- Published on
নীড়ে ফেরার গল্প
১৮ বছরের এক তরুণ ।
সদা হাস্যোজ্জল ।
কাউকে বুঝতে দেয়না এই হাসিমুখের আড়ালে কতটা কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে সে।
কতটা ঘৃণা সে করে নিজেকে ।
বহুদিন আগে সে করেছিল এক ভুল – মাস্টারবেশন আর পর্ন মুভির অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়ে ।তারপর কীভাবে সেই অন্ধকার অভিশপ্ত জীবন থেকে বেরিয়ে আসলো সে , শ্বাস নিল মুক্ত বাতাসে?
...... আমার যখন ১৩ বছর বয়স তখন একদিন হটাৎ করেই মাস্টারবেশন বিষয়টা আবিষ্কার করে ফেললাম । প্রথম প্রথম আমি জানতামই না এটি খুব খারাপ।মাঝে মধ্যেই এটা করতাম । মাস দুয়েকের মধ্যে আমি মাস্টারবেশনে পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেলাম । প্রতিদন একবার তো বটেই , মাঝে মাঝে তিন চার বার করে মাস্টারবেট করতাম ।
আমি ছোটবেলা থেকেই ভদ্র ছেলে ছিলাম, যাকে বলে ‘গুড বয়’। মেয়েদের সবসময় সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতাম । আমার পরিবার থেকেও আমাকে এটাই শেখানো হয়েছিল । কিন্তু মাস্টারবেশনে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর আমার মধ্যে আমূল একটা পরিবর্তন এসে গেল এবং সেই পরিবর্তন যে নেতিবাচক সেটা বলাই বাহুল্য। আমি মেয়েদেরকে অন্য চোখে দেখা শুরু করলাম । আমার আশেপাশের মেয়েদের যেমন আমার ক্লাসমেট, প্রতিবেশিনী, স্কুলের ম্যাম এদের নিয়ে আমি সেক্স ফ্যান্টাসিতে ভুগতাম । আমার এই ফ্যান্টাসি গুলো এতটাই জঘন্য ছিল যে সেগুলো মনে হলে আমার এখন বমি আসে ।আমি অবাক হয়ে ভাবি , কীভাবে আমি,এই আমি এত বাজেভাবে চিন্তা করতাম!
আমি প্রত্যেকবার মাস্টারবেট করার সময় এইসব মহিলাদের নিয়ে চিন্তা করতাম । পত্রিকার বিনোদন পেইজ, ম্যাগাজিনের মডেল , নায়িকাদের ছবি, মিউজিক ভিডিও আমাকে বেশি বেশি মাস্টারবেট করতে বাধ্য করত ।
এভাবে দু’বছর চলে গেল । মাস্টারবেট শুরু করার পূর্বে আমি খুবই এনারজেটিক ছেলে ছিলাম । বিভিন্ন আউটডোর স্পোর্টসে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতাম । কিন্তু আস্তে আস্তে আমি এসবে উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম এবং একসময় খেলাধুলা বলতে গেলে ছেড়েই দিলাম । আমি সবসময় দুর্বলতা অনুভব করতাম । আমার শরীরের ওজন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে শুরু করল । শুরুর দিনগুলোতে মাস্টারবেশেন আমি প্রচুর মজা পেতাম। কিন্তু এই সময়টাতে প্রতিবার মাস্টারবেট করার পর আমার মধ্যে প্রচন্ড খারাপ লাগা কাজ করত । আদিগন্ত বিস্তৃত বিষন্নতা আমাকে গ্রাস করে ফেলত ।
আমি ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করলাম মাস্টারবেশন আমার জন্য ক্ষতিকর , আমার এটা ছাড়া উচিত । কিন্তু আমি কিছুতেই ছাড়তে পারছিলাম না ।নিজেকে প্রচুর পরিমাণ ঘৃণা করতাম ।
