Published on

নীড়ে ফেরার গল্প (দ্বিতীয় কিস্তি)

আসসালামু আলাইকুম।

আমি মফস্বলে বেড়ে ওঠা একজন সহজ সরল ছেলে।সারাদিন হই হুল্লোড় করে ঘুরতাম,বন্ধুদের সাথে খেলতাম।আব্বাকে অনুসরণ করে মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তাম।সবে মক্তবে প্রথম কোরআন খতম দিয়েছি।আমার বয়স তখন তের বছর।ক্লাস সিক্স এ পড়ি।পর্নোগ্রাফি কি জিনিস আর হস্তমৈথুন কি জিনিস কিছুই বুঝতাম না।সেক্স কি জিনিস তাও বুজতাম না।অন্যরা এসব নিয়ে কথা বললে প্রচন্ড লজ্জা পেতাম।

একদিন আমার এক ভাগিনা (আমার থেকে দুই বছরের বড় হবে) বেড়াতে এসেছে আমাদের বাড়িতে।হেমন্তকালের প্রথমদিক,এমনিতেই আমার শরতকাল আর হেমন্তকাল ভালো লাগে।আকাশে সারি সারি মেঘের ভেলা,মাঠে সবুজ ধান আর ঝিরিঝিরি বাতাশের আবেশ!ঘর থেকে বেরুলেই মন জুড়িয়ে যায়।মাঠে ধানী জমির আইল ধরে হেটে বেড়াতাম,এখনো সময় পেলে ঘুরি।আমি ভাগনাকে নিয়ে চললাম ক্ষেতের আইলের দিকে।হাটছি আর আল্লাহর অপরুপ সৃষ্টি উপভোগ করছি।একটি জমিতে ধান অনেক লম্বা হয়েছে,এমন স্থানে এসে ভাগনা আচমকা বসে পড়ল,সাথে সাথে আমাকেও টেনে বসালো।বসে সে তার প্যান্ট খুলে ফেলল। আমি দেখেই বললাম তুমি এ কী কর? আমাকে বলল, ‘দেখ!’ সে হস্তমৈথুন করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম সাদা সাদা ঘন কি একটা জিনিস বের হয়ে আসল। আমি তো দেখে অবাক! সে বলল যদি শরীর জেগে যায় আর মেয়ে না পাস তাহলে এভাবে চাহিদা মেটাতে হয়’।

আমার তখন কৌতুহলী মন।আমি অনেক শরম পেয়েছি কিন্তু মনে মনে এ রকম করার কৌতুহল বেড়েই চলল।এক সপ্তাহ পর আমি ভাবলাম আচ্ছা একবার করেই দেখি কি রকম লাগে!এই বলে হস্তমৈথুন শুরু করলাম।প্রায় দশ মিনিট যাবত এই নাফরমানি করে অবশেষে কি রকম যেন একটা তৃপ্তি পেলাম,এক ধরনের ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেল।

.এরপর থেকে যে শুরু হলো আমার নিয়মিত হস্তমৈথুন!কোনদিন একবার,কোনদিন দুইবার,তিন বার,চারবার পর্যন্ত করতাম।ক্লাস নাইনে উঠার পর চাচাতো ভাইয়ের মোবাইল আসল বিদেশ থেকে।শুরু হলো মোবাইলে পর্ন দেখা আর হস্তমৈথুন করা।পর্ন দেখে কোনদিন আমি ছয়বার পর্যন্ত হস্তমৈথুন করেছি!

.কলেজে উঠার পর খেয়াল করলাম আমার শরীর ভেঙ্গে গেছে,স্মৃতিশক্তি কমে গেছে,কানে কম শুনি,চোখে কম দেখি।কিন্তু হস্তমৈথুনের হার বেড়েই চলল।সেই তের বছর বয়স থেকে শুরু হয়েছিল,আজ আমি ২৪ বছরের যুবক।এই বারোটা বছর আমি একটানা হস্তমৈথুন করেই গেছি!

.কত বড় গোনাহগার যে হয়েছি! আল্লাহ.........যে আমি একসময় ফজরের নামাজের জন্য রাত তিনটায় মসজিদে যেতাম একা একা,সে আমি একটানা একমাস কিংবা তার থেকেও বেশি সময় মসজিদে যাইনি শুধু জুমার নামাজ ছাড়া!এক সময় বোধোদয় হলো হস্তমৈথুন ছাড়ার।গত দুইটা বছর ধরে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।ফেসবুকে একদিন একটা গ্রুপ দেখলাম"নাসিহাহ-দ্বীনি পরামর্শ"।গ্রুপে এড হলাম।গ্রুপের প্রতিটা পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়তাম আর আমল করার চেষ্টা করতাম।

.এর মধ্যে আমার মেজ বোন মারা গেলেন।আমি আরো মুষড়ে পড়লাম।ভেবে দেখলাম দুনিয়া দুই দিনের।তরতাজা আমার বোন যদি মারা যেতে পারেন তাহলে আমার বাঁচার কোন নিশ্চয়তা আছে?মারা গেলে সাথে নিয়ে যাবো কী?নামাজ কালামে মনোযোগী হলাম।কিন্তু হস্তমৈতুনের অভ্যাস ছাড়তে পারছিলাম না।ঠিক তখনি আমার কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে আসল গ্রুপের একটি পোস্ট-হস্তমৈতুনের কুফল ও তার থেকে মুক্তির উপায়।সেখানেই দেখতে পাই মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটির নাম।সাথে সাথেই অর্ডার করি।পুরো বইটি পড়ে শেষ করি।পড়ার পর মনে হলো এতদিন আমি যা করেছি সবই ভুল,পাহাড় পর্বত সমান গুনাহ আমি করে ফেলেছি!কিন্তু আর না।আমি মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি আর করব না এসব।

.আগে প্রচুর হতাশ হতাম,এখন আর হতাশাবোধ করি না।আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে কাঁদি।রাহমানুর রাহীম আল্লাহ আমাকে হেদায়াত নসীব করেছেন।প্রায় তিনমাস যাবত আমি হস্তমৈথুন আর পর্নোগ্রাফি থেকে দুরে আছি।আমি শিউর আল্লাহ আমার এই গুনাহ রহমতে ভরপুর করে দিবেন।যাদের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে তারা হলেন ঐ বড় ভাই যিনি গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলেন আর মুক্ত বাতাসের খোঁজে বইটি যারা লিখেছেন।আমি ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করতে পারব না।আমার অন্তর এমন কি আমার হাড়ে ও দোআ দিবে এর জন্য।যারা মানুষকে পাপ কাজ থেকে বাঁচাতে এরকম একটি বই লিখেছেন।নিশ্চই কিয়ামাতের দিন এর উত্তম প্রতিদান পাবেন।ইনশাআল্লাহ।

.এখন আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি,কোরআনুল কারীমের একটা খতম ও ধরেছি।প্রতি সপ্তাহে একটা রোজা রাখি।আগে ফেসবুকে অশ্লীল পোস্ট দিতাম,এখন তাও দেইনা।আমি বেরিয়ে পড়েছি মুক্ত বাতাসের খোঁজে।দোআ করবেন আল্লাহ যেন আমাকে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানার এবং ইবাদাত করার তৌফিক দান করেন।আর ইসলামের ছায়াতলেই কালিমার সহিত যেন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি।

আমীন।

পড়ুন-

নীড়ে ফেরার গল্প (প্রথম কিস্তি): https://bit.ly/2xbUIZ0

ইনবক্স থেকে: https://bit.ly/2QlBdpD