Published on

সখী ভালোবাসা কারে কয়? (শেষ পর্ব)

মোহের মতো আরো একটি বিষয় আছে যাকে ভালোবাসার সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। আর তা হচ্ছে কামনা (lust)। কামনা অনেকটা মোহের মতোই। একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ আরকি।

**কামনা (Lust): **কারো প্রতি তীব্র, অনিয়ন্ত্রিত যৌন আকর্ষণ অনুভব করাই হলো কামনা। সাইকোথেরাপিস্ট এবং রিলেশনশিপ এক্সপার্ট হ্যাইলি নেইডিকের মতে, কামনা হলো কারো প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে শারীরিক ভাবে উত্তেজিত হওয়া।

রিলেশনশিপ এক্সপার্ট অ্যালেক্স্যান্ড্রা স্টকওয়েলের মতে কামনার কিছু লক্ষণ হলো-

১। তার কথা মনে পড়া মাত্রই তুমি শরীরের কথা চিন্তা করবে, তার কথা ভাবলে শারীরিকভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়বে।

২। তাকে দেখা মাত্রই স্পর্শ করতে চাইবে।

৩। শারীরিক ব্যাপারস্যাপার বাদে তার অন্য ব্যাপারগুলোর প্রতি বা তাকে জানার ব্যাপারে তোমার ততোটা আগ্রহ থাকবে না।

কামনার ব্যাপারে স্টকওয়েল আরো বলছেন, এটা এমন এক তীব্র অনুভূতি যা আমাদের চিন্তাচেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। বোধ-বিবেচনা হারিয়ে কামনা পূরণ করার জন্য এমন কাজে বাধ্য করতে পারে যা আমাদের স্বাভাবিক বোধ-বিবেচনার বিপরীত।[1]

এই পর্যন্ত পড়ার পর আশা করি কামনা এবং ভালোবাসার মধ্যে মূল পার্থক্যটা তুমি ধরে ফেলেছো। কামনার মূল লক্ষ্যই হলো অন্যের ক্ষতি করে হলেও যে কোনো মূল্যে নিজেকে সুখী করা। ভালোবাসার পুরো বিপরীত।

ভালোবাসার মধ্যেও যে কামনা থাকে না, দৈহিক আকর্ষণ থাকে না–তা না। বরং ভালোবাসার ক্ষেত্রেও দৈহিক আকর্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। দৈহিক আকর্ষণ না থাকলে, অন্তরঙ্গতা না থাকলে ভালোবাসার উপর একটা পলেস্তরা পড়ে যায়। তবে ভালোবাসার কামনা ধ্বংসাত্মক না, স্বার্থপর না, দায়দায়িত্বহীন না। ভালোবাসার কামনা অন্যের অনুভূতিকে, ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে, সম্মান করার কামনা। এই কামনা পূরণ হবার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় না। ভালোবাসার কামনা শান্ত, সৌম্য, মিষ্টি পানির বহতা নদীর মতো। শুধু মোহের মতো ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অন্ধকার রাতের সমুদ্র না। ভালোবাসার কামনা একটা সুদৃঢ় বন্ধন তৈরিতে সাহায্য করে। ভালোবাসা পড়ন্ত বয়সেও দুটো মানুষকে এক করে রাখে। অন্যদিকে ভালোবাসাহীন দৈহিক আকর্ষণের কামনা, নিজের খায়েশ পূরণ করার জন্য যতোটুকু ক্ষণস্থায়ী বন্ধন তৈরির প্রয়োজন ততোটুকুই করে। ইচ্ছেপূরণ শেষ হলে, একটা শরীর খেতে খেতে পানসে হয়ে গেলে, দৈহিক সৌন্দর্য শেষ হওয়া মাত্রই দু’জনার পথ দুটি হয়ে যায়।[2]

***

ভালোলাগা, কাউকে স্রেফ কামনা করা আর কাউকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। রাস্তাঘাটে, ক্লাসে, ক্যাম্পাসে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কারো হাসি, চেহারা, কোনো আচার-আচরণ দেখে মুগ্ধ হতে পারো, কারো শরীর ভালো লাগতে পারে, দৈহিক উত্তেজনা অনুভব করতে পারো–তার মানে এই নয় যে তাকে তুমি ভালোবেসে ফেলেছো। কিন্তু এই ভালোলাগাকেই, এই মোহকেই, এই কামনাকেই ভাষার মারপ্যাঁচে ফেলে ভালোবাসা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আশা করি, সাংস্কৃতিক জমিদাররা তোমার মাথায় যে আবর্জনা ঢুকিয়েছিল তা এখন পরিষ্কার হয়েছে। বুঝতে পেরেছো যে এই তথাকথিত প্রেম, ট্রু লাভ কোনোটাই ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা তৈরি হয় বিয়ের মাধ্যমে।

কিন্তু ভাইয়া, বিয়ে কীভাবে ভালোবাসা তৈরি করে? হুট করেই তো দুজন অচেনা মানুষের দেখা হয়ে যায়, কেউ কাউকে তেমন চেনে না। মোহ হতে পারে, কামনা বাসনা থাকতে পারে, কিন্তু এতো দ্রুত ভালোবাসা কীভাবে তৈরি হবে?

ধরেন, আমি প্রেম করলাম, এরপর বিয়ে করে নিলাম তাহলেই তো হয়ে গেল, মোহ থেকে ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেল, ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো না। ঝামেলা চুকে গেল।

প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরগুলো পাওয়া যাবে পরবর্তী লেখাগুলোতে ইনশা আল্লাহ।


[1] The Chemistry of Love – tinyurl.com/ymct7hhf

How to tell…, Insider - tinyurl.com/4xs9hnnt

[2] Lust vs. Love, Diffen.com - tinyurl.com/mw7vd5te