- Published on
নীড়ে ফেরার গল্প (তৃতীয় কিস্তি)
চার. আমি ১জন হতভাগ্য পর্ন আসক্ত ব্যাক্তি, আপনাদের পেইজটা পেয়ে ভাল লাগছে, তাই কিছু কথা শেয়ার করতে চাই এবং উপদেশ/সাহায্য চাই। . আমি ক্লাস এইট থেকে পর্ন দেখি এবং হস্তমৈথুন করি, প্রথম দিকে তেমন দেখতাম না বা করতাম না।। মাসে ২/৩ বার।। ইন্টারে ওঠার পর কিছুটা বেরেছে, ইন্টার কমপ্লিট করার পর প্রচুর পর্ন এবং হস্তমৈথুনে আসক্ত হয়ে পড়ি। . আমি এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে, বয়স ২২। আমি অনেকবার আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছি যে আর এসব দেখবোনা আজকেই শেষ, আর হস্তমৈথুন করবনা আজকেই শেষ, কিন্তু আমি শয়তানের প্ররোচনায় বারবার ওয়াদা ভঙ্গ করেছি। . এসব বাদ দিয়ে নামাজও শুরু করতাম কিন্তু ১সপ্তাহ বড়জোর যেতে না যেতেই আবার আসক্ত হয়ে যেতাম।গত ২বছরে প্রচুর পর্ন দেখেছি এবং হস্থমৈথুন করেছি, বুজতাম এগুলা ভালোনা, নিজের জন্য ক্ষতি কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বের হতে পারছিলাম না। . আমি চাইলে অনেক শারীরিক সম্পর্ক করতে পারতাম, যেমন ধরুন আমার ১ দুঃসম্পর্কের ভাবি। সে আমাকে ডিরেক্ট জিনা করার প্রস্তাব দিয়েছিল কিছুদিন আগে। কিন্তু আমি ডিরেক্টলি না করে দিয়েছি, তাছাড়া আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল। চাইলে ওর সাথেও জিনা করতে পারতাম কিন্তু আমি তা করিনি, অনেক ইচ্ছা হতো কিন্তু জিনা করিনি। অনেক সুযোগও ছিলো কিন্তু করিনি। কারণ আমি জানি জিনা খুব খারাপ গুনাহ, এসব থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারলেও পর্ন আর হস্তমৈথুনের মত গুনাহ থেকে নিজেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারছিলাম না। . পর্ন দেখলে সেক্স করার অনেক ইচ্ছা হতো কিন্তু তা কখনোই করিনি। সবসময় হস্তমৈথুনর মাধ্যমেই নিজেকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছি। অবশেষে আপনাদের পেইজটি পেলাম এবং ‘মুক্ত বাতাসের খোঁজে’ বইটি সংগ্রহ করলাম, বইটি প্রায় অর্ধেকের মত পড়েছি, কালকের মধ্যে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ।। বইটি পড়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।। . আল্লাহর অশেষ রহমতে এই মাসের ৮তারিখ শেষ বার পর্ন দেখেছি এবং হস্তমৈথুন করেছি, ৯তারিখ থেকে আজকে পর্যন্ত ৫ওয়াক্ত সালাত আদায় করতেছি।। ঐসব থেকেও বিরত থাকতে পারছি যা গত ২বছরে সর্বোচ্চ।আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছি এসব আর দেখবোনা ও করবোনা। . আপনাদের বইটি পড়ে খুব ভালো লাগছে।কিন্তু ভয় হয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন তো!! আমার আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আছে তিনি অনেক মহান দয়ালু, আমি ভাল হলে তিনি হয়তো ক্ষমা করতেও পারেন।।
পাঁচ.
