- Published on
আততায়ী ভালোবাসা (প্রথম পর্ব)
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
ফেইসবুক মাঝে মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে যায় তারুণ্যের প্রথম দিনগুলোতে। পুরোনো স্ট্যাটাসগুলো ফেইসবুক মেমরি হিসেবে হোমপেইজে ভেসে ওঠে। চশমার এপাশের চোখদুটো যা দেখে তা বিশ্বাস করতে চায়না। আফসোস, বিস্ময় আর হাসির মাঝামাঝি একটা অনুভূতি হয়। কতো অপরিপক্ক ছিলাম তখন। কী সব ছেলেমানুষি করেছি, হাস্যকর কতো স্ট্যাটাস দিয়েছি! . সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাটাস ডিলিট করে দেই। ইয়ার দোস্তদের কেউ দেখে ফেললে আর রক্ষে নেই। পঁচিয়ে পাগল করে দিবে। অথচ চার পাঁচ বছর আগে যখন এগুলো লিখেছিলাম তখন নিজেকে কতো ‘স্মার্ট আর কুল’ মনে হয়েছিল। লাইক কমেন্ট পেয়ে খুব ভালো লেগেছিল। বন্ধুরা কতো প্রশংসা করেছিল! এককালের ‘হিট’ স্ট্যাটাসগুলো আজ সেই একই আমির কাছে লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । যে বন্ধুরা প্রশংসার বন্যায় আমাকে ভাসিয়ে দিয়েছিল সেই একই বন্ধু বান্ধবের দল এই পোস্ট দেখলে আমাকে পঁচাবে! . চৌধুরী সাহেব ঠিকই বলেছিল। মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়,বেঁচে থাকলে বদলায়। সকালে বিকালে বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়। . মাত্র চার পাঁচ বছরের ব্যবধানে কতো বদলে গেছি! চারপাঁচ বছর পরেও এই আমি আর সেই আমি থাকবোনা নিশ্চয়ই। গতকাল যেটাকে ধ্রুবসত্য বলে মনে হয়েছিল আজ তা মিথ্যে, যে আচার আচরণকে স্মার্ট,কুল,জাতে ওঠার সিঁড়ি ভেবেছিলাম আজ নিজের কাছেই তা হাসি ঠাট্টা আর লজ্জার বিষয়। আফসোসের বিষয়! কীভাবে এতো অপরিণত আচরণ করেছিলাম ভেবে অবাক হবার বিষয়। . আল্লাহ্র কালাম আর আল্লাহ্র দ্বীন ছাড়া কোন কিছুই আসলে ধ্রুব সত্য নয়। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে জমে থাকার কিছু নেই। সময় পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে বদলে যায় সবই... ফিজিক্সের থিওরি,ফেসবুকের ট্রেন্ড, রাজনীতি, সিংহাসন, নিয়ন আলোর রাজপথ। পরাশক্তির অহং, ঔদ্ধত্যও ধুলোয় লুটোয়। . আজ কোন মেয়েকে তোমার কাছে মনে হচ্ছে স্বর্গের অপ্সরী, মেয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে অষ্টপ্রহর। তুমি নিশ্চিত থাকো কিছুদিন পরেই তোমার এই অনুভূতির পরিবর্তন হয়ে যাবে। ঘোর কেটে যাবে। এটা স্রেফ বয়ঃসন্ধিকালের মোহ, বা অস্থির তারুণ্যের অস্থিরতা। স্কুলে পড়ার সময় তুমি একরকম থাকবে, তোমার চিন্তাভাবনা পছন্দ অপছন্দের মাপকাঠি জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি একরকম হবে। . কলেজে ওঠার পর তোমার পরিচিতির গন্ডি কিছুটা বড় হবে। তুমি কিছুটা বদলাবে। মনোজগতে আলোড়ন বয়ে যাবে এর পরের ধাপ- বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভার্সিটির বাতাসেও কী যেন থাকে! তোমার জীবনবোধ,চিন্তা চেতনা, পছন্দ অপছন্দের মাপকাঠি বদলে যাবে। তুমি নিজেকে ক্রমাগত ভাঙতে থাকবে নতুনভাবে গড়ার নেশায়। . স্কুল থেকে কলেজ,কলেজ থেকে ভার্সিটি ... ধীরে ধীরে বদলে যাবে তুমি । একটু একটু করে পরিণত হবে। কিন্তু তোমার মনের মানুষটিও যদি এরকম কোনো জার্নির মধ্যে দিয়ে না যায়, পিছিয়ে পড়ে তাহলেই পরিস্থিতি ধারণ করবে জটিল আকার। প্রেমিকার কালো চোখ আর অতো টানবেনা,অন্ধকার রাত্রির মতো ঘনকালো চুল মনে হবে ঘোড়ার লেজ, যে হাসি আগে বুকে ছুরি বসাতো সেই হাসি দেখে প্রথমেই মনে হবে, ‘আরে! ওর দাঁত এতো হলুদ কেন। কয়দিন ব্রাশ করেনা? আচার আচরণ কথা বার্তায় অনেক ভুল ধরা পড়বে, ... ক্ষ্যাত মনে হবে। প্রেমিকা হয়ে যাবে অচল মূদ্রার মতো। সহজ বাংলায় প্রেম আর জমবেনা, তুমি পালাবার পথ খুঁজবে। (বোনেরা আমার, প্রেমিকার জায়গায় প্রেমিক ধরে পড়ে যাও। একই কাহিনী। যাহাই বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন। তোমাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা আরো প্রকোট হয়ে ধরা পড়বে। তুমি চাইবেইনা তোমার প্রেমিক তোমার চেয়ে কম শিক্ষিত বা কম যোগ্যতা সম্পন্ন হোক) . কিছু কিছু প্রেম সময়ের এই ঝড় ঝাপটা সামলে নিয়ে টিকে থাকে তেলাপোকার মতো করে। বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় এবং প্রেমের এপিটাফ লিখা হয়ে যায় ঠিক তখনই। সামনের লেখাগুলোতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসবে ইনশা আল্লাহ্ । . মোহ আর প্রেমের কতো ফুল ফুটতে দেখলাম। কিছুকাল পরে সেই ফুল ঝরে যেতে দেখলাম নিজের চোখে। কতো প্রেমিক প্রেমের শপথ করে কবিতা আউড়ে কসম খেল- ভালোবাসার জন্যে তারা জীবন বিলিয়ে দিবে নিঃসংকোচিত্তে, দুঃখের প্রত্যেকটি দ্বীপকে আপণ করে নিবে, দরকার হলে দাঁড়িয়ে যাবে পুরো পৃথিবীর বিপক্ষে, তবুও ভালোবাসার অসম্মান হতে দিবেনা,প্রেমিকাকে বুকে জড়িয়ে রাখবে আজীবন, শত প্রতিকূলতার মুখেও হাত ছাড়বেনা কখনোই। আকাশ বাতাস আর জমীনকে সাক্ষী রেখে তারা উদ্দাত্ত কন্ঠে জানান দিল জীবন চলে গেলেও অন্য কোনো মেয়েকে মেনে নিবেনা জীবনসঙ্গিনী হিসেবে। আজ সেইসব বোকা, মিথ্যুক প্রেমিকের দল অন্য কোনো রূপসীর চোখে চোখে রেখে সেই একই পুরোনো কবিতার কসম খাচ্ছে। লাজুক মুখে কেউ কেউ জানান দিচ্ছে অন্য কোনো মমতাময়ীর বাচ্চার বাবা হবার শুভ সংবাদ । . ভাই তোমার মোহ কেটে গেলে, নেশা কেটে গেলে প্রেমও হারিয়ে যাবে। তুমি অন্য কোনো ভালোবাসার প্রহরে অন্য কোনো রূপসীকে ভালোবাসার কথা বলবে। প্রেম হচ্ছে মদের মতো, প্রেমিকেরা নেশাখোর। কিছুতেই তোমার মন ভরবেনা, নেশা জমবেনা। বিশ্বাস করো তুমি ঐসব বোকা প্রেমিকদের মতোই। তুমি ওদের চেয়ে আলাদা নও কিছুতেই। তুমি ওদের মতোই। . যেই রূপসী তোমার চিন্তা ভাবনা,তোমার রক্তে মিশে গেছে , যে রূপসীকে ছাড়া তোমার দিন কাটেনা, তুমি বাঁচবেনা, বিশ্বাস করো সেই রূপসীকে ছাড়াই তুমি দিব্যি হেসে খেলে বেঁচে থাকবে। মাসের পর মাস চলে যাবে, ক্যালেন্ডারের পাতায় ধুলো জমবে, রূপসীর কথা তোমার ক্ষণিকের জন্যেও মনে হবেনা। তার চেহারা মন থেকে মুছে যাবে, যেই চোখ তোমার রাতের ঘুম হারাম করে দিত সেই গভীর কালো চোখও হারিয়ে যাবে। হয়তো ভুলে যাবে রূপসীর নামও। উদাস দুপুরের কোনো দলছুট চৈতালী বাতাস দূর অতীত থেকে বয়ে নিয়ে আসবে টুকরো টুকরো স্মৃতি... গাগলামী, ছেলেমানুষী... রক্ত দিয়ে প্রেমপত্র লিখা, এসিডে পুড়িয়ে নিজের শরীরে প্রেমিকার নাম লিখা,দূরালপনের এলোমেলো কথোপকথনে রাত ভোর হয়ে যাওয়া,বাবার পকেট কেটে ১৮ তম জন্মদিনে ১৮টি রক্তলাল গোলাপ কিনে দেওয়া, রিকশায় বৃষ্টিবিলাস, ফুচকা খাওয়া, মনোমালিন্য,ঝগড়া, ইঁদুর মারা বিষ বা কোকের সঙ্গে মিশিয়ে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলা ... . পাগলামির কথা ভেবে তুমি হাসবে, কী অবুঝ ছিলে তুমি, পাগলামির কী বিশাল ভাবসম্প্রসারণ করেছিলে। নাতি নাতনি বা কোন তরুণ শ্রোতাকে সামনে বসিয়ে তুমি রসিয়ে রসিয়ে প্রেমের অমর(!) কাহিনী শোনাবে! . বয়সে ছোটদেরকে প্রেম বিষয়ক সবক দিতে গেলে আমি আলোচনা মূলত এভাবেই শুরু করি। এ পর্যন্ত বোঝানোর পর প্রায় সবাই বিনাবাক্যব্যয়ে আমার কথা মেনে নেয়। ঠিক ঠিক, তোমার কথা ঠিক। বোঝাতে পারার তৃপ্তির হাসি দিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করি , ‘তাহলে তোরা প্রেম করিস কেন’? মোটা দাগে তিন ধরণের উত্তর আসে- . ১) এখন যার সঙ্গে প্রেম করছি তাকেই বিয়ে করব এমননা। জাস্ট টাইম পাস করার জন্যে প্রেম করি। ২) ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই প্রেম করে, আমি প্রেম না করলে কেমন না? ৩) প্রেম না করলে ভালো লাগেনা , একা একা লাগে। গুমোট নগরে ভীষণ দুঃখবোধ হয়। দুদণ্ড শান্তি দরকার ভাই , দুদন্ড শান্তি।
(চলবে ইনশা আল্লাহ্)