Published on

খুলে দাও হৃদয়ের দ্বার (তৃতীয় পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।

আমি এই পাপ কাজটার সাথে প্রথম জড়িয়ে পড়ি ১৫ কিংবা ১৬ বছর বয়সে বা তারও কম বেশি হবে সঠিক বয়সটা ঠিক মনে পড়তেছেনা। প্রথম প্রথম খুব একটা করতাম না, দু বার একবার করতাম। তারপর আস্তে আস্তে এটা আমার নেশায় পরিণত হয়ে গেল। সিগারেট যেমন মানুষ একটু সুযোগ পেলেই খেত আমিও সুযোগ পেলেই এই নিকৃষ্ট কাজটায় জড়িয়ে যেতাম। এটা ধীরে ধীরে আমাকে আমার পরিবার,সমাজ,বন্ধুবান্ধব থেকে আলাদা করে দিতে লাগল। সবসময় একা একা থাকতে ভালবাসতাম। কারও সাথে মিশতাম না,কোথাও যেতেও ভাল লাগতনা, বন্ধুরা যখন বিভিন্ন জায়গায় দলবেধে ঘুরত আর আমাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল তখন আমি বিভিন্ন অজুহাতে তাদের নিকট থেকে এক রকম পালিয়ে আসতাম।

কোন কিছুতেই মন বসাতে পারতাম না, না পড়া না খেলাধুলা। প্রতিবারই করার পর প্রতিজ্ঞা করেছি যে এইবারই শেষ বার আর কখনও করবনা, আর কখনও পর্ন দেখবনা, কিন্তু কোন লাভ হয়নি, আবার পর্ন দেখেছি আবার সেইম কাজ করেছি। নিজের কাছে খারাপ লাগতে শুরু করল,কোনভাবেই এই পাপ কাছ থেকে সরে আসতে পারছিলাম না। নামাজ পড়তাম কিন্তু কোনভাবেই নামাজে মনোযোগ বসাতে পারতাম না, যোহর পড়লে আসর পড়তাম না, আর ফজর সে তো আমার কাছে সোনার হরিণের মত মনে হত। নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে অপরাধী মনে হত। এইভাবে কয়েক বছর কেটে গেল।

এর মাঝেও হয়তো আমি কোন ভাল কাজ করেছিলাম, যার ফলে ২০১৩ সালে আমি আল্লাহর রহমতে ভালো একটা চাকরিতে জয়েন করলাম। কিন্তু এখানে এসে আমার আরও পর্ণের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেল, কারন একটাই চাকরিতে জয়েন করার পর টাকা পয়সার তেমন অভাব ছিল না, জিবি জিবি নেট প্যাকেজ কিনে পর্ন দেখতাম আর নিকৃষ্ট কাজটা করতাম। এভাবেও কয়েক বছর কেটে গেল। লাস্ট কয়েক মাস আগে ফেসবুকে দ্বীনি পরামর্শ নামে একটা গ্রুপের দেখা পাই। এই গ্রুপের সাথে যারা জড়িত আছেন সবাইকে আল্লাহ তায়ালা দীর্ঘ জীবি করুক। এই গ্রপটা হয়তো আল্লাহর পক্ষে থেকে আমার জন্য হয়তো ছিল বিশেষ নিয়ামত। এই গ্রুপের প্রতিটা পোষ্ট আমি খুব গুরুত্বের সহকারে পড়তে লাগলাম।

আমার দিল নরম হতে লাগল, আমি কী করেছি এতদিন এইসব? নিজের খুব খারাপ লাগতে লাগল, প্রতিজ্ঞা করলাম আর জীবনে এই খারাপ কাজ করব না, করব না, করব না, এবার হয়তো আমি প্রতিজ্ঞাটা একদম মন থেকে করেছিলাম তাই হয়ত আল্লাহ তায়ালা আমাকে হেদায়েত দান করেছেন। এর ফাকে পেয়ে গেলাম "মুক্ত বাতাসের খোজে" গ্রুপটার দেখা। এই গ্রুপের সাথে যারা জড়িত আছে,আল্লাহ তায়ালা তাদেরকও দীর্ঘজীবী করুক। এই গ্রুপের মাধ্যমে পেয়ে গেলাম মুক্ত"বাতাসের খোজে" বইটা, মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর একটা বই।

