Published on

তুমি এক দূরতর দ্বীপ (চতুর্থ কিস্তি)

তো যা বলছিলাম তুমি যে বিয়ে করার উপযুক্ত হয়েছো, ম্যাচিউরড হয়েছো তার অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তুমি ফেইসবুকে বিয়ে নিয়ে অনর্থক লাফালাফি কম করবে। যারা এরকম করে তাদের নিয়ে মানুষজন হাসাহাসি করে, ইমম্যাচিউরড ভাবে। আর এই ইমম্যাচিউরড ছেলেদের হাতে কোন বাপ তাঁর মেয়েকে, কোন ভাই তার বোনকে তুলে দিবে, বলো? এভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিয়ে হয়না।

তোমার নিজের এই লড়াইয়ের কথা মনের মধ্যে গেঁথে নাও ভালোভাবে। ভুলে যেওনা কীভাবে সমাজ তোমাকে নির্বাসন দিয়ে রেখেছে, কতোটা কষ্ট,কতোটা দুঃখ বুকে নিয়ে তুমি দিন পার করছো। ভালোকরে গেঁথে নাও। কক্ষনো ভুলে যেওনা। তোমার অনাগত সন্তানদের এই কষ্টে পড়তে দিওনা। তাদের যৌবনের দুঃসময়ে তুমি বন্ধু হয়ে পাশে থেকো। অধিকাংশ বাবা মা, বাবা-মা হবার পরে নিজেদের কৈশোর, যৌবনের সংগ্রামরত দিনগুলোর কথা ভুলে যান, একান্ত আপন হয়েও মনের অজান্তেই জল্লাদের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। তুমি এই ভুল কোরোনা। সযত্নে মনে গেঁথো রাখো। যদি কোনো ডায়েরীতে লিখে রাখতে পারো তাহলে খুব ভালো হয়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত বাবা আর আমাদের মাঝে এক অদ্ভূত দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। মিটার কিলোমিটারের হিসেবে খুব বেশি দূরত্ব নেই কিন্তু তারপরেও মনে হয় বাবা ভূমধ্যসাগরের একপাশে আর আমরা অন্যপাশে। জীবনবাবু এই দূরত্বের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন... ‘এতো কাছে তবু কতো দূর...’।

একসময় যে বাবার সঙ্গে ক্রিকেট,রাজনীতি নিয়ে অকালপক্ক্বের মতো আলোচনা চলত, আমার ছোট্ট জীবনের ছোটো ছোটো সুখ,দুঃখ, টুকরো টুকরো অভিমান,আবদার ... আমার ভেতর আমার বাহির সবটাই ছিল তাঁর কাছে কাঁচের মতো স্বচ্ছ সেই বাবার কাছে আমি এখন প্রায় অপরিচিত এক মানুষ। স্বল্প পরিচিত প্রতিবেশির বা অন্য সেকশনের ক্লাসমেটদের মতো যাদের সঙ্গে দেখা হলে হাই হ্যালো করে কুশলাদি জানা যায়, কিন্তু বেশিদূর কথা গড়ায় না।চোখের সামনেই আমি কেমন বদলে গেলাম, কেমন অনাতিক্রম্য ব্যবধান তৈরি হয়ে গেল... মা, বোন,ছোটোভাই বা অন্য কারো সাহায্য ছাড়া যে দূরত্ব অতিক্রম করে বাবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব না।

এ বড় শক্ত ম্যাজিক। বাঙালী বাবাদের পুত্রস্নেহ, ভালোবাসা, তাঁদের গাম্ভীর্য আর ব্যক্তিত্বের কাছে প্রতিনিয়ত হেরে যায়। খুব কম সৌভাগ্যবান বাবারাই এই দেয়াল ভাঙতে পারেন। ঘাড়ে করে স্কুলে দিয়ে আসা, গলা জড়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া,ভাত তুলে খাওয়ানো বাবারাও ছেলের ব্যর্থতা আর দুঃখের প্রহরে কিছু দ্বিধা,কিছু সঙ্কোচ কিছু গাম্ভীর্য কাটিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে দুঃখ ভোলাতে পারেন না। ঘাড়ে হাত রেখে সাহস যোগাতে পারেন না।

