- Published on
একেই বলে সভ্যতা!!! (দ্বিতীয় পর্ব)
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
অসহায়, বিপর্যস্ত, দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের উপর জাতিসংঘের "শান্তিরক্ষীদের" চরম বিকৃত যৌন নির্যাতনের খবর আসছেই। ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে (CAR) একশোরও বেশি নারী, কিশোর-কিশোরী ও শিশু “শান্তিরক্ষীদের” দ্বারা নির্যাতিত হবার কথা ডকুমেন্টেড হয়েছে। গত ২৬ মার্চ জাতিসংঘেরই একজন মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তার সফরের সময় ভয়ঙ্কর একটি ঘটনার কথা উঠে এসেছে, যা একজন সুস্থ মানুষের জন্য পড়াটাও কষ্টকর। ফ্রেঞ্চ “শান্তিরক্ষী”-দের দ্বারা সংঘটিত এ ঘটনাটির বর্ণনা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে আমি তার অনুবাদ তুলে ধরছি। পাঠকের কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি, কোন সুস্থ মানুষের একরকম অসুস্থতার মুখোমুখি হওয়া উচিত না, বাস্তবে তো না-ই, অনলাইনেও না। কিন্তু মানবতা আর শান্তির পতাকাধারীরা গালভরা বুলির আড়ালে, শান্তির ধোঁয়া তুলে আসলে কি করছে তা তুলে ধরা দরকার মনে করছি। এই হল এদের সভ্যতা আর মানবতার রূপ, এই হল শান্তিরক্ষী বাহিনীর আনা শান্তির নমুনা- “তিনজন মেয়ে জানিয়েছেন, চতুর্থ আরেকজন ভিকটিম সহ তাদের চারজনকে সাঙ্গারিস বাহিনীর ক্যাম্পে বন্দী করা হয়। সাঙ্গারিস বাহিনীর মিলিটারি কম্যান্ডার তাদেরকে ক্যাম্পের ভেতর বেঁধে ফেলেন এবং বিবস্ত্র করেন। তারপর তাদেরকে বাধ্য করেন একটি কুকুরের সাথে সঙ্গম করতে। ঘটনার পর প্রতিজনকে ৫০০০ ফ্র্যাঙ্ক [স্থানীয় মুদ্রা - প্রায় ৭০০ টাকা] দেওয়া হয়। ভিকটিমদের একজন ঘটনার কিছুদিন পর অজানা রোগে মৃত্যুবরণ করেন। আরেকজন ভিকটিম জানান এই ঘটনার পর থেকে তাকে “সাঙ্গারিস কুত্তি” বলে ডাকা হয়। সাঙ্গারিস হলো মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত ফ্রেঞ্চ সামরিক বাহিনীর নাম।”
সূত্রঃ http://tinyurl.com/zfoeug8
যদি কেউ মনে করেন জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীর দ্বারা নির্যাতনে এবং পাশবিকতার এটাই প্রথম ঘটনা, তবে ভুল করবেন। বিপর্যস্ত, অসহায় মানুষ, যাদের “সাহায্য” করার অজুহাতে জাতিসংঘ বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সাম্রাজ্যবাদী-ক্রুসেইডার সেনাবাহিনি প্রেরণ করে, তাদেরকে নির্যাতন করা জাতিসংঘের জন্য নতুন কিছু না। প্রায় দুই দশক ধরে তারা এরকম করে আসছে, এবং অপরাধীদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কিন্তু বার বার, ধারাবাহিক ও নিয়মিতভাবে এ ঘটনাগুলো ঘটার পরেও জাতিসংঘ তেমন কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করে নি বরং পাশবিকতার মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। “রক্ষকই যখন ভক্ষক” - এ কথাটা “শান্তি ও মানবতার” ধারক-বাহক জাতিসংঘের সাথে যেভাবে খাপে খাপে মিলে যায়, বর্তমান বিশ্বে আর কারো সাথে মনে হয় না অতোটা মেলে। নিচে গত বিষ বছরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের নারী-শিশুদের উপর চালানো যৌন নির্যাতনের সংক্ষিপ্ত টাইম লাইন দেওয়া হলঃ
অগাস্ট ১৯৯৬ – মো্যাম্বিকের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং জাতিসংঘর মহাসচিবের কার্যালয়ের অধীনস্ত বিষেশজ্ঞ গ্রাসা মিশেল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। “শান্তিরক্ষী” বাহিনীর দ্বারা ছেলে ও মেয়ে শিশুদের উপর চালানো যৌন নির্যাতনের বিষয়টি প্রথমবারের মতো এই রিপোর্টে উঠে আসে।
১৯৯৯ – বসনিয়াতে জাতিসংঘের “আন্তর্জাতিক পুলিশ বাহিনীর” কার্যক্রম পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব থাকা ক্যাথেরিন বলকোভ্যাচ, বসনিয়াতে এই বাহিনী আসলে কি করছিল তা প্রকাশ করে দেন। জাতিসংঘের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত পতিতা গমনে অভ্যস্ত ছিল। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর তথ্য হল, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বসনিয়ার মেয়ে ও কিশোরীদের পূর্ব ইউরোপে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি ও পাচারের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল জাতিসঙ্ঘের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের কারো কোন শাস্তি হয় নি। ক্যাথেরিনকে বরখাস্ত করা হয়।