বইটা পড়ার পর আরও কঠিন প্রতিজ্ঞা করলাম। নামাজ শুরু করে দিলাম,৫ ওয়াক্ত জামাতের সাথে,হয় তো কাজের জন্য ২/১ ওয়াক্ত নামাজে জামাত মিস হয়ে গেছে, কিন্তু সর্ব্বোচ চেষ্টা করেছি। তাহাজ্জুদ প্রতি রাতেই পড়ার চেষ্টা করি, তাহাজ্জুদ পড়ে প্রতি রাতেই আল্লাহর কাছে কেঁদেছি, সাহায্য চেয়েছি, নিজের নজরকে কন্ট্রোল করতে শুরু করলাম, ফোন মেমরি থেকে সকল ভিডিও ডিলিট করে দিলাম, ইউটিঊবে সব ইসলামিক চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে নিলাম, কাজের বিরতিতে আল্লাহর কাছে তওবা করলাম, হাটতেছি তাতেও আল্লাহর কাছে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে ক্ষমা চাচ্ছি, শুয়ে আছি তাতেও, সবসময় আল্লাহ যিকির মুখের মধ্যে আছেই।

যার ফলে আল্লাহ হয়তো আমাকে হেদায়েত দান করেছেন। আর প্রায় ৪ মাস হয়ে গেল আমি এইসব থেকে দূরে আছি। আর এখন নামাজে অনেক মজা পাই, এক ওয়াক্ত নামাজ মিস হয়ে গেলে বুক ফেটে কান্না চলে আসে। এখন নিজেকে ছোট বাচ্চাদের মত মনে হয়,ছোট বাচ্চারা যেমন সব সময় হাসিখুশি থাকে আমিও তেমনই থাকি,কাজের ভিতর মজা পাই, সবার সাথে মিশে গল্প গুজব করে সময় কাটাই, আল্লাহকে ডাকি, সময়মত নামাজ পড়ি। জানিনা আমি কতটুকু পেরেছি,আর এইভাবে কতদিন থাকতে পারব,তবে আমি মনে করি আমি পেরেছি আল্লাহর বিশেষ রহমতে।

তাই ভাই আসুন, আমরা যারা এখনও এই খারাপ কাজের সাথে জড়িত আছি আজকে এই মুহুর্ত থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এই খারাপ কাজ থেকে ফিরে আসি। বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকি, দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি,সম্ভব হলে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই কান্নাকাটি করি। জান্নাত,জাহান্নাম,সম্পর্কে বেশি বেশি জানার চেষ্টা করি। দিনে অত্যন্ত কয়েকবার মৃত্যুকে স্মরণ করি। বিভিন্ন ইসলামিক আলোচনা শুনি।

আল্লাহ নিশ্চয় আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন,কারণ আমরা আল্লাহকে যত ভালবাসি আল্লাহু তার চেয়েও অনেক বেশি আমাদেরকে ভালবাসেন। আল্লাহ নিজেও চান না তার বান্দারা জাহান্নামে যাক।

ভাই আমাদের হাতে কত সময় আছে আমরা কেউ জানিনা, তাই যতটুকু সময় পাই কাজে লাগাই,আল্লাহর পথে ফিরে আসি সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে। আমি পেরেছি ভাই,আপনিও পারবেন আমরা সবাই পারব ইনশা আল্লাহ।

ভাই আমরা সবাই একদিন মৃত্যু বরণ করব আগে আর পরে,তাই মৃত্যু আসার আগেই নিজেই প্রস্তুত করে নেই পরকালে শান্তির আশায়। পরকালে প্রতিটা কাজের জন্যই আমাদেরকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে, তখন ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নাই,লুকোচুরির কোন সুযোগ নাই ভাই, তাই আসুন আমরা দুনিয়াতে এমন কোন কাজ না করি যাতে আল্লাহর কাছে লজ্জিত হতে হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুক (আমিন)।

চলবে ইনশা আল্লাহ...

আগের পর্বগুলো-

খুলে দাও হৃদয়ের দ্বার (প্রথম পর্ব) খুলে দাও হৃদয়ের দ্বার (দ্বিতীয় পর্ব)