১৮ বছর বয়সটা আমার এই ছোট্ট জীবনের সবচেয়ে কালো অধ্যায় । আমি এই সময়টাতে দিনে প্রায় ২/৩ বার মাস্টারবেট করতাম । পথে ঘাটে মেয়েদের টাইট টাইট পোশাক আশাক, তাদের চলাফেরা , অঙ্গ ভঙ্গি, পত্রিকার বিনোদন পেইজ , ম্যাগাজিনের নায়িকাদের খোলামেলা ছবি, আইটেম সং আমাকে পাগল করে তুলতো । আমি যেন একটা পশুতে পরিণত হয়ে যেতাম । মনে হত এখন ,এই মুহূর্তে যে কোন মূল্যে আমার একটা শরীর চাই;নারীর শরীর , হোক সে রাস্তার পতিতা ।
১৩ বছর বয়স থেকে আমি মাস্টারবেশনে অভ্যস্ত হলেও আমার সৌভাগ্য আমি তখনো পর্নমুভিতে আসক্ত হইনি । ১৮ বছর বয়সে এক বন্ধুর মাধ্যমে আমি ‘চটির’ খোঁজ পেয়ে যাই ।রাত জেগে , ক্লাসের পড়া বাদ দিয়ে , এমনকি ক্লাসেও লুকিয়ে লুকিয়ে চটি পড়তাম এবং অতি অবশ্যই প্রত্যেকবার চটি পড়ার পর মাস্টারবেট করতাম । এমন বাজে অবস্থা হয়েছিল যে আমি রমাদান মাসে রোজা রাখা অবস্থাতেও চটি পড়তাম এবং মাস্টারবেট করতাম । আমার পড়াশোনা শিকেয় উঠলো , স্বাস্থ্য ভয়ানক ভাবে ভেঙ্গে পড়লো,চুল পড়তে শুরু করলো,সেই সঙ্গে ভয়ানক মাথা ব্যাথা।
চটিগল্প আমার মানসিকতা একেবারেই নষ্ট করে দিয়েছিল । আমি ক্লাসের ম্যাম , বাসার কাজের মেয়ে , প্রতিবেশিনী, ক্লাসের সহপাঠিনী, এমনকি আমার অনেক মেয়ে কাজিন, ফুফু, মামী এদেরকে নিয়েও সেক্স ফ্যান্টাসিতে ভুগতাম । চটি গল্পে পড়া কাহিনী গুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চিন্তা করতাম । আমার আশ পাশ দিয়ে কোন মেয়ে গেলেই আমি তাকে নিয়ে বাজে চিন্তা করা শুরু করতাম । আমার আশে পাশের কোন মেয়েই আমার ফ্যান্টাসির নায়িকা হওয়া থেকে রেহাই পেত না ।
অনেক আগে থেকেই আমাকে বিষণ্নতা পেয়ে বসেছিল, এবার যেন বিষাদসিন্ধুতে হাবুডুবু খেতে থাকলাম। বিষণ্নতা দূর করার উপায় হিসেবে প্রচুর গান শুনতাম । কিন্তু এতে অল্প কিছু সময় ভালো লাগলেও পরে আবার ভয়াবহ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে পড়তাম ।
এই ভয়াবহ সময়টাতে এমন একজনকে আমার পাশে দরকার ছিল যে আমার সব কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনবে ,আমার কষ্ট গুলো ভাগ করে নিবে , আমাকে সাহায্য করবে এই অভিশপ্ত জীবন থেকে বের হয়ে আসতে । কিন্তু লজ্জার কারণে এবং আমার এই ভয়াবহ অন্ধকারের গল্প শুনলে আমাকে কতটা ঘৃণা করবে এই ভেবে আমি কাউকে কিছু বলতে পারতাম না । সবার সঙ্গে হাসিমুখে চলতাম । কাউকে বুঝতে দিতাম না এই ১৮ বছরের ছেলেটার জীবন কতটা অভিশপ্ত , প্রত্যেকটা দিন তার হৃদয়টা কিভাবে কুরে কুরে খাচ্ছে মাস্টারবেশন আর চটি নামক অভিশাপটা ।
এর কিছুদিন পর আমি পর্ন মুভিতে আসক্ত হয়ে গেলাম । প্রথম দিকে নারী পুরুষের পশুর মত যৌন মিলন দেখে আমার বমি আসতো । কিন্তু কয়েকদিনের ভেতরেই আমার কাছে এগুলো স্বাভাবিক হয়ে গেল । সফটপর্ন ছেড়ে আমি ধীরে ধীরে হার্ডকোর পর্ন দেখা শুরু করলাম ।