আমি এই পাপ কাজটার সাথে প্রথম জড়িয়ে পড়ি ১৫ কিংবা ১৬ বছর বয়সে বা তার কম বেশি হবে। সঠিক বয়সটা ঠিক মনে পড়তেছেনা।প্রথম প্রথম খুব একটা করতাম না,দুবার একবার করতাম।তারপর আস্তে আস্তে এটা আমার নেশায় পরিণত হয়ে গেল।সিগারেট যেমন মানুষ একটু সুযোগ পেলেই খেত আমিও সুযোগ পেলেই এই নিকৃষ্ট কাজটায় জড়িয়ে যেতাম।এটা ধীরে ধীরে আমাকে পরিবার,সমাজ,বন্ধুবান্ধব থেকে আলাদা করে দিতে লাগল। . সবসময় একা একা থাকতে ভালবাসতাম।কারও সাথে মিশতাম না,কোথাও যেতেও ভাল লাগতনা,বন্ধুরা যখন বিভিন্ন জায়গায় দলবেঁধে ঘুরতো আর আমাকেও নিয়ে যেতে চাইতো তখন আমি বিভিন্ন অজুহাতে তাদের নিকট থেকে এক রকম পালিয়ে আসতাম।কোন কিছুতেই মন বসাতে পারতাম না,না পড়া না খেলাধুলা।প্রতিবারই করার পর প্রতিজ্ঞা করতাম যে এইবারই শেষ বার আর কখনও করবনা,আর কখনও পর্ন দেখবনা,কিন্তু কোন লাভ হয়নি,আবার পর্ন দেখেছি আবার সেইম কাজ করেছি।নিজের কাছে খারাপ লাগতে শুরু করল,কোনভাবেই এই পাপ থেকে সরে আসতে পারছিলাম না।নামাজ পড়তাম কিন্তু কোনভাবেই নামাজে মনোযোগ বসাতে পারতাম না,যোহর পড়লে আসর পড়তাম না,আর ফজর সে তো আমার কাছে ছিল সোনার হরিণ।নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে অপরাধী মনে হত।এইভাবে কয়েক বছর কেটে গেল। এর মাঝেও হয়তো আমি কোন ভাল কাজ করেছিলাম,যার ফলে ২০১৩ সালে আমি আল্লাহর রহমতে ভাল একটা চাকরিতে জয়েন করলাম।কিন্তু এখানে এসে আমার আরও পর্নের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেল।কারণ একটাই, চাকরিতে জয়েন করার পর টাকা পয়সার তেমন অভাব ছিল না,জিবি জিবি এম্বি কিনে পর্ন দেখতাম আর নিকৃষ্ট কাজটা করতাম।এভাবেও কয়েক বছর কেটে গেল।লাস্ট কয়েক মাস আগে ফেসবুকে দ্বীনি পরামর্শ (https://www.facebook.com/groups/naseehah/) নামে একটা গ্রুপের দেখা পাই। . এই গ্রুপের সাথে যারা জড়িত আছেন সবাইকে আল্লাহ তায়ালা দীর্ঘজীবী করুক। এই গ্রপটা হয়তো আল্লাহর পক্ষে থেকে আমার জন্য ছিল বিশেষ নিয়ামত।এই গ্রুপের প্রতিটা পোস্ট আমি খুব গুরুত্ব সহকারে পড়তে লাগলাম। আমার দিল নরম হতে লাগল,আমি কি করেছি এতদিন এইসব?নিজের খুব খারাপ লাগতে লাগল,প্রতিজ্ঞা করলাম আর জীবনে এই খারাপ কাজ করব না, করব না, করব না,এবার হয়তো আমি প্রতিজ্ঞাটা একদম মন থেকে করেছিলাম তাই হয়ত আল্লাহ তায়ালা আমাকে হেদায়েত দান করেছেন।এর ফাঁকে পেয়ে গেলাম "মুক্ত বাতাসের খোজে" গ্রুপটার (https://www.facebook.com/groups/lostmodesty.volunteers/)। এই গ্রুপের সাথে যারা জড়িত আছে,আল্লাহ তায়ালা তাদেরকও দীর্ঘজীবী করুক। . এই গ্রুপের মাধ্যমে পেয়ে গেলাম মুক্ত"বাতাসের খোজে" বইটা,মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর একটা বই। বইটা পড়ার পর আরও কঠিন প্রতিজ্ঞা করলাম।নামাজ শুরু করে দিলাম,৫ ওয়াক্ত জামাতের সাথে,হয় তো কাজের জন্য ২/১ ওয়াক্ত নামাজ জামাত মিস হয়ে যায়,কিন্তু সর্ব্বোচ চেষ্টা করেছি।