- Published on
অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে থাকিলো…? (৩)
এখানে আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজে কি সংসারে অশান্তি হয় না? মারামারি, খুনোখুনি হয় না?
হ্যা হয় সত্যি। তবে সেটা এরেঞ্জড ম্যারেজের সিস্টেমে সমস্যা না। সিস্টেমের প্রয়োগে সমস্যা। এই বিষয়টি খুব ভালোমতো বোঝা যাবে যদি আমরা আগে বুঝে নেই প্রেমের বিয়ে কেন ভাঙ্গে, প্রেমের বিয়ে এবং এরেঞ্জড ম্যারেজের মধ্যেকার অনালোচিত কিন্তু মৌলিক পার্থক্যগুলো কি।
‘প্রেমের বিয়ে ভাঙে কেন?’ নামে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট। লেখক ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আলগিন।[1] উনি ছাড়াও দেশ বিদেশের অনেক প্রখ্যাত গবেষক, আলেম, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণা[2] থেকে ঠিক ঐ কথাগুলোই বারবার উঠে এসেছে যেগুলো আমরা বইয়ের একদম শুরুতে বলেছি।
১। মোহ ও কামনা-
প্রেমের বিয়ে- বিয়ের পূর্বের মোহান্ধ মন বিয়ের পরের বাস্তবতায় ধাক্কা খেয়ে মোহ থেকে মুক্তি পায়। প্রেমের বিয়ে ব্যর্থ হবার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো এটা। মোহ নিয়ে আমরা পূর্বেই সখী ভালোবাসা কারে কয় লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মোহ এবং ফ্যান্টাসি যে কয়ভাবে প্রেমের বিয়ের সমাধি রচনা করে...
ক) প্রেমের সময় প্রেমিক প্রেমিকা একে ওপরের কাছে নিজের দোষ লুকিয়ে রাখে সচেতনভাবে। যতোটুকু সময় থাকে নিজের সেরাটা সবসময় উপস্থাপন করে। ভালো ভালো পোষাক আশাক পরে, শরীরে পারফিউমের গোডাউইন বানিয়ে ফেলে, সুন্দর করে সেজেগুজে থাকে, সুন্দর করে কথা বলে।
কিন্তু বিয়ের পরে আর এমন ছদ্মবেশ ধরে থাকা সম্ভব হয় না। সব সময় সুন্দর করে সেজেগুজে থাকার অবকাশ মেলেনা। ঘরোয়া পোশাক, পারফিউমের অভাবে শরীরের দুর্গন্ধ, সকালের ঘুম থেকে ওঠা এলোচুল, চোখের কোঁণের পিচুটি, নাকে সর্দি... বিশাল এক ধাক্কা হয়ে আসে। অবাক হয়ে ভাবে ... আরে আমি তো বিয়ে করলাম রাজকন্যাকে। এখন এতো দেখি পাশের বাড়ির জরিনা। আবার স্ত্রী ভাবে আরে ওর শরীর থেকে আগে কতো সুগন্ধ আসতো, এখন এতো পাঠার মতো গন্ধ কেন, এদেখি গোসলও করে না ঠিকঠাক মতো, মুখ দিয়ে বিড়ির গন্ধ বের হয়, একটা ক্ষ্যাতের মতো করে কথা বলে।
মোহের মন ও চোখ প্রেমিক/প্রেমিকার দোষ,ত্রুটি ধরতে পারে না। প্রেমিককে মনে করে রুপকথার পংখীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আসা রাজকুমার। প্রেমিকাকে মনে হয় সকল মানবিক দোষ ত্রুটি মুক্ত কোহেকাফ নগরীর কোনো ডানাকাটা পরী!
