- Published on
নীল রঙের অন্ধকার (দ্বিতীয় কিস্তি)
আমার নাম গ্যাব্রিয়েল ।
আমি একজন পর্ন আসক্ত ।
বয়স যখন ১৩ চলছিল তখন একদিন হুট করেই আমি পর্ন মুভি দেখা শুরু করেছিলাম । প্রথমবার পর্ন মুভি দেখার অভিজ্ঞতা আমার কাছে খুব সুখকর ছিলনা । আমার এখনো মনে আছে , প্রথম দিন পর্ন মুভি দেখার সময় আমার গা গুলিয়ে উঠেছিল । পেটের ভেতরের নাড়ী ভুঁড়িগুলো দলা পাকিয়ে উপরে উঠে আসতে চাচ্ছিল । বমি করতে পারলে যেন আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচবো এরকম মনে হচ্ছিল । আসলে , ঐ পর্ন মুভিটাতে আমি দেখেছিলাম একজন পুরুষ তার সঙ্গিনীর গলা চেপে ধরে তাকে পাশবিক ভাবে নির্যাতন করছে । আমার বয়স যেহেতু অনেক কম ছিল এবং আমি কখনোই এরকম দৃশ্য আগে দেখিনি এজন্য এটা আমি ঠিক হজম করতে পারছিলাম না । সেই ভয়াবহ দৃশ্য আমার মস্তিষ্কে একেবারে চিরস্থায়ী যায়গা দখল করে নিল । আজকেও, এত বছর পরেও আমি সেই দৃশ্যগুলো চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাই ।
প্রথমবার পর্ন মুভি দেখার পর আমি বেশ কয়েকদিন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম । সব সময় কেমন জানি অস্বস্তি লাগতো । ঠিকমতো খেতে বা ঘুমাতে পারতাম না । গা গুলাতো সবসময় । কিন্তু তারপরেও আমার ভেতর থেকে সবসময় একটা তাড়না অনুভব করতাম পর্ন দেখার । কে জানি আমাকে বলতো , “ যা গ্যাব্রিয়েল যা ল্যাপটপ টা অন করে পর্ন দেখ”। প্রথমবার পর্ন মুভি দেখার দুঃসহ অভিজ্ঞতার পর আমি চাচ্ছিলাম না আবার পর্ন মুভি দেখতে । কিন্তু ভেতরের তাড়নাটার কাছে , নগ্ন নারীদেহ দেখার লোভের কাছে কয়েকদিনের মধ্যেই আমি পরাজিত হয়ে গেলাম । একদিন ল্যাপটপের কাছে আমাকে ছুটে যেতে হল , ব্রাউজার অন করে পর্ন ওয়েবসাইটে লগইন করে পর্ন দেখতে হল । সেইদিন থেকেই শুরু হল আমার জীবনের অন্ধকার পর্ব ।
আমার কিশোর বয়সের এই আদিম প্রবৃত্তির আগুনে কেরেসিন ঢেলেছিল আমার বাবার পর্ন আসক্তি । আমার বাবার কোন চাকুরী ছিল না । আমার মায়ের চাকুরীর উপরেই আমাদের পুরো সংসার নির্ভরশীল ছিল । মা যখন অফিসে চলে যেত,তখন আমার বাবা ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসে টিভিতে ঘন্টার পর ঘন্টা পর্ন মুভি দেখত । গ্রীষ্মের স্কুল ছুটির দিনগুলোতে আমাকে বাড়িতেই থাকতে হত । আমার ভেতরে এমনিতেই সবসময় ছিল পর্ন দেখার তাড়না , তারওপর নিজের বাবাই যখন এভাবে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে কোনরকম রাখঢাক না রেখেই খোলামেলা ভাবে পর্নমুভি দেখত তখন আমি আর কীভাবে নিজেকে আটকাবো ?