ফেব্রুয়ারী ২০০২ – খোদ জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা UNHCR এবং Save The Children এর উপদেষ্টাদের তৈরি একটি রিপোর্টের মাধ্যমেই গিনি, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং সার্বিকভাবে পশ্চিম আফ্রিকায় জাতিসংঘের “শান্তিরক্ষীদের” দ্বারা উদ্বাস্তু নারী ও শিশুদের যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে। রিপোর্ট থেকে জানা যায় UNHCR এর অধীনে থাকা ক্যাম্প গুলোতেই সর্বাধিক যৌন নির্যাতন ও জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তির ঘটনা ঘটে।
অক্টোবর ২০০২ – পশ্চিম আফ্রিকাতে উদ্বাস্তু নারী ও শিশুদের উপর জাতিসংঘের “মানবাধিকার” কর্মী, “ত্রানকর্মী” এবং “শান্তিরক্ষীদের” দ্বারা সংঘটিত যৌন নির্যাতনের ব্যাপারে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান পরিষদ (OIOS) একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে।
অক্টোবর ২০০৩ - এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ বাধ্য হয় নারী- ও শিশুদের যৌন নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ ভাবে তাদের “শান্তিরক্ষীদের” আহবান জানাতে।
ফেব্রুয়ারী ২০০৪ – কঙ্গোতে উদ্বাস্তু নারী ও শিশুদের উপর চালানো “শান্তিরক্ষীদের” পাশবিকতার অফিশিয়াল তদন্ত শুরু। সমস্ত কঙ্গো জুড়েই, এবং উত্তর-পশ্চিম কঙ্গোর বুনিয়া শহরে বিশেষভাবে, জাতিসংঘের ক্যাম্পের ভেতরে নারী ও শিশুদের ধর্ষন ও জোর পূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। সামরিক এবং সিভিলিয়ান, জাতিসংঘের উভয় ধরনের কর্মী এবং অফিসাররা এ অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল।
মার্চ ২০০৫ - জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের যৌন নির্যাতন সম্পর্কে প্রথম বিশ্লেষনর্মী রিপোর্ট “যাইদ রিপোর্ট” – এর প্রকাশ। জাতিসংঘের বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অসহায়দের উপর যৌন নির্যাতনের এই ধারার ব্যাপক প্রচলন এবং জাতিসংঘের ভেতরে একে “সাধারণ ঘটনা” হিসেবে মেনে নেওয়ার মনোভাবের কথা উঠে আসে।
২০০৬ – বিবিসির অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে আসে কিভাবে হাইতি এবং লাইবেরিয়াতে “শান্তিরক্ষীরা” শিশুদের নিয়মিত ধর্ষন ও জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে। ছোট মেয়েরা বিবিসির সাংবাদিকদের জানায় কিভাবে খাবার ও টাকার জন্য শান্তিরক্ষীরা নিয়মিত তাদেরকে যৌনকর্মে বাঁধ্য করতো।
জানুয়ারী ২০০৭ – ২০০৫ সালে দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষীদের দ্বারা শিশু ও কিশোরীদের সিস্টেমেটিক ধর্ষন ও যৌন নির্যাতনের খবর প্রায় দুই বছর পর মিডিয়াতে প্রকাশ পায়। ১২ বছরের মেয়েরাও শান্তিরক্ষীদের লালসার শিকার হয়।
২০০৮ – জাতিসংঘের ত্রানকর্মী ও শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে আইভরি কোস্ট, দক্ষিণ সুদান এবং হাইতিতে শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। জাতিন্সঘের শান্তি ও মানবাধিকারের ধারক-বাহকদের দ্বারা ধর্ষিত হয় ৬ বছরে শিশুও। শুধুমাত্র Save The Children অভিযোগ প্রমাণিত হবার প্রেক্ষিতে তিনজন কর্মীকে বরখাস্ত করে দায় সারে।
সেপ্টেম্বর ২০১৩ – দক্ষিণ মালীতে শান্তিরক্ষীদের দ্বারা গণধর্ষন। কোন বিচার নেই।
নভেম্বর ২০১৩ – একদল স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দলের অধীনে করা রিপোর্ট জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়। নিজেদের সদস্যদের দ্বারা দক্ষিণ সুদান ও লাইবেরিয়াতে ব্যাপকভাবে সঙ্ঘটিত ধর্ষন ও নারী ও শিশুদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের উদাসীনতা নিয়ে এই রিপোর্টে কড়া ভাষায় সমালোচনা করা হয়। ২০১৫ পর্যন্ত এ রিপোর্ট ধামাচাঁপা দিয়ে রাখা হয়। ২০১৫ সালে “এইডস মুক্ত পৃথিবী” (AIDS Free World) নামে একটি আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ স্বউদ্যেগে মিডিয়ার কাছে গোপনে এই রিপোর্ট পৌছে দেওয়ার পর, রিপোর্টটি আলোর মুখ দেখে।
