Published on

মরিবার হলো তার সাধ (তৃতীয় পর্ব)

তোমার সাথে একটা কষ্টের কথা শেয়ার করি। কমলাপুর রেল স্টেশনে এক পিচ্চির সাথে দেখা হয়েছিল আমার। প্রায় মধ্যরাত তখন। বয়স কতো হবে বড়জোর ১০/১১। একটু মোটাসোটা গড়ন। পায়ে মোটা রাবারের সোলের স্যান্ডেল। পরনে লুংগি আর পাঞ্জাবি। দুইটাই বড় মানুষের সাইজের। গলায় কিছু তসবীহ ঝোলানো। হাতে কয়েক কপি কুরআন আর হাদীসের বই। তার কাছ থেকে কিছু তসবীহ কিনলাম। তার বেশভূষা দেখে কৌতূহলী হয়ে কথাবার্তা শুরু করলাম- ওরা দুই ভাই। সে ছোটো, তার ভাই বড়। বয়স ১৫/১৬ হবে। প্রথমে মারা যায় মা। এরপর বাবা নাটোরের বনপাড়া বাইপাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। পৃথিবীতে ওদের আপনজন বলতে আর কেউ নেই। বড় ভাই কামলা খাটে। আর সে ট্রেনে করে তসবীহ, হাদিসের বই বিক্রি করে। নাটোর থেকে চলে এসেছে সেই সকাল বেলা। তসবীর দাম যা হয় তার চাইতে ২০/২৫ টাকা বেশী দিয়ে বললাম কিছু খেয়ে নিও। সে বলল- আমি আজকে সারাদিন কিছুই খাইনি। এই টাকা দিয়ে ভাত কিনে খাব!

রাত প্রায় ১২ টা বাজে তখন!

আর এক দিনের কথা। জরুরী তলবে মামার সঙ্গে মামার বাড়িতে যাচ্ছি। নানা মারা গিয়েছেন। বহুদূর থেকে যাচ্ছি আমরা। সকালে পৌঁছাতে না পারলে জানাযা মিস হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। কার্তিকের রাত। প্রায় দুইটার দিকে এক ফিলিঙ স্টেশনে থামল আমাদের গাড়ি । গ্যাস নেবার জন্য। গভীর দুঃখবোধ নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলাম আমি। সেই আধো ঘুম, আধো জাগরণ পুরো কষ্টের মাঝে দেখলাম আশীতিপিতর এক রুগ্ন বৃদ্ধ রাত দুইটার সময় ফিলিং স্টেশনে গামছা বিক্রি করছে!

ভাই আমার, বোন আমার- দেখো তোমার কষ্টটাকে ছোটো করতে চাচ্ছিনা, এক কষ্টের সাথে সাধারণত অন্য কষ্টের তুলনা চলে না । প্রত্যেকটা কষ্টই আলাদা আলাদা। ভিন্ন ভিন্ন তাদের তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতা। তবুও একটু মেলাও নিজের জীবনের সাথে তাদের জীবনের। এতোটা অন্তহীন কষ্ট কি তোমার বুকে জমা? এতোটা ক্ষত বিক্ষত কি তোমার জীবন?

তাঁরা হাসিমুখে বেঁচে থাকতে পারলে তুমি কেন পারবে না? কেন হতাশায় নিঃস্ব রিক্ত করে দিচ্ছ নিজেকে? কেন কাপুরুষের মতো মরে যেতে চাচ্ছো ?

আল্লাহকে বিশ্বাস করে এমন একজন মানুষের পক্ষে কিভাবে হতাশ হওয়া সম্ভব? কিভাবেই বা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এমন একজন মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে ? তোমার সমস্যা যতোই জটিল হোক না কেন, যতোই কঠিন হোক না কেন তোমার বিপদ আল্লাহর কাছে তো কিছুই নয়।‌ তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি সাত আসমান ও জমিনকে বানিয়েছেন কোনো কিছু ছাড়াই, তিনি শুধু হও বলেন সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়- তোমার এমন আল্লাহর কাছে কোনো কিছুই তো অসাধ্য নয়। আবার এই আল্লাহ্‌ তোমাকে তোমার মায়ের চাইতেও অনেক গুন বেশী ভালোবাসেন। তুমি কখন তাকে ডাকবে কখন তার কাছে আশ্রয় চাইবে সাহায্য চাইবে তার জন্য অপেক্ষা করে। আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা এক বিঘত আমার দিকে অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন বান্দা আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক কদম এগিয়ে যাই। আর বান্দা যখন আমার দিকে হেঁটে হেঁটে আসে, তখন আমি তার নিকট দৌড়ে আসি।’ (বুখারি : ৭৫৩৬)। এমন আল্লাহ্‌ থাকার পরেও কেন তুমি হতাশ হয়ে যাও? কেন জীবনকে শেষ করে দিতে চাও?

‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ ( সূরা যুমার : ৫৩)

ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না, ও ছাড়া কেউই আমাকে বোঝেনা, কেউই আমাকে ওর মতো করে ভালোবাসতে পারবে না, আমি ওকে ছাড়া কিভাবে বাচব? - এই চিন্তা ভাবনাগুলোর অসারতা আমরা এর আগেই আলোচনা করেছি। এখানে আর সেগুলোর পুনুরাবৃত্তি করতে চাচ্ছি না। শুধু একটা কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেই- বলি যার জন্য মাতাল হচ্ছো, যার জন্য তুমি আত্মহত্যা করতে চাচ্ছো এমন প্রবল সম্ভাবনা আছে যে সেই মানুষটার সাথে বিয়ে হলে ঘর সংসার করলে তুমি একসময় আফসোস করবে কেন তাকে বিয়ে করলে।1

আল্লাহ্‌ কি ইবরাহীম আলাইহিসসালামের জন্য আগুনকে শীতল করে দেন নি? তিনি কি ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কুরবানির হাত থেকে রক্ষা করেন নি? ইউনুস আলাইহিস সালামকে মাছের পেট থেকে রক্ষা করেননি? মুসার জন্য সমুদ্রের মাঝে রাস্তা বানাননি? ইউসুফকে জুলেয়খার চক্রান্ত থেকে রক্ষা করেন নি? মুহাম্মাদ (ﷺ) এর জন্য চাদকে দ্বিখন্ডিত করেননি? তাহলে কেন তিনি তোমার জীবনের সমস্যার সমাধান করে দিবেন না! তাকে একটু ডাকার মতো করে ডেকে দেখ। তার উপর ভরসা করো। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে ফিরে আসো। তিনি তোমার সকল দুঃখ কষ্ট লাঘব করে দেবেন।

চলবে ইনশা আল্লাহ…
আগের পর্বের লিংক ও রেফারেন্স কমেন্টে
.
আকাশের ওপারে আকাশ বই থেকে
#প্রেমাতাল
#তোমারচোখেদেখেছিলামআমারসর্বনাশ
#LostModesty

1 বিস্তারিত প্রেম কয়েদী ও অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে থাকিল…? আলোচনা করা হয়েছে। আর একবার পড়ে নিতে পারো।