Published on

এখনি সময় পর্নকে বিদায় বলার!

একদিন আমি ফেসবুকে একটা প্রশ্ন পোস্ট করলাম – “কোন খারাপ স্বভাবটাকে এই রামাদানে একেবারেই ছেড়ে দিবেন বলে মনে করেন?”

আশ্চর্যজনকভাবে এক ভাই ডাইরেক্ট বলে দিলেন যে তিনি পর্ন দেখা ছাড়তে চান। মানে ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখুন, একজন মানুষ কোন পর্যায়ের হতাশায় ভুগলে এই ব্যাপারে জনসম্মুখে এভাবে মুখ খোলেন!

আসলে লজ্জার মাথা খেয়ে তাঁর এই সত্যকথন, তাঁর সাহসের স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং এটাই প্রমাণ করছে যে তিনি নিজের সঙ্গে অনবরত যুদ্ধ করছেন। আর আমরা এটাও বুঝতে পারছি যে তিনি তাঁর এই আসক্তি কাটানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে রামাদান মাস সহিসালামতে কাটাবেন এটা নিয়ে তিনি মারাত্মক চিন্তিত। তিনি ভয়ে আছেন, রোজা থাকা অবস্থায় না আবার নিজেকে আটকাতে না পেরে কোন পর্ন website-এ গিয়ে পর্ন দেখা শুরু করে দেন।

আপনারা কেউ কেউ হতেবা এটা মনে করতে পারেন, “আস্তাগফিরুল্লাহ! রামাদান মাসে কেউ এমন করারতো দূরের কথা, এরকম কাজ করার চিন্তা কেমন করে করতে পারে?” যদি এই চিন্তা আপনার মাথায় এসে থাকে তাহলে একটু থামুন। আস্তাগফিরুল্লাহ না বলে বরং আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করুন যে তিনি, আর-রহমান, আপনাকে এই ফিতনা থেকে বাঁচিয়েছেন আর তাঁর কাছে এই দোয়া করুন যে তিনি যেন আপনাকে পর্ন থেকে যিনা পর্যন্ত সব ধরণের হারাম থেকে রক্ষা করেন।

পর্নের প্রভাবঃ

যদিও পর্ন আসক্তির অনেক ক্ষতিকর ফলাফল আছে, এর মধ্যে যেটা তালিকার শীর্ষে রয়েছে সেটা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গতার মধ্যে যেই প্রভাব এটা ফেলে। গবেষণা থেকে জানা যায় যে পর্নগ্রাফি কার্যক্রমে মানুষকে যৌন অনুভূতিহীন করে ফেলে। এর ফলে তাদের একই আনন্দ পেতে আরও বেশি উত্তেজনার প্রয়োজন হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর ফলে তাদের নিজের স্বামী/স্ত্রী পর্যায়ক্রমে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট থাকে না।

পর্ন আসক্তির ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সবারই জেনে রাখা উচিৎ। যারা এতে আসক্ত এবং যারা আসক্ত না, উভয়েরই। পর্ন আসক্তির ঠিক মদ কিংবা মাদকাসক্তির মতো। এটাকে হুট করে থামানো যায় না। এটার পিছনে সময় ও শ্রম ব্যায় করতে হয় আর পর্ন আসক্তির এতটা শক্তিশালী কেন এটা যতক্ষণ না কেউ ঠিক মতো না বুঝতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। পর্ন আসক্তির তো যৌন আসক্তির শুধুমাত্র একটা অংশ বিশেষ। পর্ন আসক্তি যিনার চেয়ে কম গুনাহের কাজ কিন্তু এটা যদি না ছাড়া যায় তাহলে এটাই এক সময় যিনার দিকে নিয়ে যাবে। ঠিক এই কারণেই আল্লাহ বলেছেন – “আর বাভিচারের কাছেও যেয়ো না...”(কুরআন ১৭:৩২)। আর পর্ন হচ্ছে যিনার দরজা। আসক্তি

এটা (পর্ন) কেন একটা পর্ন আসক্তিঃ

এই বিষয় নিয়ে গবেষণা থেকে জানা যায় যে পর্ন আসক্তি এক ধরণের রাসায়নিক আসক্তি। অর্থাৎ, পর্নের প্রতি মানুষের আকর্ষণ মস্তিষ্কের উপর ঠিক সেই প্রভাবটাই ফেলে যেটা কোন মাদকদ্রব্য ফেলে। এমনকি এটাকে এই Wired articleটিতে “crack cocaine” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মেরি অ্যানি লেইডেন, co-director of the Sexual Trauma and Psychopathology Program at the University of Pennsylvania's Center for Cognitive Therapy, পর্নের ব্যাপারে বলেন, “একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যত ক্ষতিকর জিনিস আছে, আমার জানা মতে তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।”

আসক্তি অতিক্রম করাঃ

আপনি যদি পর্নআসক্ত হয়ে থাকেন তাহলে এটা জেনে রাখুনঃ

১।আপনি একা নন

২।আপনি অভাগা বা খারাপ মানুষও নন

স্ত্রী এবং পরিবার, আপনারা জেনে রাখুনঃ

১।এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আসক্তদের ব্যাপারে তাচ্ছিল্য করে কথা না বলে আপনি এই আসক্তিটার উপস্থিতি এবং বাস্তবতা স্বীকার করুন। তাদের সঙ্গে এইরকম আচরণ করলে তারা নিজেদেরকে আরও ছোট মনে করবে, নিজেদের ব্যাপারে আরও খারাপ অনুভব করবে এবং ফলে তাদের পর্নের মাধ্যমে endomorphine এর যেই আনন্দলাভের তীব্র অনুভুতি, সেটা পাওয়ার ইচ্ছা আবার জাগ্রত হবে।