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ২০০৪ সালে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখলো–হ্যাঁ, যা বলা হয় তা-ই সত্য। প্রেম আসলে অন্ধই। প্রেমে পড়া প্রেমিক/প্রেমিকারা চোখে দেখতে পায় না।[3]
বিয়ের অষ্টপ্রহর একসঙ্গে নিবিড়ভাবে থাকার কারণে মোহ কেটে যায়, প্রেমিক/প্রেমিকার চোখে একে ওপরের দোষ ধরা পড়ে। ২৪ ঘন্টা তো আর ভান করা যায় না… তাই চাইলেও দোষ লুকিয়ে রাখা যায় না।
সবার সামনে নাক খুটলানো, জোরে জোরে নাকের সর্দি টানা, ঘুমের ঘোরে নাক ডাকা … এমন ছোটো ছোটো বদ অভ্যাসও একে ওপরের প্রতি মোহ দূর করে দেয়। আকর্ষণ কমিয়ে দেয়।
খ) দায়িত্ব কর্তব্য: প্রেমের সময়টাতে একটা স্বপ্নের জগতে থাকে প্রেমিক প্রেমিকারা। ডেটিং করা, ফুচকা খাওয়া, বাইকে চড়িয়ে উরাধুরা টান তোলা আর একটু পর পর ব্রেক করা, মাঝে মাঝে লঞ্চের কেবিনে ট্যুর দেওয়া। টাকা পয়সার চিন্তা নাই, কোনো দায় দায়িত্ব নেই। একটা ফ্যান্টাসির মধ্যে, একটা কল্পনার মধ্যে সময় চলে যায়। বাবুর নাম ঠিক করে রাখলেও রাত বিরাতে বাবুর ডায়াপার চেইঞ্জ করা লাগবে এসব তারা ভাবতেই পারে না। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করার স্বপ্ন বোনে, কিন্তু সেই মোমবাতি আর ডিনারের খাবার কেনার টাকা আসবে কোত্থুকে সেটা নিয়ে চিন্তা করে না। মিডিয়া এবং সুশীল প্রগতিশীলদের দ্বারা ব্রেইন ওয়াশড হয়ে এরা ভাবে যে বিয়ের পরেও মনে হয় এমনভাবেই জীবনটা শুধু এনজয় করে কাটবে। একে অপরকে এমন প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু বিয়ের পরে বাস্তবতা পর্দার ওপাশ থেকে সটান এসে হাজির হয়। স্বপ্নের জগত থেকে নির্মম কঠোর বাস্তব দুনিয়ায় আছাড় খেয়ে পড়ে। টাকা পয়সার চিন্তা, রান্না বান্না, ঘরের কাজ ইত্যাদির প্যারার ভালোবাসা জানালা দিয়ে ফুড়ুত করে পালায়।
গ) যিনা/ব্যভিচার: অধিকাংশ প্রেমেই এখন বিয়ের পূর্বে যিনা হয়ে যায়। এই জঘন্য একটা পাপের মাধ্যমে বিয়ে শুরু হয়। এই সংসারে কিভাবে সুখের হবে? প্রেম কয়েদি লেখায় আমরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের গবেষণা দেখিয়েছি- বিয়ের পূর্বে বিছানায় শুয়ে পড়লে কিভাবে তা বিবাহিত জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, ভালোবাসা কমিয়ে দেয়, সন্দেহ, অবিশ্বাস, বিচ্ছেদ ঘটায়।
পাশাপাশি এখানে আর একটা ব্যাপার কাজ করে। বিয়ের আগে কোনো রকমের দায়-দায়িত্ব নেওয়া ছাড়াই শরীরের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছিল। এখন সেই একই জিনিস পাবার জন্য এখন দায়িত্ব নেওয়া লাগছে। বউয়ের পেছনে টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সংসারের কাজ করা লাগছে রান্না বান্না করা লাগছে। দায়িত্বের এই ঝামেলাটাও সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করে।
ঘ) দাস- মনিব সম্পর্ক:
প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য প্রেমিক/প্রেমিকা যা বলে তাই বিনাপ্রশ্নে মেনে নেওয়া হয়। যা করতে বলা হয় তাই করা হয়। অভিমান করলে রাত বিরাতে সারা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে কাঠগোলাপ এনে দিয়ে অভিমান ভাঙ্গানোর পিনিক থাকে, কটূ কথা বললেও সেটা হজম করে নেবার মানসিকতা থাকে। নম্রতা ভদ্রতা আত্মত্যাগ থাকে। মানিয়ে নেবার মানসিকতা থাকে। কিন্তু বিয়ের পর এই দাস-মনিব সম্পর্ক চালিয়ে যাবার মানসিকতা আর থাকে না- ওকে পাবার জন্য আমি আগে এমনটা করেছিলাম... এখন তো আমি ওকে পেয়েই গেছি। আগে অনেক প্যারা সহ্য করেছি ...এখন আর করব না। এই হয় চিন্তাভাবনা।