জীবন আমার কাছে অসহ্য মনে হতো । নিজেকে প্রচুর পরিমাণ ঘৃণা করতাম । সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে চাইতাম । চাইতাম এই অন্ধকার কলুষিত জীবন থেকে বেরিয়ে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে।
এক দেড় বছর পার হয়ে গেল।আমি মাস্টারবেশনে তখনো আসক্ত , পর্ন দেখা বন্ধ করার জন্য প্রতিনিয়ত লড়ি নিজের সাথে এবং পরাজিত হই । হঠাৎ একদিন আপনাদের লিখা গুলো চোখে পড়লো ( লস্ট মডেস্টি ব্লগের লিখা) । আমি যেন এক অমূল্য রত্ন ভান্ডারের সন্ধান পেলাম । আপনাদের লিখা আমাকে ভয়ানক ভাবে প্রভাবিত করল । মাস্টারবেট করার ইচ্ছে জাগলেই আপনাদের লিখা গুলো পড়তাম । আপনাদের কথা মতো প্রচুর পরিমাণ দু’আ করতাম আল্লাহ্ (সুবঃ)’র কাছে । একটা টার্গেট ঠিক করে নিয়েছিলাম – আগামী এক সপ্তাহ ইনশা আল্লাহ্ পর্ন মুভি দেখবনা , মাস্টারবেট করব না,আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আমি পর্ন এবং মাস্টারবেশন আসক্তি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে গিয়েছি।
হতাশা, বিষন্নতা কাটিয়ে উঠেছি সেই কবে , পড়াশোনায় উৎসাহ ফিরে পেয়েছি । জীবনটাকে এখন অনেক অনেক বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে করে । এই গ্রীষ্মের মত জীবনটাকে এত মধুর মনে হয়নি আগে কখনো ।
আমার জন্য সবাই দু’আ করবেন আমি যেন চিরকাল এই অন্ধকার জগত থেকে দূরে থাকতে পারি । লস্ট মডেস্টি টিমের প্রত্যেক সদস্যের জন্য আমার অনেক অনেক দু’আ এবং শুভকামনা রইলো । আল্লাহ্ আপনাদের কাজে বারাকাহ দান করুক । আপনাদের কাজের মাধ্যমে এবং আল্লাহ্ (সুবঃ)’র ইচ্ছায় আমার মত অনেকেই অন্ধকার জগত থেকে বের হয়ে আসবে ইনশা আল্লাহ্ ।
একটা কথা বলে শেষ করব। হাইপার সেক্সুয়ালাইজড বর্তমান পৃথিবীতে নারীদেহ পন্যের মত বেচাকেনা চলছে । আইটেম সং , রিয়েলিটি শো, খেলার মাঠ, বিলবোর্ড সবকিছুই তরুণদের কামের আগুনকে উষ্কে দিচ্ছে সব সময় । ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে পা হড়কানো দুটো মাউসের ক্লীকের ব্যাপার মাত্র । এরকম এক অস্থির পৃথিবীতে হয়তো আপনার সন্তান/ ছোট ভাই বোন / কাজিনও রক্ষা পায়নি পর্ন মুভি/ মাস্টারবেশন/চটির হাত থেকে । হয়তো আপনার আশেপাশে আপনার সন্তান/ ছোট ভাই বোন / কাজিন মাস্টারবেশন , পর্ন মুভিতে আসক্ত হয়ে বিভীষিকাময় জীবন পার করছে । সে তার কষ্ট গুলো হয়তো আপনাকে বুঝতে দিচ্ছে না,আপনার কাছ থেকে গোপন করে রেখেছে তার এই অন্ধকার পৃথিবী,হাসিমুখের আড়ালে ।
তার সঙ্গে বন্ধুর মত মিশুন।তার আস্থা অর্জন করুন , তাকে তিরস্কার না করে,লজ্জা না দিয়ে তার অন্ধকারের গল্পগুলো শুনুন, তার কষ্টগুলো অনুভব করুন ।বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত ।
আপনার সাহায্য তার খুব প্রয়োজন ।
খুব বেশি প্রয়োজন ।