আমরা ছেলেরাও কি ছেলে হিসেবে হেরে যাইনি? দুষ্টু ছেলেগুলো যখন আমার দুইটাকার সন্দেশ কেড়ে নিয়ে খেয়ে নিত, ওপরের ক্লাসের শুভ ভাইয়া যখন প্রায়ই আমাকে সারা দুপুর বল করিয়ে নিত কিন্ত এক ওভারও ব্যাট করতে দিতনা তখন আমি কি দৌড়ে গিয়ে বাবার কাছে নালিশ জানাতাম না? আজ যখন ‘জীবন’ আমাদের সাথে শুভ ভাইয়ার মতো বেঈমানি করে যাচ্ছে আমরা কেন বাবার কাছে নালিশ করতে পারিনা? কেন বাবার কাছে গিয়ে বলতে পারিনা বাবা আমি আর পারছিনা... ? কী আমাদের টেনে ধরে রাখে? কে সেই কালপ্রিট যে আমাদেরকে আমাদের বাবাদের থেকে এক ধাক্কায় অনেক দূরে সরিয়ে ফেলল?

এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের জেনারেশন গ্যাপ থাকবেই, থাকবে কিছুটা আড়াল, আড়ালের ফলশ্রুতিতে ভুল বোঝাবুঝি। নিপাতনে সিদ্ধ ব্যাপার এগুলো। কিন্তু বর্তমানে তিন চার বছরের ব্যবধানেই যেভাবে ব্যবধান গড়ে উঠছে সেখানে বাবাদের জেনারেশনের সঙ্গে (মায়েদের জেনারেশনের সঙ্গেও) ছেলেদের জেনারশনের দূরত্ব যেন অনেক আলোক বর্ষের হিসেব।

তাই হুট করে বাবা বা মাকে চমকে দিয়ে বিয়ের কথা না বলাই উচিত। এই আপাত অস্বস্তিকর আলোচনা করার টাইমিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ! তোমাকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় সঠিক কথা বলতে হবে। সঠিক সময়,সঠিক জায়গা,সঠিক কথা- এই তিনটি বিষয়ের একটি এদিক সেদিক হলে গিট্টু লেগে যাবার সম্ভাবনা আছে। মনে কর, বাবা অফিস থেকে বিদ্ধস্ত হয়ে রাতে ঘরে ফিরেছেন তখন গিয়ে যদি বল, তাহলে দুই একটা লাঠি তোমার পিঠে ভাংলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। একটু খেয়াল করতে হবে। তোমাকে এমন এক সময় এই কথাগুলো বলা শুরু করতে হবে যখন তোমারর বাবা-মায়ের মন ভালো থাকবে, শারীরিক ক্লান্তি বা অন্য কোনো কারণ তোমার হৃদয়ের আকুতি আর তোমার বাবা-মা’র মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে.

.

হুট করে বাসায় বিয়ের কথা না বলে বরং কিছুটা প্ল্যান করে নাও। মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে নাও। বাবা,মা, বড়ভাইয়া,বড়আপু যার সঙ্গে নির্ভয়ে, সাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারো, তাঁর কাছে যাও সময় এবং অবস্থা বুঝে। দু’রাকাত নামায পড়ে নিতে পারো। কিছু দান সাদকা করতে পারো। ইস্তেগফার করে নাও। (আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া) আলাদা বসিয়ে তাঁকে সব কথা খুলে বলো। তুমি বিয়ে করতে চাও,কেন চাও, কেন বিয়ে করা দরকার ইত্যাদি। মাথা ঠান্ডা রাখবে। তর্কে জড়াবেনা, সবচেয়ে বড় কথা লজ্জা পাবেনা। আসলে বাবা মা’কে যেয়ে নিজের বিয়ের কথা বলা বেশ লজ্জাদায়কই। যে করেই হোক এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে। শুরুর ধাপটাই কঠিন। একবার লজ্জা কাটিয়ে শুধু বিয়ে শব্দটা বলতে পারলে দেখবে বাকী আলোচনা খুব সহজেই আগাবে। ঢালু জায়গায় স্থির বলকে একটু ধাক্কা দিলেই বল গড়িয়ে অনেকদূর চলে যায়।

যদি নিজের বিয়ের কথা বাসার কাউকে বলতে না পারো, তাহলে খালা,ফুপি,মামা,দুলাভাই (মেয়েদের জন্য ভাবী), নানা,নানী,দাদা দাদীর হেল্প নিতে পারো। পারিবারিক বন্ধু, পাড়াতো চাচা,বড়ভাই এদেরও সাহায্য নিতে পারো। যদি কারো কাছেই মুখ ফুটে নিজের বিয়ের কথা বলতে না পারো তাহলে মেসেজ দিয়ে বলতে পারো। অনেকেরই বাবা মার সামনে বিয়ের কথা বলতে গেলে হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। গুছিয়ে কথা বলতে পারেনা, তাদের জন্য মেসেজিং (চিঠি টাইপ কিছু হতে পারে) খুব ভালো অপশন। মনের কথা সুন্দরভাবে পৌঁছানো যায় বাবা মার কাছে। আবারো বলি, লজ্জা করবেনা।লজ্জা করে আল্টিমেটলি কোন লাভ নেই। দেরি হয়ে যাবে শুভ কাজে। বিয়ের কথা তো একসময় বলতেই হবে বাসায়, বিয়ে তো করতেই হবে, নাকি?