ঙ) প্রতারণা: প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে প্রতারণার সুযোগ অনেক বেশী থাকে। মোহান্ধ মন যাকে তাকে পছন্দ করে ফেলে। ওর ব্যাকগ্রাউন্ড, পরিবার, পেশা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেবার মানসিকতাও থাকে না। এটাকে একপ্রকার প্রেমের অপমান মনে করা হয়। তাই খুব সহজেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিয়ে করে ফেলা যেতে পারে। কেউ হয়ত দারোয়ানের চাকরি করে সে পুলিশে চাকরি করে বলে বিয়ে করে ফেলতে পারে। বিয়ের পরে আসল সত্যটা বের হয়ে গেলে অবধারিতভাবেই সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।
এরেঞ্জড ম্যারেজ-
এবার অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের দিকে তাকাও। মোহ বা কামনার ফাঁদে ফেলে ভুল মানুষ বাছার সম্ভাবনা এখানে শূন্যের__ কাছাকাছি। কাউকে দেখে মোহে পড়ে গেলেও তার সাথেই যে বিয়ে হয়, এমন না। ছেলে মেয়ের মোহান্ধ চোখ ভুল করলেও বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন খোঁজখবর নিয়ে পাত্র/পাত্রীর এবং পরিবারের মন মানসিকতা, পরিবেশ, দ্বীনদারিতা (শরীয়াহ অনুযায়ী যেটা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত**), রূপ-সৌন্দর্য, অর্থনৈতিক অবস্থা সব বিবেচনা করে তাদের ছেলে বা মেয়ের জন্য উপযুক্ত মানুষকে নিয়ে আসতে পারেন। এর ফলে প্রতারণার সুযোগ যেমন কম থাকে তেমনি বিয়ের পরে হানিমুন পিরিয়ড শেষে মোহ বা কামনা কেটে গেলেও মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না।
আদর্শ ইসলামী বিয়েতে কী হয়?
মেয়ের পুরুষ অভিভাবকের উপস্থিতিতে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী পাত্র/পাত্রীরা একে অপরকে দেখে, দোষগুণ, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা সব জেনে, দায়িত্ব-কর্তব্য জেনে বুঝে বিয়ে করে। আলগা ফ্যান্টাসি থাকার সুযোগ খুবই কমে আসে। এখানে প্রেমের নামে যিনা করে আল্লাহর আইন অমান্য করা হয় না। ইস্তিখারা সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করার সুযোগ থাকে।[4] দেনমোহরের ব্যাপারে ঠকানো যায় না।
এখানে একটা কথা বলা বেশ জরুরি– অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের গায়ে একটা তকমা বেশ ভালোভাবেই সেঁটে দেওয়া হয়েছে যে, এখানে জোর করে মেয়ে বা ছেলের অমতে তার অপছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে দেওয়া যায়। কাজেই এটা একটা দাসত্বের প্রতীক।
অথচ বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে। ছেলে বা মেয়ে না চাইলে অভিভাবকরা জোর করতে পারবেন না। এটাই ইসলামের বিধান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“যে নারীর পূর্বে বিয়ে হয়েছিল, বিয়ের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার অভিভাবকের তুলনায় বেশি এবং একজন কুমারী মেয়ের বিয়েতে তার অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক, (তবে) নীরবতাই তার সম্মতি।”[5]
তাছাড়া বিয়ে মানে শুধু দু’ জন মানুষের মিলন নয়। বরং দুইটি পরিবার, দুইটি বংশের মিলন। লাভ ম্যারেজের বেলায় অনেক ক্ষেত্রেই দুই পরিবারের মাঝে মন-মানসিকতা, অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি সহ আরো অনেক কারণে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। হয়ও। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা অনেক কম। দুই পরিবারের সম্পর্কে তিক্ততা থাকলে স্বামী-স্ত্রীর জীবন যে কতোটা দুর্বিষহ হয়ে যায়, নিজের অভিজ্ঞতা ছাড়া বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়।
