- Published on
মরিবার হলো তার সাধ (প্রথম পর্ব)
আমাদের ছোটো ভাই বোনদের জেনারেশনকে কী এক অদ্ভূত নেশায় পেয়েছে- কিছু হলেই অত্যান্ত ঠুনকো কারণে এরা আত্মঘাতী হয়ে পড়ছে। গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া , গার্লফ্রেন্ড ফোন ধরে না … কথা বলে না, ব্যাস লাইভে এসে গলায় দড়ি দাও। বয়ফ্রেন্ড অন্য এক মেয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম করছে… ঘুমের ওষুধ খেয়ে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ো! দিন দিন এভাবে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের সংখ্যা ভারী হচ্ছে। কিন্তু কেন অবেলায় অভিমানী মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে এতো? কেন এতো তুচ্ছ কারণেই শুকতারারা সব নিভে যাচ্ছে একে একে ?
বলিউড, নাটক, সিরিয়াল, গান সাহিত্য কবিতা তথা প্রচলিত সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতিটি উপাদান ছ্যাকা খাওয়া পরবর্তী আত্মঘাতী কাজগুলোকে প্রচন্ড পরিমাণ রোমান্টিক হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে সুদীর্ঘ কাল থেকে। এই ঐতিহাসিক কাল থেকে অপপ্রচার চালানোর ফলে জেনারেশনের পর জেনারেশন বিশ্বাস করে এসেছে ছ্যাকা খেয়ে আত্মঘাতী কাজগুলো করাই প্রকৃত ভালোবাসা (True Love), প্রকৃত প্রেমের প্রমাণ।
বর্তমানের মতো অতীতে মিডিয়া এতো সহজলভ্য ছিলো না। এতো বিপুল পরিমাণ মানুষকে একসঙ্গে ব্রেইন ওয়াশ করার সুযোগ ছিলো না। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে গনহারে একেবারে মহামারীর মতো ব্রেইন ওয়াশড হচ্ছে আমাদের ছোটো ভাই বোনেরা। তারা পর্দায় দেখছে- ব্রেকাপের পর প্রেমিক পুরুষ চুল বড় করে ছন্নছাড়া জীবন কাটাচ্ছে। পড়াশোনা, বাবা মা, খাওয়ার গোসলের ঘুমের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। ছ্যাকার কষ্ট ভোলার জন্য দরজা বন্ধ করে রাত জেগে জেগে ছ্যাক খাওয়া গান শোনে, পালা করে সিগারেট আর দীর্ঘশ্বাস টানে। গাঁজার আসরে দম দেয়, দেবদাসের মতো বোতলের পর বোতল খায়। নিজের এবং পরিবারের জীবন ধ্বংস করার জন্য যা যা করা দরকার তার সবটাই করে। কুত্তার মতো লাথি খেয়েও বারবার প্রেমিক/প্রেমিকার কাছে ছুটে যায়, অপমানিত হয়, মারধোরের শিকার হয়, তবুও লজ্জা হয় না। আবার কুত্তার মতো ফিরে যার প্রেমিক/প্রেমিকার কাছে।
মিডিয়া জীবন ধ্বংস করার এই চরম অবমাননাকর প্রসেসটাকে অত্যন্ত মহান ভাবে উপস্থাপন করে। তোমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তুমি যদি প্রকৃত প্রেমিক হও তাহলে অবশ্যই তুমি এই প্রসেসগুলো ফলো করবে। এভাবে নিজেকে তিলে তিলে কষ্ট দেওয়াটাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা। ট্রু লাভ। এভাবে হয়ত একদিন তোমার ভালোবাসা তার ভুল বুঝতে পারবে। ফিরে আসবে তোমার বুকে।
সেকুল্যার মিডিয়াসাহার হাতে চরমভাবে মগজধোলাই এর শিকার প্রেমিক প্রেমিকারা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের মতো করে অনুসরণ করে চলেছে এই বিষয়গুলো। ভালোবাসার প্রমাণ দেখানোর জন্য হাত কাটছে, রক্ত দিয়ে নাম লেখছে, গাজা মদ খেয়ে টাল হয়ে পড়ে থাকছে… গলা টিপে মেরে ফেলছে নিজের জীবনের অমিত সম্ভাবনাকে।
দেখ ভাইয়া/ আপু, রুপালি পর্দায় এভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকা ফিরে আসলেও বাস্তব জীবনে তা হয় না। সেখানে নায়ক একজন নায়িকাও একজন। কিন্তু বাস্তবজীবনের নায়ক নায়িকা তো আর একজন দুইজন না। অসংখ্য। তোমার কাছেই ফিরে আসতে হবে এছাড়া তার আর অন্য কোনো অপশান নেই- ব্যাপারটা এমন না। শুধু শুধু তুমি জীবন নষ্ট করে চলছো। এভাবে শোক ভোলা যায় না। বিচ্ছেদের ব্যাথা ভোলা যায় না। বরং শোকের আগুন তা আরও বহুগুন বাড়িয়ে দেয়। মিডিয়া তোমাকে এই সত্যগুলো কখনো দেখায় না। কারণ সত্য কথা বললে ওদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত হবে না। ওদের পেটের ভাত জুটবে না।
আর যদি সে তোমার এই দেবদাস সুলভ আচরণের কারণে ফিরেও আসে তাহলে সম্পর্ক আর আগের মতো থাকবে না। অন্তর্বর্তী শূন্যতায় সম্পর্কের সুতো কেটে যায়। সম্পর্কের ডাইনামিক্স চেইঞ্জ হয়ে যায়। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সে যা বলবে যে যে শর্ত দিবে তা তুমি নিঃশর্তে মেনে নিবে। তোমার সাথে তার সম্পর্ক প্রেমিক প্রেমিকার থাকবে না। বরং তা হবে মনিব আর দাসের। সে যা বলবে তোমাকে সেভাবেই চলতে হবে। এভাবে একদিন দুইদিন চলা যায়, এক মাস দুই মাস চলা যায়, সিনেমার পর্দায় হয়ত সারাজীবন চলা যায় কিন্তু বাস্তব জীবনে চলা যায় না। অবধারিতভাবেই আবার বিচ্ছেদের সম্মুখীন হবে তুমি। এবং এবারের বিচ্ছেদ হবে আগের চাইতেও আরও নির্মম। অনেক কিছুর মাসুল গুনে তারপর হয়ত মুক্তি মিলবে সেই দাসত্ব থেকে। হয়ত সারাজীবনেও মুক্তি মিলবে না। এভাবে শখ করে চোরাবালিতে ফেঁসে যাবার কোনো মানে হয়?
চলবে ইনশা আল্লাহ…