অধিকাংশ মানুষই একটা ভুল করে বসে। বাবা মা বা অন্য কোনো আপনজনকে বিয়ের কথা বলতে গিয়েও বলেনা । আজ শেয়ার করবো, কাল শেয়ার করবো এভাবেই একদিন কাটিয়ে দেয়, দুই দিন কাটিয়ে দেয়। তারপর এক সপ্তাহ, তারপর কয়েক মাস, তারপর বছর। তুমি যদি এভাবেই আজ বলবো কাল বলবো করতে থাকো তবে আর বলা হবে না, শুধু সময় বাড়তে থাকবে। তাই একটা সুন্দর দিন ঠিক করো,আল্লাহ্‌র নাম নাও। আর ওইদিনই বাবা-মায়ের সাথে সব শেয়ার করো।

বাসায় বিয়ের কথা বলার পরেই অবধারিতভাবে তোমার দিকে AK-47 এর বুলেটের বেগে যে প্রশ্নগুলো ধেয়ে আসবে তার সম্মুখভাগেই থাকবে সেই চিরন্তন প্রশ্ন- বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কী?

দেখ, রিযিকের মালিক আল্লাহ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। বিয়ে করলে যে আল্লাহ রিযিকে বারাকাহ দেন, সন্দেহ নেই এই ব্যাপারেও। কিন্তু বাবা মা আত্মীয়স্বজনের বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কি প্রশ্নের উত্তরে যদি তুমি কুরআনের আয়াত আর উমার (রাঃ) এর উক্তি শুনিয়ে দাও

‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২}

উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুমা বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।’

তুমি যদি বল- রিযিকের মালিক আল্লাহ, আল্লাহই ব্যবস্থা করে দিবেন তাহলে তাদের রাজি করাতে বেগ পেতে হবে। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ বাবা মার ঈমানই এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কংক্রিট একটা প্ল্যান অফ একশন তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে তোমাকে।

মেয়েরা সাধারণত তাদের বাবা, বা ভাইয়ের বিশেষ আদরের হয়। মেয়েরা আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ মূল্যবান উপহার। দুনিয়ার দুঃখ,কষ্ট থেকে সযত্নে আগলিয়ে রাখেন তারা, যেন এতোটুকু কষ্ট তাদের মেয়ে তাদের বোন না পায়, যেন কোনো ক্লেদ কোনো গ্লানি তাদের স্পর্শ না করে। রাজা হতে না পারুক নিজে, কিন্তু প্রত্যেক বাবার কাছেই তার মেয়ে একজন রাজকন্যা। রাজকন্যাকে তারা কীভাবে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবেন? চাল নেই চুলো নেই এমন ছেলের হাতে তুলে দিলে তাদের রাজকন্যা কেমন থাকবে এই দুশ্চিন্তায় উদ্বিগ্ন হওয়া তাদের জন্য কী খুব অস্বাভাবিক কিছু? বিশেষ করে আল্লাহ্‌কে ভুলে যাওয়া চরম ভোগবাদী এই সমাজে ? তুমি আমার কথা শুনে অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলতে পারো রাসূলুল্লাহর (সাঃ) যুগে কি এমন হয়নি? কপর্দক, কুৎসিত ছেলের সঙ্গে কি অভিজাত সুন্দরী মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়নি?