এপ্রিল ২০১৫ – জাতিসংঘের অভ্যন্তরীন একটি রিপোর্ট AIDS Free World গোপনে সংগ্রহ করার পর মীডিয়াতে প্রকাশ করে। রিপোর্টে থেকে জানা যায় মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাঙ্গুই-এ “শান্তিরক্ষীরা” খাবার এবং টাকার জন্য ৮ থেকে ১৫ বছর বয়েসী দশ থেকে বারো জন ছেলেকে নিয়মিত ধর্ষন করে। ধর্ষন সংঘটিত হয় অভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তুদের জন্য তৈরি জাতিসংঘের নিজস্ব সেন্টারের ভেতরে।
মে ২০১৫ – জাতিসংঘের বিরুদ্ধে তাদের সদস্য কতৃক নারী-শিশু ধর্ষন ও নির্যাতনের তথ্য গোপন করা এবং অপরাধীদের বাঁচিয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
জানুয়ারী ২০১৫ – মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে “শান্তিরক্ষীদের” দ্বারা মেয়েদের ধর্শনের আরও প্রমাণ।
মার্চ ২০১৬ – জাতিসংঘের একটি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুয়ায়ী ২০১৫ সালে দশটি জাতিসংঘ মিশনে মোট ৬৯ টি ধর্ষনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
সূত্রঃ http://tinyurl.com/z3bwr8q
এই হল জাতিসংঘের মানবতা আর সভ্যতার নমুনা। এভাবেই তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করে আসছে। সবচেয়ে গরীব, সবচেয়ে অসহায়, সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদের এভাবে তারা “সাহায্য” করছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে চালু করা এনজিও আর অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো, সুশীলদের মুখ দিয়ে এই জাতিসংঘের আদর্শই আমাদের শেখাতে চাচ্ছেন, আমাদের স্কুলের পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে এই জাতিসংঘের আদর্শ আমাদের শিশুদের মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। প্রথম আলো-ডেইলি স্টার-একাত্তরের মতো মিডিয়াগুলো জাতিসংঘের সিলেবাস অনুযায়ী আমাদের নারী অধিকার, শিশু অধিকার আর শান্তি-সভ্যতা সংজ্ঞা শেখাতে চাচ্ছে। আমাদের সামনে এসব ধর্ষক-নির্যাতক, পিশাচকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করছে, তাদের নৈতিকতাকে (!) উৎকৃষ্ট হিসেবে উপস্থাপন করছে আর আমাদের বোঝাচ্ছে ইসলাম কতো মধ্যযুগীয়, কতো বর্বর, কতো পাশবিক! আর তাই তো নাসির বাচ্চু-খুশি কবীররা এদেশে সমকামীতার লাইসেন্স চায়, ৭১ বিকৃতাচারের পক্ষে নাটক বানায়, শাহবাগীরা পহেলে বৈশাখে "সমকামী প্যারেড" করেন।
তাই পরের বার যখন শারীয়াহ নিয়ে এসব মিডিয়া কিংবা সুলতানা কামালদের “আসক”-এর মতো সংস্থাগুলোর কথা চোখে পরবে, যখন এরা তনু ধর্ষন নিয়ে তোলপাড় করবে কিন্তু কৃষ্ণকলির স্বামীর মুখের আঁচড়ের দাগ, গৃহ পরিচারিকার মৃত্যু, ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে রহস্যজনক নীরবতা পালন করবে - তখন মাথায় রাখবেন ঠিক কোন মানবতার সংজ্ঞা, কোন ধরণের স্বাধীনতা, কোন ধরনের সভ্যতা, কোন ধরনের শান্তি, কোন ধরনের ইনসাফের নমুনা তাদের ফিরিঙ্গি আন্তর্জাতিক প্রভুরা উপস্থাপন করেছেন, আর তারা অনুসরণ করছে। হয়তোবা অসহায় মানুষকে কুকুরের সাথে সঙ্গমে বাধ্য করাটাই তাদের কাছে সভ্যতা ও স্বাধীনতা, হয়তো বা পশুকাম, শিশুকাম, ধর্ষন আর পতিবৃত্তির অধিকারই তাদের কাছে মানবাধিকার, হয়তো তাদের এই বিশ্বব্যবস্থায় এটাই নৈতিকতা, এটাই এ বিশ্বব্যবস্থার ধর্ম - কিন্তু নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তার নাযিলকৃত শারীয়াহর মাপকাঁঠিতে এরা জঘন্য অপরাধী। আর নিঃসন্দেহে এই জঘন্য অপরাধ ততোদিন বন্ধ হবে না, যতোদিন আল্লাহর আইন দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে,। ততোদিন এসব অপরাধীর বিচার হবে না, যতোদিন আল্লাহ্র শারীয়াহর অধীনে এসব জন্তুর বিচার করা হচ্ছে।
“আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো শান্তির পথ অবলম্বন করেছি।“ [আল-বাক্বারাহ, ১১]
Collected From Brother Asif Adnan
পড়ুন প্রথম পর্ব - http://lostmodesty.blogspot.com/2016/08/blog-post_34.html