Published on

ওর সাথে পালালাম (শেষ পর্ব)

শিউলি আপা আর আপন ভাইয়ের সংসার (ওর সাথে পালালাম-১ দ্রষ্টব্য) সুখের হয়নি। আপন ভাই বেকার ছিল। কাজকর্ম করার ব্যাপারে তার তেমন কোনো গরজ ছিল না। ফুটবল আর ক্যারাম খেলা নিয়েই পড়ে থাকতো। সংসারে অভাব আসলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়– সেই পুরোনো প্রবাদটা আবারো তার সত্যতা জানান দিলো। ছ’মাস না পেরুতেই ঝগড়া, অশান্তি, অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেল শিউলি আপার সংসারে। কিছুদিন পর একটা মেয়ে হলো আপার। মেয়েকে দুধ কিনে খাওয়ানোর পয়সা পর্যন্ত ছিলো না। না খেয়ে খেয়ে বাচ্চাটার কঙ্কাল বের হয়ে যাবার অবস্থা! শিউলি আপা অনেক রূপবতী ছিলেন। উনার অবস্থাও সহ্য করার মতো না। সংসারের কাজের চাপে, উপোস, আধপেটা খেয়ে খেয়ে, বাচ্চা হবার ধাক্কা সামলানোর মতো অবস্থা ছিলো না তার শরীরের। শরীর ভেঙে পড়ে। চোখের নিচে জমে চিরস্থায়ী গ্লানির কালি। মেয়ে আর নাতনির অবস্থা দেখে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বকুল কাকুরা সম্পর্ক মেনে নেন। সাধ্যমতো সাহায্য করতে থাকেন। তবে সুদিন আর ফেরেনি।

হতাশায় ভুগে আপন ভাই গাঁজার নেশায় ডুব দিলো। বাপের কাছ থেকে মেয়েকে দুধ কিনে দেবার কথা বলে টাকা নিতো। তারপর চিপায় বসে দিনরাত গাঁজা টানতো। মাঝে মাঝে বিকেলে মাঠে গিয়ে ফুটবল শটাতো।

এভাবেই চললো বেশ কয়েক বছর। ততোদিনে অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছি। প্রাইমারি শেষ করে অন্য এলাকার স্কুলে ভর্তি হয়েছি। একদিন খবর পেলাম, আপন ভাইয়া হসপিটালে ভর্তি। শিউলি আপার সাথে রাগারাগি করে কীটনাশক খেয়েছে কয়েক বোতল। তিনদিন দুইরাত হসপিটালে ভর্তি ছিলো সে। তারপর হসপিটাল থেকে ছুটি মেলে তার। তবে বাড়ি ফেরা হয় না। ঠাঁই হয় পুরোনো এক অশ্বত্থ গাছের নিচে। কবরে।

শুনেছিলাম, শিউলি আপার পরে অন্য এক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। পরের কোনো খবর আর জানি না। জানার ইচ্ছেও হয়নি কোনো দিন।

বকুল কাকুদের খুব সুখের সংসার ছিল। শিউলি আপার ঘটনায় একেবারে ছারখার হয়ে গেল সব। শিউলি আপা পালিয়ে বিয়ে করার কারণে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে অনেক বাঁকা কথা শুনতে হলো তাদের। গ্রামে যারা থাকেনি, তাদের আসলে বলে বোঝানো যাবে না–এ ধরনের ঘটনাগুলোর কারণে কী ধরনের কথা শুনতে হয়। তবে এখানেই থেমে থাকেনি শিউলি আপার ঘটনার চেইন ইফেক্ট।

শিউলি আপার একটা ছোট বোন ছিল। ধরি, তার নাম রূপা। আমার চাইতে বছর দুয়েকের বড়, যা মনে পড়ে। অসম্ভব রূপবতী। রূপবতীদের রূপের ধার আশপাশ তছনছ করে দেয়। তার বেলাতেও ব্যতিক্রম ছিল না। সে হেঁটে গেলে পাড়ার ক্রিকেট ম্যাচ থেমে যেতো। একটু লাজুক, গুডবয় টাইপের ছেলেরা আফসোস ভরা দীর্ঘশ্বাস ফেলতো। পেকে যাওয়া ছেলেরা শ্রবণ অযোগ্য এমন সব কথা বলতো যা সভ্য সমাজে উচ্চারণ করা যায় না।