2। অর্থনৈতিক সুবিধা, বাবা মার সমর্থন:
প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে বাবা মার কাছ থেকে সমর্থন, অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা পাবার সম্ভাবনা বেশ কমে আসে। বাবা মার অমতে, অপছন্দে বিয়ে করলে তো কথায় নেই। দেখা যাচ্ছে ঋণ করে বিয়ের পুরো খরচ দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি ঝগড়া ঝাটি বিশেষ করে শ্বাশুড়ীর সাথে, ননদের সাথে লেগেই থাকে। বউ বড় না মা বড়- এই মাইনকার চিপায় ফেঁসে যাওয়া লাগে। বউকে নিয়ে আলাদা সংসার পাতা লাগে। খাবার খরচ, বাসা ভাড়া ইত্যাদি যেগুলো আগে বাবা দিচ্ছিল বা ভাগাভাগি করছিল সেগুলো এখন নিজেকেই দিতে হয়। প্রেসার বাড়ে।
মুরগির কুঠির মতো সেই সংসার বাবা মা ভাই বোনের সংস্পর্শ, স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। বাচ্চা কাচ্চারাও দাদা দাদী চাচা, ফুপু এদের আদর যত্ন থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হয়। তাদের সুষ্ঠভাবে বেড়ে উঠা বাধাপ্রাপ্ত হয়। [6] পাশাপাশি এরকম আত্মকেন্দ্রিক নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির আরও অনেক ভয়ঙ্কর সমস্যা রয়েছে- ব্যক্তিত্ববো্ধ আত্মসম্মান নষ্ট হওয়া, সমাজের সংহতি, ঐক্য কমে যাওয়া, কেন্দ্রীয় কোনো কাঠামো বা সত্তার দ্বারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত হয়ে তাদের হাতের পুতুলের মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য হওয়া। অন্য কোনো স্থানে এসব আলোচনা করা যাবে ইনশা আল্লাহ্।
এরেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে বাবা মা-ই তো পছন্দ করে নিয়ে এসেছে। কাজেই একটু মিলে মিশে থাকতে চায়। স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া লাগলে প্রেমের বিয়েতে যেমনটা বাবা মাকে ঝগড়া আরও উস্কে দিতে দেখা যায়, এক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। বরং ঝগড়া মেটানোর চেষ্টা করেন। উঠতে বসতে রান্নাঘর আলাদা করে দেয় না। দায়িত্ব নিয়ে, অর্থনৈতিক, মানসিক সমর্থন দিয়ে নব্য সংসার স্মুথলি শুরু করা ও টিকিয়ে রাখতে চান।
3। একঘেয়েমি,পাপের উপর প্রতিষ্ঠিত:
প্রেমের বিয়েতে খুব দ্রুতই একঘেয়েমি চলে আসে। প্রথম দেখা, প্রথম ভালোলাগা, প্রথম স্পর্শ, প্রথম চুমু খাওয়া,সারা রাত জেগে গল্প করা,একে অপরকে জানা ...এই যে চমৎকার আনন্দগুলো বিয়ের আগে প্রেম করার সময়টাতেই সব হয়ে যায়। এমনকি বিছানার সম্পর্কও। রহস্য রোমাঞ্চ কিছুই বাকী থাকে না বা থাকলেও কেবল শরীরের যতসামান্য রহস্যটাই থাকে। নতুন করে জানার, আবিষ্কার করার কিছুই নেই। কাজেই একঘেয়েমি আসতে খুব একটা সময় লাগে না। হানিমুন পিরিয়ডেই একঘেয়েমি চলে আসে। পাশাপাশি এই বিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাপের উপর। এ কারণে আল্লাহ্ তায়ালা এই বিয়ে থেকে বারাকাও তুলে নেন।
“যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জন্য রয়েছে কষ্টের জীবন”।[7]
“আর যদি গ্রামবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।”[8]