তাহাজ্জুদ প্রতি রাতেই পড়ার চেষ্টা করলাম,তাহাজ্জুদ পড়ে প্রতি রাতেই আল্লাহর কাছে কাঁদলাম,সাহায্য চাইলাম, নিজের নজরকে কন্ট্রোল করতে শুরু করলাম,ফোন মেমরি থেকে সকল ভিডিও ডিলিট করে দিলাম,ইউটিঊবে সব ইসলামিক চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে নিলাম,কাজের ফাঁকে ফাঁকে আল্লাহর কাছে তওবা করলাম, হাঁটাহাঁটির সময়েও আল্লাহর কাছে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে ক্ষমা চাইতে থাকলাম,শুয়ে আছি তখনও,সবসময় আল্লাহ যিকির করতেই থাকলাম। . যার ফলে আল্লাহ হয়তো আমাকে হেদায়েত দান করেছেন।আর প্রায় ৪ মাস হয়ে গেল আমি এইসব থেকে দূরে আছি।আর এখন নামাজে অনেক মজা পাই,এক ওয়াক্ত নামাজ মিস হয়ে গেলে বুক ফেটে কান্না চলে আসে।এখন নিজেকে ছোট বাচ্চাদের মত মনে হয়,ছোট বাচ্চারা যেমন সব সময় হাসিখুশি থাকে আমিও তেমনই থাকি,কাজের ভিতর মজা পাই,সবার সাথে মিশে গল্প গুজব করে সময় কাটাই,আল্লাহকে ডাকি,সময়মত নামাজ পড়ি। . জানিনা আমি কতটুকু পেরেছি,আর এইভাবে কতদিন থাকতে পারব,তবে আমি মনে করি আমি পেরেছি আল্লাহর বিশেষ রহমতে। . তাই ভাই আসুন, আমরা যারা এখনও এই খারাপ কাজের সাথে জড়িত আছি আজকে এই মুহুর্ত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এই খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসি।বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকি,দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি,সম্ভব হলে তাহাজ্জুদ পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই কান্নাকাটি করি।জান্নাত,জাহান্নাম,সম্পর্কে বেশি বেশি জানার চেষ্টা করি।দিনে অত্যন্ত কয়েকবার মৃত্যুকে স্মরণ করি।বিভিন্ন ইসলামিক আলোচনা শুনি। . আল্লাহ নিশ্চয় আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন,কারণ আমরা আল্লাহ কে যত ভালবাসি আল্লাহু তার চেয়েও অনেক বেশি আমাদের কে ভালবাসেন।আল্লাহ নিজেও চান না তার বান্দারা জাহান্নামে যাক। ভাই আমাদের হাতে কত সময় আছে আমরা কেউ জানিনা,তাই যতটুকু সময় পাই কাজে লাগাই,আল্লাহর পথে ফিরে আসি সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে।আমি পেরেছি ভাই,আপনিও পারবেন আমরা সবাই পারব ইনশা আল্লাহ। . ভাই, আমরা সবাই একদিন মৃত্যু বরণ করব আগে আর পরে,তাই মৃত্যু আসার আগেই নিজেই প্রস্তুত করে নেই পরকালে শান্তির আশায়। পরকালে প্রতিটা কাজের জন্যই আমাদেরকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে,তখন ফাকি দেয়ার কোন সুযোগ নাই,লুকোচুরির কোন সুযোগ নাই ভাই,তাই আসুন আমরা দুনিয়াতে এমন কোন কাজ করব না যাতে আল্লাহর কাছে লজ্জিত হই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক(আমিন)। . চলবে ইনশা আল্লাহ ... আগের পর্বগুলো-
নীড়ে ফেরার গল্প (প্রথম কিস্তি)