হয়েছে ভাই। হয়েছে। এতোদূরে যেতে হবেনা, উসমানি খিলাফাতের আমলেও খিলাফাহর পক্ষ থেকেই বেকার যুবকদের বিয়ে দেওয়া হতো। আমাদের দাদা,বাবাদের আমলেও তো বেকার ছেলেদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে এখনকার অভিভাবকদের মতো কেউ অনাগ্রহ পোষণ করতো না।

কিন্তু ভাই দেখ, সমাজ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে এখন। ভোগবাদিতা জেঁকে বসেছে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল, পুত পবিত্রতা, শালীনতাবোধ, আল্লাহর আইন সবকিছুকেই জাদুঘরে পাঠিয়ে ইসলামকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, মিডিয়া প্রোপাগ্যান্ডার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের আবর্জনায় মুসলিমদের মস্তিষ্ক ভরে গিয়েছে (এগুলো নিয়ে পরে একসময় বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশা আল্লাহ)। সমাজ আর আগের মতো নেই।

আগেকার বাবারা নিজ উদ্যোগেই তাদের বেকার যুবকদের বিয়ে দিয়ে দিতেন, ছেলের বউকে খাওয়ানোর দায়িত্ব ছেলের ওপর এভাবে চাপিয়ে দিতেন না, আগেকার মেয়ের বাবারাও ছেলেদের ওপর এতোটা জুলুম করতেননা, শুধু চাকুরী থাকলেই হবেনা, সরকারি চাকুরী হতে হবে, বিসিএস ক্যাডার,পুলিশ হলে আরো ভালো, ঢাকায় ফ্ল্যাট থাকতে হবে, গাড়ি থাকতে হবে এইসব অদ্ভূত অদ্ভূত শর্তজুড়ে দিয়ে বিয়েকে জটিল করে ফেলতেন না। ছেলের এখন চাকুরী নেই,ছেলে এখন পড়াশোনা করছে তো কী হয়েছে, একদিন নিশ্চয়ই চাকুরী হবে, আর মেয়ে তো আমার না খেয়ে থাকবেনা, মারা যাবেনা, বেয়ায় সাহেব দেখে রাখবেন। ( শ্বশুরবাড়িতে নারী নির্যাতন নিয়ে কিছু কথা আছে। সেগুলো নিয়েও পরে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে আছে ইনশা আল্লাহ)

তুমি নিজের বাবা মা, এবং মেয়েদের বাবা মার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলা বন্ধ করে বরং দেখ কেন বিয়ে কঠিন হয়ে গেল। কীভাবে বিয়েটাকে সহজ করা যায়। যখন তাওহীদ, ঈমানভিত্তিক সমাজ ছিল, যখন আল ওয়ালা ওয়াল বারাহর ওপর আমল জারি ছিল, যখন খিলাফাহ ছিল, যখন মুসলিমদের একজন নেতা ছিলেন, যখন মুসলিমরা পাশ্চাত্যের মিডিয়া প্রোপাগ্যান্ডার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলোনা বা পাশ্চাত্য ঠিক সুবিধে করে উঠতে পারেনি মুসলিমদের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে, যখন মানুষের বানানো তন্ত্র মন্ত্রের মাদকে মুসলমান বেহুঁশ হয়ে পড়েনি তখন বিয়ে সহজ ছিল।

ভাই, তুমি গভীরভাবে ভাবো, চিন্তা করো, এগুলো নিয়ে পড়াশোনা করো। কেন তোমার বুকে আজ বর্ষার হাহাকার? কেন অদেখা তার মুখে শ্রাবণের অন্ধকার? কেন তোমাদের মাঝে এই মানুষের দেয়াল ?

মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ‘বিয়ে করে বউকে খাওয়াবি কি’ এই প্রশ্নের একটা কনক্রিট উত্তর তোমাকে দিতে হবে। সেই সাথে দেন মোহরানার টাকা কোথায় পাবে, কোত্থুকে বিয়ের খরচ জোগাড় করবে সেগুলোর উত্তরও তোমার জানা লাগবে।

একারণেই আমরা বলি, তুমি ফেইসবুকে সারাদিন হাহুতাশ না করে টাকা রোজগারের হালাল কোন উপায় খুজে বের করার চেষ্টা কর। ‘বিয়ে করতে হবে’ এটুকু তোমার উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কী করা যেতে পারে, গন্তব্য পৌছুতে হলে কী করতে হবে তার প্ল্যান শুরু কর। একটু চোখকান খোলা রাখলেই দেখবে ছোটোখাটো ব্যবসা করার অনেক রাস্তা আছে । আর বেকারের কলিজার টুকরা, অন্ধের যষ্ঠী ‘টিউশনি’ তো আছেই। ব্যবসা করো, টিউশনি করো। বিয়ের জন্য টাকা জমাও। আমার সাথে দুইজন ছেলে পড়তো। ভার্সিটির চার বছরে তারা টিউশনি করে ব্যাংকে প্রায় লাখ পাঁচেক টাকা জমিয়েছিল।