“অতএব যে লোক আল্লাহ্র ভয় ও সন্তুষ্টির উপর স্বীয় ভবনের ভিত্তি স্থাপন করে সে কি ভাল, না যে পড়পড় এক ভাঙ্গনের কিনারায় তার ভবনের ভিত্তি স্থাপন করে আর এই ভবন তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ভেঙ্গে পড়ে সে ভাল? আল্লাহ্ জালিমদেরকে হেদায়েত করেন না।[9]
অন্যদিকে এরেঞ্জড ম্যারেজের দিকে দেখ- প্রেমের বিয়েতে মিস করা প্রত্যেকটা দুর্দান্ত আনন্দ দেবার উপাদান এখানে রয়েছে। প্রেমে পড়ার সেই অবিস্মরণীয় আনন্দের অনুভূতি, প্রথম হাত ধরা, স্পর্শ, একে একে অপরকে জানা, রহস্য উন্মোচন করা। পাশাপাশি আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানার কারণে আসমানি বরকত! কি চমৎকার এক উজাড় যুগলবন্দী জীবনের শুরু!
“যে পুরুষ বা নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎকাজ করবে তাকে আমি উত্তম জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের শ্রেষ্ঠ কাজের পুরস্কার দিব।[10]
রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন মনোবিজ্ঞানী উষা গুপ্তা এবং পুষ্পা সিং পাশ্চাত্যের মতো প্রেমের বিয়ে আর উপমহাদেশের গতানুগতিক অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ নিয়ে বেশ চমৎকার একটা গবেষণা করে ১৯৮২ সালে। সেই গবেষণায় দেখা যায়–অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে দিন দিন ভালোবাসা শক্তিশালী হতে থাকে। ড. রবার্ট এপস্টিনের কথা আমরা আগেই বলেছি। তার মতে, প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে ভালোবাসা মোটামুটি দুই বছর পর কমতে শুরু করে। কিন্তু অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে এটা দিন দিন বাড়তে থাকে।[11]
প্রকৃতপক্ষে লাভ ম্যারেজে ভালোবাসাটাই তৈরি হতে পারছে না ঠিকঠাক মতো। যা হচ্ছে তা খুবই স্বল্প পরিমাণ, ক্ষণিকের ভালোবাসা। বাকিটা জুড়ে আছে মোহ আর কামনা।
4। সামাজিক স্বীকৃতি নেই-
সখী ভালোবাসা কারে কয় লেখায় আমরা আলোচনা করেছি সামাজিক স্বীকৃতি ভালোবাসা তৈরির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লাভ ম্যারেজে অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। বাবা মার অমত থাকে। সমাজের মানুষের কাছে কটূ কথা শোনা লাগে। লুকিয়ে বা পালিয়ে বিয়ে করে অর্থনৈতিক, মানসিক সবদিক থেকেই কঠিন অবস্থায় পড়া লাগে। বাবা মা, ভাই বোন, আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।পরিবার কবে বিয়ে মেনে নেবে, কবে বাসায় ফিরতে পারব- এই টেনশনে জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়। একে অপরকে দোষারোপ করা শুরু হয়- ওর জন্যেই আমার আজ ছন্নছাড়া অবস্থা! অনেক সময় দেখা যায় বিয়ের পর কয়দিন চুটিয়ে বিছানায় সময় কাটিয়ে যখন আর ভালো লাগে না, তখন বউকে ফেলে রেখে চম্পট দেয়। দেন মোহরানার টাকা মেরে দেয়। বা নামমাত্র দেনমোহরানার টাকা ধার্য করে।
অন্যদিকে এরেঞ্জড ম্যারেজের ক্ষেত্রে বাবা মা পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাই মিলে বিয়ে দেয়। শুরুতেই একটা চমৎকার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়ে যায়। দেনমোহরানায় প্রতারণা করা, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে পার পেয়ে যাওয়া বা মজা লুটে পালিয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
‘…তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা অবাধ যৌনচারে লিপ্ত হতে পারবে না অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না।’ [12]
চলবে ইনশা আল্লাহ...
