- Published on
যদি মন কাঁদে, কাদুক তার স্মৃতি বুকে নিয়ে আমি এ জীবন পার করে দেব (শেষ পর্ব)
কেউ কি আমাকে তার মতো করে ভালবাসতে পারবে? আমাকে তার মতো করে বুঝতে পারবে? তার মতো সুন্দরী মেয়ে/সুপুরুষ পাবো আমি?
পৃথিবীর প্রেমিক প্রেমিকার সংখ্যা কতো হবে? ৭০০ কোটি মানুষের পৃথিবীতে প্রেমিক প্রেমিকার সংখ্যা কোটি কোটি। এবং এই কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে তার প্রেমিক বা প্রেমিকা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী সুন্দর, সবচেয়ে স্পেশাল। তার প্রেমিকাই বা তার প্রেমিকই নাম্বার ওয়ান।
সাধারণ কমনসেন্স থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে উপরের কোনো বাক্যই সত্য হতে পারে না। তুমি তোমার প্রেমিকাকে ভাবছো নাম্বার ওয়ান, ওদিকে তোমার বন্ধু তার প্রেমিকাকে ভাবছে নাম্বার ওয়ান। তাহলে কে সত্যি? সবাই তো আর স্পেশাল হতে পারে না। আগেই আলোচনা করেছি আমরা প্রেমে পড়লে ব্রেইন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর একেবারে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব/মানবী বানিয়ে ফেলেছো তুমি তাকে। তুমি প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছো। তাই ওর কোনো ত্রুটি, কোনো কমতি তুমি দেখতে পাচ্ছো না। অথচ সেও খুব সাধারণ একজন মানুষ। শতো মানুষের ভীড়ে আর দশজনের থেকে তাকে আলাদা করা যায় না। দোষ গুন, রূপ লাবন্য ত্রুটি নিয়ে সে তোমার আমার মতোই সাধারণ একজন মানুষ। প্রেমের এই নেশাটা কেটে গেলেই (যেটা সাধারণত বিয়ে বা শারীরিক মিলনের পরে কেটে যায়) তুমি বুঝতে পারবে সেও অতি সাধারণ এক মানুষ!
পৃথিবীর কেউই আমাকে তার মতো করে ভালোবাসতে পারবে না- তোমার এই কথা তখনই সত্য হবে যখন তুমি পৃথিবীর সব মেয়ের বা সব ছেলের ভালোবাসা পরখ করে দেখবে। পৃথিবীর সবার ভালোবাসা পরখ করে দেখার পরেই তুমি কেবল তার ভালোবাসার তুলনা করতে পারবে। ধরো তোমার চাবি হারিয়ে গিয়েছে। তুমি আমাকে খুঁজতে বললে। আমি বললাম তোমার ঘরে চাবি নেই। বাহিরের বারন্দায় খুঁজে দেখ।
চাবি যে তোমার ঘরে নেই এ কথা তুমি তখনই বিশ্বাস করবে যখন তোমার রুমের প্রতি ইঞ্চি জায়গায় চাবি খোঁজা হয়েছে। কিন্তু পাওয়া যায় নি। ঠিক তেমনি তুমি পৃথিবীর সব মেয়ের/ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পরেই কেবল বলতে পারবে পৃথিবীর কোনো মেয়েই/ছেলেই তার মতো তোমাকে ভালোবাসতে পারে না। পৃথিবীর কেউই তোমাকে তার মতো করে বোঝে না। একজন মেয়ে/ছেলেও যদি বাকি থাকে যার সঙ্গে তুমি প্রেম করোনি তাহলে তুমি শতোভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না প্রাক্তনের মতো কেউই তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না।
আশা করি তোমার চিন্তার অসারতা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছো। দেখ ভাই, দেখ বোন আমার, রাস্তায় পড়ে পড়ে ভিক্ষা করে এমন ল্যাংড়া খোড়া ছেলেটাও এই পৃথিবীতে ভালোবাসার মানুষের খোঁজ পায়। কুৎসিত দাঁত উচু মেয়েটা, কিংবা এসিডে ঝলসানো, আগুনে পোড়া শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী মেয়েটাও স্বামীর দেখা পায়। প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষের বিচ্ছেদ হচ্ছে, আবার লাখ লাখ মানুষ নতুন সম্পর্কে জড়াচ্ছে, জীবনের প্রকৃত ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে, সুখ খুঁজে পাচ্ছে। তুমি কেন ভাবছো তুমি সুখী হতে পারবে না? ভালবাসতে পারবে না? ভালোবাসা পাবে না? অনাদিকাল ধরে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ পেলে তুমি কেন পাবে না? কেন তোমার সাথে এমন হবে? কেন তুমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছ না? সুধারণা করতে পারছো না? ভালোবাসা বঞ্চিত করে, তোমাকে কষ্ট দিয়ে আল্লাহর কি লাভ?
