তা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাঠদান করছে। আমি মনে করি এর মাধ্যমে তারা আগুনের মধ্যে পেট্রোল ঢালছে। অল্প বয়স্ক নির্দোষ বালিকার মধ্যে লুকায়িত যৌন স্পৃহাকেই তারা জাগিয়ে তুলছে। স্কুল পর্যায়ের ছাত্রীদেরকে তারা কনডম ব্যাবহারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং একজন পুরুষ একজন মহিলার শাথে কি করে তারা উথতি বয়সের বালিকাদের তাও শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে বসবাসকারী এক ধরণের মানুষ নামধারী শয়তান আমাদেরকেও তাদের কর্মকাণ্ড অনুসরণ করার সবক দিচ্ছে।
উপদেশ নং-১৭
হে আমার মেয়ে! আমি যুবকদের সম্বোধন করছি না। এও আশা করছি না যে, যুবকরা আমার কথা অবনত মস্তকে মেনে নিবে। আমি জানি তারা আমার কথা প্রত্যাখ্যান করবে এবং আমাকে বোকা বলবে । কারণ, তারা মনে করবে যে, আমি তাদেরকে যৌবনের স্বাদ উপভোগ করতে বাঁধা দিচ্ছি এবং তাদেরকে ভোগের সমুদ্রে সাঁতার কাটতে মানা করছি ।
তাই আমি তোমাদের সম্বোধন করছি হে আমার মেয়েরা। হে আমার ভালো, সতী মুসলিম মেয়েরা। কেননা, তোমরাই হায়েনার ছোবলে পড়। তোমাদের ইজ্জত সম্মান মাটিতে মিশে যায় । সুতরাং সতর্ক থাক । ইবলিসী ফাঁদে পড়ে নিজের জীবন ধবংস কর না । তোমরা তাদের কথায় কৰ্ণপাত করো না। কারণ, এ সমস্ত শয়তানদের অধিকাংশের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার নেই । তারা কেবল তোমাদেরকে উপভোগ করতে চায় ।
কিন্তু আমি! আমি কয়েকজন মেয়ের গর্বিত পিতা । তাই মুসলিম মেয়েদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমার নিজের মেয়েকে রক্ষা করার মত । আমার নিজের মেয়ের জন্য যে কল্যাণ চাই তোমাদের জন্যও সেই কল্যাণ চাই ।
উপদেশ নং-১৮
হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার বোনদেরকে বল, আমি তোমাদেরকে যে উপদেশ দিচ্ছি, তার বিনিময়ে আমি কিছুই চাই না। শুধু তোমাদেরকে অধ:পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে চাই, তোমাদের কল্যাণ চাই, পবিত্র জীবনের সন্ধান দিতে চাই ।
উপদেশ নং-১৯
হে আমার মেয়ে এদের কবলে পড়ে কোন নারী যদি তার অমূল্য সম্পদ হারায়, তার মর্যাদা নষ্ট হয় এবং সম্ভ্রম ও সতীত্ব চলে যায়, তাহলে তার হারানো সম্পদ দুনিয়ার কেউ পুনরায় ফেরত দিতে পারবে না। অথচ যত দিন সেই নারীর শরীরে যৌবন অবশিষ্ট ছিল ততদিন পাপীষ্টরা তার সৌন্দর্যের চারপাশে ঘুরঘুর করেছে এবং তার প্রশংসা করেছে। যৌবন চলে যাওয়ার সাথে সাথেই কুকুর যেমন মৃত জওর মাংশ ভক্ষণ করে হভিডগুলো ফেলে রেখে চলে যায়, ঠিক তেমনি তারা তাকে রেখে দূরে চলে যায়।
উপদেশ নং-২০
হে আমার মেয়ে। এই ছিল তোমার প্রতি আমার সংক্ষিত্ত উপদেশ । তোমাকে যা বললাম, তাই সত্য। এটি ছাড়া কেউ যদি তোমাকে অন্য কথা বলে, তুমি তা বিশ্বাস করো না । জেনে রেখো! তোমার হাতেই সংশোধনের চাবিকাঠি। আমাদের হাতে নয় । তুমি চাইলে নিজেকে, তোমার বোনদেরকে এবং সমগ্র জাতিকে সংশোধন করতে পার । তোমার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক ।
– তোমার পিতা
আল আত তানতাবী
সমাপ্ত
লেখকঃ শায়খ আলী আত তানতাবী ।
প্রথম দুটি পর্ব পড়ুন এখানে –
প্রথম পর্ব- http://bit.ly/2dXoauu
দ্বিতীয় পর্ব - http://bit.ly/2dt4X0T
#হেআমারমেয়ে