ভাই দেখ, বাচ্চা পোলাপান বিয়ের উপযুক্ত নয়। এদের একমাত্র কাজ মায়ের আঁচল ধরে কোনো কিছুর জন্য জিদ ধরা। ‘আমি বিয়া করমু, আমার বউ আইনা দাও তোমরা’ বাসার লোকদের কাছে এই যদি হয় তোমার এপ্রোচ, তাহলে আমি বলব, তুমি বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দাও। বাজার থেকে ফিডার কিনে এনে ফিডার খাও। বউ কি মেলায় কিনতে পাওয়া কোনো খেলনা, যে বাবা মার কাছে জিদ ধরবা আর তা তোমাকে এনে দিবেন? নিজের বউয়ের সব খরচ বাবার কাছ থেকে নিতে তোমার লজ্জা করা উচিত, তোমার পৌরুষে আঘাত লাগা উচিত।

আল্লাহ্‌র ওয়াদা যে কোনো যুবক যদি নিজের চরিত্র রক্ষার জন্য বিয়ে করতে চাই তাহলে তিনি তাঁকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। তুমি টাকা রোযগারের আন্তরিক করো, চেষ্টা কর, দেখবে আল্লাহ কীভাবে তোমার রিযিকে বারাকাহ ঢেলে দেন , কীভাবে সবকিছু সহজ করে দেন। আল্লাহ্‌র ওয়াদা সত্য। কিন্তু তোমাকে তো চেষ্টা করতে হবে।

তুমি যদি বাসার মানুষদের সাথে এভাবে শুধু জিদ ধরে থাকো তাহলে ব্যাপক সম্ভাবনা আছে যে তুমি বিয়ে করতে পারবানা। তারা তোমার কথা তারা হেসে উড়িয়ে দিবে, তোমার সাথে রাগারাগি করবে, তোমাকে নিয়ে কৌতুক করবে। ভাববে এটা বোধহয় পিচ্চি ছেলের নতুন কোনো শখের আবদার। কিছুদিন পরে আবার ভুলে যাবে।

যেই সমাজে চাকুরী বা ব্যবসা আছে এমন ছেলেদেরও বিয়ে করা কঠিন হয়ে গিয়েছে, কণ্যার বাপদের মন কিছুতেই গলছে না, সেই সমাজে তোমার মতো একজন বেকার,ছাত্রের হাতে কোন ভরসায় একজন বাবা তার মেয়েকে তুলে দিবেন? শুধু আবদার ধরলেই তো হবেনা,জিদ করলেই তো হবেনা, বাস্তবতাও বুঝতে হবে।

ধরো তুমি বিয়ের জন্য টাকা জমাতে লাগলে, টিউশনি, ব্যবসা শুরু করলে তাহলে কী হবে?

এক. বিয়ের ফান্ডে টাকা জমবে। পরে এটি বেশ কাজে লাগবে। বিয়ের পর বউয়ের খরচ দিতে পারবে।

দুই. তোমার বাবা মা যখন দেখবে যে তুমি এভাবে কষ্ট করছো, সপ্তাহে দুইদিন রোযা রাখছো তখন তাঁরা বুঝতে পারবেন যে না তুমি আসলেই বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস। তুমি বিয়ে করতে চাও, অন্তর থেকেই চাও। বাবা-মা, বড় ভাই-বোনদের কাছে তাদের সন্তান, তাদের ভাই কখনো বড় হয়না, সেই গোলগাল নাদুস নুদুস পিচ্চিই থাকে । তোমার এই টিউশনি করা,ব্যসসা করা দেখে তাদের ভুল ভাংবে। তুমি আর সেই পিচ্চিটি নও, তুমি বড় হয়েছো, ম্যাচিউরড হয়েছো সেটা তাঁরা উপলব্ধি করবেন। দেখবে, তারা তোমার বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। সবাই না হলে এক দুইজন অন্ততপক্ষে হবেন। এতেই তোমার বিয়ের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।

তিন. মেয়ের ফ্যামিলি কিছুটা হলেও তোমার ওপর ভরসা পাবেন। তাঁরাও বুঝতে পারবেন যে তুমি দায়িত্ব নেওয়া শিখেছো, তাদের মেয়ের দায়িত্ব তুমি নিতে পারবে। তোমার সঙ্গে বিয়ে দিলে তাদের মেয়ে অন্তত জলে ভেসে যাবেনা।

চলবে ইনশা আল্লাহ

আগের কিস্তিগুলো-

প্রথম কিস্তি

দ্বিতীয় কিস্তি

তৃতীয় কিস্তি

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ Early Marriage Campaign ফেইসবুক গ্রুপ