শিউলি আপার ঘটনার কারণে এই মেয়েকে নিয়ে খুব ভয় করতো বকুল কাকুরা। আরেকবার অমন কিছু হলে সেই শোক সহ্য করার মতো শক্তি ছিলো না তাদের। রূপাকে খুব কড়া শাসনে রাখতো, একেবারে চোখে চোখে। ‘শাসন ভালো, তবে এতো কড়া শাসন ভালো না। বিশেষ করে মেয়েদের। শিউলির মতো কিছু করার মেয়ে না রূপা। অসম্ভব পার্সোনালিটি ওর’–আমার বাবা, কাকুকে মাঝে মাঝে বোঝাতো। কিন্তু কাকু বুঝতে চাইতো না। বাবা ঠিকই বলেছিলেন। শিউলি আপার মতো কিছু করেনি রূপা। তবে যা করেছে তা আমরা কেউই ভাবতে পারিনি।

এসএসসির পর শহরে একা একা পড়তে আসতে চাইলো রূপা। অজানা আশংকায় কেঁপে উঠলো বকুল কাকুরা। বেঁচে থাকার অবলম্বন রূপাকে একা ছাড়তে চাইলো না। কিন্তু রূপা শহরে পড়বেই। কোনো কথা শুনতে চায় না। প্রায়ই এ নিয়ে রূপার অভিমান, ঝগড়া, অশান্তির খবর শোনা যেতো। বকুল কাকুরাও কড়া শাসন করতো।

মে মাসের এক সন্ধ্যায় লোডশেডিং এর ঠেলায় অতিষ্ঠ হয়ে ছাদে উঠবো কি না ভাবছি। এমন সময় বাবার ফোন আসলো -

‘রূপাকে চিনিস না তুই? ও গলায় দড়ি দিয়েছে! বকুলের সাথে ঝগড়া করে।‘

***

রাস্তায় বকুল কাকুর সাথে দেখা হয় হঠাৎ হঠাৎ। প্রতিবারই ভাবি–ইশ, কেন যে দেখা হলো!

একসময়ের হাসিখুশি, গোলগাল বকুল কাকু এখন একেবারেই চুপচাপ, নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। মাথার চুল পেকে গেছে। হাঁটেন মাথা নিচু করে, কুঁজো হয়ে। অচেনা আগন্তুক কেউ দেখলেও চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে–জীবনের ঘাটে ঘাটে মার খেয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছে এই লোক। হারানোর আর কিছুই নেই তার।

কাকু কেমন আছেন?’ –প্রতিবার এই প্রশ্নের উত্তরে চোখ তুলে আমার দিকে তাকান। কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে শূন্য চোখে চেয়ে থাকেন। যেন চেনার চেষ্টা করছেন আমি কে! তারপর ম্লান হেসে বলেন, ‘আচ্ছা কাকু, তুমি! হ্যাঁ আছি ভালোই, এইতো চলছে যেমন চলার’।

তারপর আবার আগের মতোই কুঁজো হয়ে, মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেন। বিড়বিড় করেন কী যেন। যতক্ষণ দেখা যায় আমি তাকিয়ে থাকি। বহু বছর আগের বৃষ্টিভেজা আকাশের নিচে আমাদের দক্ষিণের দরজায় দাঁড়ানো সদ্য সন্তান হারিয়ে ফেলা এক পিতার কলজে চেরা হাহাকার, আমার কানে বাজে। মনে হয় মহাকাব্যিক কোন ট্র্যাজেডির শেষ দৃশ্য মঞ্চস্থ হচ্ছে আমার সামনে!

(শেষ)

বই: আকাশের ওপারে আকাশ

লেখক: লস্ট মডেস্টি

সম্পাদক: আসিফ আদনান

প্রকাশনী: Ilmhouse Publication

নির্ধারিত মূল্য ২৮০ টাকা

বাংলাবাজারে পাবেন- সত্যায়ন প্রকাশন এ।

অনলাইন বুকশপে বইগুলো পাবেন ইনশা আল্লাহ। নিকটস্থ লাইব্রেরীতেও পাবার কথা

১। ওয়াফিলাইফ - shorturl.at/artZ4

২।Mashhadah Fragrance- https://tinyurl.com/4wmudhur

৩। মুওয়াহহিদাহ বুকশপ - shorturl.at/dDX56

৪। আস সুন্নাহ বুকশপ - shorturl.at/kuFIT

৫। আল ফুরক্বান শপ - https://tinyurl.com/388uvyah

৬। আলাদা বই - https://tinyurl.com/3sbkk2jb

৭। দুর্বারশপ - shorturl.at/adhPX

৮। খিলাফাহ বুকশপ - shorturl.at/uFQVW

৯। উম্মাহ শপ - https://tinyurl.com/ykj6brkf

১০। বইয়ের জাগরণ - https://tinyurl.com/4dxe65pe

১১। মোল্লার বই ডট কম - https://tinyurl.com/yckp9p77

ভারতে- https://web.facebook.com/sabirul.islam.1650

#LostModesty

.