আর বাবাও আমাকে কিছু বলতনা । বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি কেমন ছিল ।
দিনগুলো এভাবেই চলতে থাকলো । স্কুল শেষ করে কলেজে উঠলাম । আমার পর্ন আসক্তিও আগের মতোই রইলো , কিছুটা বাড়লো বরং । আমি তখনো ঠিক বুঝতে পারি নি পর্ন মুভির আসক্তি আমার কী ক্ষতি করে ফেলেছে । যখন বুঝলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে ।
জীবনের বেশ কয়েকটি বসন্ত একাকী পার হবার পর আমি পেলাম ভালবাসার মানুষের খোঁজ । প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গিয়েছিল দুজনকে দুজনার । এরপর বিয়েটা সেরে ফেলতে খুব বেশি দেরী করিনি । কিন্তু আমাদের সংসারটা বেশি দিন টিকলো না । প্রথম দিকে ভালোবাসার কোন কমতি ছিলনা । পাগলের মতো আমি ভালোবাসতাম ওকে , সেও আমাকে পাগলের মতো ভালবাসতো । কিন্তু সমস্যাটা ছিল অন্য যায়গায় ।
আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিকমিলনের সময় সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষে পরিণত হয়ে যেতাম । প্রথম বার পর্ন মুভিতে দেখা দৃশ্য গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো বারবার । ক্ষুধার্ত বাঘকে একটুকরো মাংসের সামনে ফেলে দিলে বাঘ যেমন হয়ে যায় আমার অবস্থাও অনেকটা তেমন হয়ে যেত । আমি যেন একটা পশু হয়ে যেতাম , যে শুধু নিজেকেই তৃপ্ত করতে জানে , যার মন বলে কিছু নেই , যে কখনো কাউকে ভালোবাসেনি , জানেও না ভালবাসা কাকে বলে । দৈহিক মিলনের ব্যাপারটা আমার জন্য প্রচন্ড অস্বস্তিকর হয়ে যায় । পুরোটা সময় আমার ভালবাসার মানুষটাকে ভোগ করার একটা মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারতাম না । আমার স্ত্রী সব সহ্য করত । কিচ্ছু বলতনা আমাকে । ছলছল চোখে মাঝে মাঝে তাকাতো আমার দিকে। সেই কান্নাভেজা চোখে লেগে থাকতো অজস্র নীরব দীর্ঘশ্বাস আর বুক ভাঙ্গা চাপা আর্তনাদ ।
নিজেকে ধিক্কার দিতাম বারবার । গ্যাব্রিয়েল , তুমি না তোমার স্ত্রীকে ভালবাসো ? তুমি না তার নীল চোখের তারায় খুঁজে পাও সাত রাজার ধন ? তুমি না একদিন সমুদ্রের পাড়ে সূর্যাস্তের সময় হাঁটতে হাঁটতে তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলে সাদা কালো জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার এই পৃথিবীটাতে লাল নীল সংসার পাতার ? তোমার কথা শুনে তাঁর দুচোখের খুশির সেই ঝিলিক তুমি ভুলে গেছো । ভুলে গেছো সেই সময় কিভাবে পরমনির্ভরতায় সে তোমার কাঁধে মাথা রেখেছিল । তোমাকে ঘিরে সেও একটা স্বপ্ন দেখেছিল । সেও চেয়েছিল একটা ছোট্ট সুখের সংসার । আজ তার সঙ্গেই তুমি এমন করছো ? গ্যাব্রিয়েল তুমি খুব খারাপ মানুষ , গ্যাব্রিয়েল তুমি খুবই খারাপ মানুষ ।
মানসিকভাবে আমি ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলাম । আমার হৃদয়টা সবসময় খাঁ খাঁ করত । আমি চাইতাম আমার স্ত্রীকে ভালবাসতে , পশুর মতো আচরণ না করতে । কিন্তু আমার পর্ন আসক্তি আমার অন্তরের ভেতরে একটা বিরাট শুন্যতার সৃষ্টি করেছিল, আমার সমস্ত স্বত্তা থেকে শুষে নিয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর “একান্ত” মুহূর্তে ভালবাসতে পারার ক্ষমতা ।
আমি আর এই ভয়ঙ্কর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলাম না কিছুদিনের ভেতরেই আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল ।আমার এখন বারবার মনে হয় , ঈশ! আমি যদি কোনদিন পর্ন মুভি না দেখতাম । আমার বাবা যদি পর্ন আসক্ত না হতো । আমি যদি এমন কোন সমাজে বেড়ে উঠতাম যেখানে নারীদেহকে স্ক্রিনে এভাবে ভোগ্যপন্য বানিয়ে ফেলা হয়নি – তাহলে পছন্দের মানুষটিকে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্নগুলো এভাবে মিথ্যে হয়ে যেত না , ছারখার হয়ে যেত না আমার পৃথিবীটা ।
বৃষ্টি খুব পছন্দ ছিল আমার । মাঝে মাঝেই বৃষ্টিতে ভিজতাম আমি । একটু বেশিক্ষণ ভিজলেই আমার স্ত্রী ছাতা আর তোয়ালে নিয়ে হাজির হয়ে যেত । জোরাজুরি করতো মাথা মুছে ছাতার নীচে চলে আসার । আমার যদি জ্বর চলে আসে !
এখনো আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসে । আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজি । এখন আর ছাতা নিয়ে কেউ আসে না আমার জন্য ।
আমি কাঁদি ।
আমার চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । আমার কানে বাজতে থাকে একটা মিষ্টি কন্ঠ - এইযে সাহেব, আর ঢং করতে হবে না । ঠান্ডা লেগে যাবে তো । তাড়াতাড়ি মাথা মুছে ছাতার নিচে চলে আসুন তো, কুইক ।
(মূল লিখাটি https://fightthenewdrug.org/ সাইট থেকে সংগৃহীত)
(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত এবং পরিমার্জিত)
প্রথম পর্ব পড়ুন এখানে
তৃতীয় পর্ব পড়ুন এখানে
চতুর্থ পর্ব পড়ুন এখানে