বই: আকাশের ওপারে আকাশ
লেখক: লস্ট মডেস্টি
সম্পাদক: আসিফ আদনান
প্রকাশনী: Ilmhouse Publication
নির্ধারিত মূল্য ২৮০ টাকা
বাংলাবাজারে পাবেন- সত্যায়ন প্রকাশন এ।
অনলাইন বুকশপে বইগুলো পাবেন ইনশা আল্লাহ। নিকটস্থ লাইব্রেরীতেও পাবার কথা
১। ওয়াফিলাইফ - shorturl.at/artZ4
২।Mashhadah Fragrance- https://tinyurl.com/4wmudhur
৩। মুওয়াহহিদাহ বুকশপ - shorturl.at/dDX56
৪। আস সুন্নাহ বুকশপ - shorturl.at/kuFIT
৫। আল ফুরক্বান শপ - https://tinyurl.com/388uvyah
৬। আলাদা বই - https://tinyurl.com/3sbkk2jb
৭। দুর্বারশপ - shorturl.at/adhPX
৮। খিলাফাহ বুকশপ - shorturl.at/uFQVW
৯। উম্মাহ শপ - https://tinyurl.com/ykj6brkf
১০। বইয়ের জাগরণ - https://tinyurl.com/4dxe65pe
১১। মোল্লার বই ডট কম - https://tinyurl.com/yckp9p77
ভারতে- https://web.facebook.com/sabirul.islam.1650
.
রেফারেন্স:
[1] প্রেমের বিয়ে ভাঙে কেন? প্রথম আলো, আগস্ট ৯, ২০১৬- tinyurl.com/4c97bdhw
[2] Why is the divorce rate higher in love marriages than in arranged marriages? inforanjan.com, June 9, 2021- tinyurl.com/3dcyw2r4
How Do Arrange Marriages Last Longer Than Love Marriges,yourdost.com- tinyurl.com/dxjra3p7
Debate on Love Marriage and Arranged Marriage, aplustopper.com, March 16, 2022- tinyurl.com/bdehk578
যে প্রেমের শেষ পরিণতি হচ্ছে বিয়ে; সেটা কি হারাম? islamqa - tinyurl.com/yc4ub88y
Arranged Marriages Can Be Real Love Connection,scientificamerican.com, March 11, 2010- tinyurl.com/4cpf4pdy
[3] Arranged marriages, and happiness of a nation, livemint.com, April 12 , 2018- tinyurl.com/yc2ucbsh
[4] ইস্তিখারার নামাযের পদ্ধতি, Islamqa- tinyurl.com/4s7bfnk8
[5] সহীহ মুসলিম ১৪২১ [ইফা. ৩৩৪৫] ইবনু আব্বাস রা. হতে। সহীহ বুখারীতে (৬৯৪৬) আইশা রা. হতে অনুরূপ বর্ণনা আছে, তবে তাতে হাদিসের প্রথম অংশটি নেই।
[6] বেশ কিছু গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে। দেখ-
The Positive Impact of the Grandchild-Grandparent Bond on Mental Health, evolvetreatment.com-https://tinyurl.com/2p878cry
Children grow up happier with grandparents by their side, wtvideo.com, June 19, 2019- https://tinyurl.com/2p9crt8r
What Happens When Grandparents Help Raise Children,Greater Good Magazine,November 20, 2020 - https://tinyurl.com/5n8v2acz
[7] [সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪]
[8] [সূরা আরাফ, আয়াত: ৯৬]
[9] ”[সূরা তাওবা, আয়াত: ১০৯]
[10] ”[সূরা নাহল, আয়াত: ৯৭]
[11] What's love got to do with it? - tinyurl.com/4h8n6hys
Arranged Marriages Can Be Real Love Connection, scientificamerican.com, March 11, 2010- tinyurl.com/4cpf4pdy
[12] (সূরা মায়েদা, ৫)