এভাবে চিরকুমার থেকে প্রেমের সমাধি বানানো গল্পে উপন্যাসেই সম্ভব, বাস্তব জীবনে না। ওকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে মনে স্থান দিতে পারব না, জীবনেও তাকে ভুলতে পারব না এসব তোমার কাছে এখন ধ্রুব সত্য মনে হলেও সময়ের সাথে সাথে তা মিথ্যে হয়ে যাবে। বলতে একটু খারাপ শোনাচ্ছে ,কিছু মনে করো না- কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর অন্তরংগতার ব্যাপারটা হয়ে গেলে তুমি ভাববা- কি ভুলের মধ্যে থেকে জীবনের এতো লম্বা সময় অপচয় করে ফেললাম!
এমন চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে দূর করে দাও । এ নিছক বোকামি, এ নিছক কাপুরুষতা এ নিছক পাগলামি। অমিত সম্ভাবনাময় তোমার জীবন। তুমি চাইলে পৃথিবীতে বিপ্লবের বীজ বুনতে পারো। এভাবে জীবনটাকে শেষ করে দেবার জন্য জীবন দেওয়া হয়নি তোমাকে। যে চলে যাবার সে চলে গেছে। মেনে নাও। সে একসময় তোমার জীবনের একটা অংশ ছিল কিন্তু এখন আর নেই। অতীতের হারিয়ে যাওয়া কোনো খেলনা বা বন্ধুর কথা মনে করো। একসময় ছিল , এখন নেই। এবং তুমি সেটা মেনে নিয়েছো। আল্লাহর কাছে দুয়া করো। আল্লাহ্ ভালো একজন মানুষ মিলিয়ে দেবেন। জীবনের ভালোবাসা খুঁজে পাবে তুমি। এখনকার পাগলামি আর ভুলে ভরা দিনগুলোর কথা মনে করে তুমি হাসবে, আফসোস করবে। দেইখো।
(শেষ)
নোট: আমার পরিচিত দুইজন বড়ভাই ছিলেন। একজন খুবই ঘনিষ্ঠ, প্রফেশনাল ব্যাপার স্যাপারে মেন্টরের মতো আমাকে সাহায্য করতেন। দুইজনেই ছ্যাকার কেইস। দুইজনের কেউই আর এই ইহজীবনে বিয়ে করবেন না বলে শপথ করা পাবলিক। অনেক বোঝানোর পরেও কোনো কাজ হয় না। লকডাউনে মাঝে হুট করে শুনি বিয়ে করে ফেলেছেন দুইজনেই। একজনের সঙ্গে দেখা বিয়ের কিছুদিন পর। খুশিতে পুরো ডগমগ করছেন। ২/৩ আলিফ টান মেরে বললাম ভায়া কী অবস্থা? লাজুক হেসে ভাই বললেন সেই অবস্থা।পরের ৫ মিনিট টানা বউয়ের প্রশংসা করে গেলেন।
আমার দুইজন চাচা ছিল। আব্বুর বন্ধু। উনাদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখেছিলাম। ৪৫ বছরের পর বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যে কান্ড কারখানা শুরু করেছিলেন তা মনে হলে এখনো হাসি আটকাতে পারি না।
.