২।পর্ন আসক্তি যে শুধু মাত্র আসক্তদের জন্যই ক্ষতিকর তা নয় বরং এটা তার স্বামী/স্ত্রীর জন্যও খারাপ। এটা বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার কারণও হয়ে দারাতে পারে। ঠিক এই জন্যই এই ব্যাপারটাকে এত তুচ্ছ মনে করা ঠিক নয়। পর্ন আসক্তদের স্বামী/স্ত্রীর কাছে আমার বিনিত অনুরধ থাকল যে আপনারা পুলিশ অফিসারের মতো কড়া ব্যবহার না করে বরং তাদের এই সমস্যার সমাধানে যোগদান করুন। তাদের আসক্তিটা আপনি কখনও জোর করে ছাড়াতে পারবেননা।

রামাদানকে কাজে লাগানোঃ

পর্ন আসক্তিকে অতিক্রম করার জন্য দুটি দরকারি জিনিস দরকার– দৃঢ় ইচ্ছা এবং বাস্তব পদক্ষেপ।

রামাদান মাসে আমাদেরকে রোজা রাখতে হয়। রাসুল(সাঃ) রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা শিখিয়েছেনঃ

রামাদান হল এমন একটা সময় যখন আমাদের রোজা রাখার অনেক “দৃঢ় ইচ্ছা” থাকে। রোজা রেখে আবার নিজের এই আসক্তির কারণে আমরা এটাকে ভেঙ্গে ফেলতে পারি না। রামাদানই হল একটা বাস্তব পদক্ষেপ।

সহযোগীর সাহায্য নেয়াঃ

এই আসক্তিটার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একজন সহযোগী রাখুন। এই সহযোগী হতে পারে আপনার কোন বন্ধু অথবা আপনার পরিবারের কোন সদস্য অথবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী। আপনার এই সহযোগীকে বলুন আপনার কম্পিউটারে একটা পর্ন filtering monitor install করে দিতে এবং তাদেরকে দিয়ে আপনার কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড সেট করে নিন এবং তাদের কাছ থেকে কথা নিন যে আপনি তাদের কাছ থেকে সেটা জানার যতই চেষ্টায় থাকুন না কেন তারা যেন কোন অবস্থাতেই সেটা আপনাকে না বলে।

আরও কিছু পরিবর্তনঃ

আপনার স্মার্ট ফোনটা বদলে ফেলুন - আপনার স্মার্ট ফোনটা বদলে একটা সস্তা ফোন ব্যবহার করুন। এমন কিছু যেটাতে ইন্টারনেট চলে না।

আপনার কম্পিউটার বদলে ফেলুন - এমন যদি হয়ে থাকে যে আপনি আপনার ল্যাপটপে পর্ন দেখেন তাহলে ওটা বাদ দিয়ে একটা ডেস্কটপ কিনে ফেলুন যেটা আপনার বাসার কোন খোলা জায়গায় রাখতে হবে যেখানে বসে আপনি পর্ন দেখতে পারবেন না।

আপনার টিভিটা বন্ধ রাখুন – আপনার কাছে যদি কোন পর্নের ভিডিও অথবা ডিভিডি থেকে থাকে সেগুলো নষ্ট করে ফেলুন অথবা ফেলে দিন। সহযোগীর সাহায্য নেয়াঃ

আরও কিছু কার্যকরী পদক্ষেপঃ

নিজেকে যাচাই করাঃ – আপনি নিজেকে নিজের কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করুন এবং আপনার সহযোগীর সাথে আপনার addictionএর ব্যাপারে পরামর্শ নিন। একবার ভেবে দেখুনঃ আপনি যদি রোজা থাকা অবস্থায় নিজেকে সামলাতে পারেন তাহলে আপনি রামাদান মাসের রাত্রিগুলোতে, যেই রাতগুলো বছরের অন্য সব রাতের থেকে পবিত্র, এই সময়ে কেন সামলাতে পারবেন না? আর আপনি যদি নিজেকে রামাদান মাসে নিজেকে সামলাতে পারেন তাহলে রামাদান মাসে যেই আল্লাহকে আপনি মানেন বাকি মাসগুলোতেও কি আপনি একই আল্লাহকে মানেন না, যিনি সব সময় আপনাকে দেখেন?

সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করুন – আল্লাহ, আত-তাওয়াবের কাছে ক্ষমা চান, আপনি যেই সময়টা ব্যায় করছেন, যেই চেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছেন, তিনি যেন তাতে বরকত দান করেন এবং আপনার এই পরিক্ষাটা যেন উনি সহজ করে দেন। সবসময় মনে রাখুন যে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাতেই আপনি এই পরীক্ষায় পরেছেন এবং আপনি চেষ্টা করলে উনি ওনার রহমতের দ্বারা আপনাকে এটা থেকে আরও শক্তিশালী মু’মিন হিসেবে বের করবেন। এই পবিত্র মাসের রাতগুলোতে এবং ইফতারি করার আগের সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তাঁর সাহায্য চান।

এইরকম বেশি বেশি দোয়া করুন –

اللهم اني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب الا انت فاغفرلي مغفرة من عندك, وارحمني انك انت الغفور الرحيم

(Bukhāri)

বই পড়ুনঃ সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার উপর যেই বইগুলো লেখা হয়েছে, সেগুলো পড়ে দেখা। ইচ্ছা হারিয়ে ফেলার আগেই বইগুলো পড়া শুরু করুন।

মোট কথা, চেষ্টা করুন যে এই রামাদানে, যখন আপনার spiritual motivationটা অনেক বেশি ,এই সময়টাতে এমন কোন কিছু করার একটা অভ্যাস করুন যেটা আপনাকে শুধু এই রামাদানেই নয় বরং ভবিষ্যতেও পর্ন থেকে দূরে রাখবে।