Published on

‘দুশো তিপ্পান্নতম প্রেম’ (শেষ পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।

...বৃষ্টি ভালোবাসতাম আমরা দুজন। কতোদিন বৃষ্টিতে দুজনে হেঁটে বেড়িয়েছি ফাঁকা ফুটপাতে, কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসিয়েছি বৃষ্টির স্ত্রোতধারায়। সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। সারা বিকেল আমরা ঘুরে বেড়িয়েছিলাম রিকশায়। শেষ বিকেলে ঝুম বৃষ্টির পরের সেই ভীষণ প্রিয় নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল। রিকশার ভেতরের আঁধো অন্ধকারে তুমি আমার গা সেঁটে বসেছিলে। একদম গা সেঁটে। আমার অস্বস্তি হচ্ছিল।

আমি হয়তো তখন শুক্রবারের নামাযও পড়তামনা, হয়তো চেইন স্মোকার ছিলাম, লুকিয়ে লুকিয়ে পর্ন দেখতাম হঠাত হঠাত । তারপরেও তুমি যখন মাঝে মাঝে এতো কাছাকাছি আসতে তখন আমার অস্বস্তি হতো। কেমন জানি হয়ে যেতে তুমি সেই সময়টুকুতে। চোখের ভাষায় কী জানি বলতে চাইতে!

সেদিন আমি ছোট্ট রিকশার একপাশে যতোটুকু সরে বসা সম্ভব ততোটুকু সরে বসছিলাম। তুমি মুখে রহস্যময় হাসি হেসে আবার আমার গা সেঁটে বসছিলে বারবার। রিকশা থেকে নেমে যাবার আগমুহূর্তে আমার কানের কাছে ঠোঁট এনে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ফিসফিস করে বলেছিলে, ‘ কাল বাসা খালি। ভাইয়া,ভাবী বেড়াতে যাবে। একা একা আমি বাসায় থাকতে পারিনা। আমার ভীষণ ভয় লাগে...’।

কী ভুলের মধ্যেই না আমি ডুবে ছিলাম। আলেয়াকে আলো ভেবে নষ্ট করেছিলাম জীবনের সবচেয়ে সজীব সময়গুলো। এখনো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলে ঘর থেকে বের হয়ে আসি। বৃষ্টিতে ভিজি। খালি পায়ে একা হেঁটে বেড়াই সবুজ ঘাসের ওপর। রাসূলুল্লাহর সুন্নাহ। দু'আ করি মন ভরে ,বৃষ্টির সময় দু'আ কবুল হয়। হলের লেকের ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি বৃষ্টির ফোটা পানিতে পড়ে বৃত্তাকার ঢেউ তৈরি করছে, দূরের শালবনের ভেতর কাকের দল বৃষ্টিতে জবুথবু হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির ঠাণ্ডা ফোটা ভিজিয়ে দেয় আমার সর্বাঙ্গ,আড়াল করে ফেলে চোখের তপ্ত তপ্ত অশ্রু। কতো ভুল করে ফেলেছি এই ছোট্ট জীবনে। কতো গুনাহ করে ফেলেছি। ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তুমি ছাড়া তো আমার যাবার জায়গা নেই।

বালিকা, তোমার সম্মোহনী আমন্ত্রণে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। তড়িতাহতের মতো কেপে উঠেছিলাম নিদারুণ বেদনায়। ঘৃণায় সারা শরীর রি রি করে উঠেছিল। নিজেকে ধোঁয়া তুলসি পাতা হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছিনা।টগবগে তরুণ আমি। নারীদেহের ব্যাকুল শুশ্রুষা পাবার ইচ্ছে আমারো হতো। কিন্তু বালিকা বিশ্বাস করো, কখনো তোমাকে নিয়ে এসব ভাবিনি। পাপ আর পঙ্কিলতা সযত্নে দূরে সরিয়ে বুকের বেশ বড়সড়ো একটা জায়গা ফাঁকা করে,পবিত্রতা আর স্নিগ্ধ ভালোলাগায় মুড়ে রেখেছিলাম তোমাকে। সেই তুমি এমন একটা কথা বলতে পারলে!

তুমি বোধহয় পড়ে ফেলেছিলে আমার অনুভূতি। সেই রাতে লম্বা একটা মেসেজ পাঠিয়ে সরি বলেছিলে। দুইদিন পরে মাফ চাইতে আমার হলের নিচে এসেছিলে সশরীরে। তোমার চোখের পানি দেখে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম তখনই। কিন্তু তোমার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে গিয়েছিল অনেকখানি।

ক্লাস নাইনের এ সেকশনের বালিকা, তুমি ছিলে আমার কৈশোরের প্রথম ভালোলাগা, ভালোবাসা। হাইস্কুল সুইটহার্ট। কোনো কালিমা না ছুঁয়ে নিখাদ ভালোবাসা আর শুভ্রতায় কতোবার তোমাকে ছুঁয়েছি কল্পনায়, তোমার রেশমের মতো চুলে আনমনে বিলুনি কেটেছি সে সবের তুমি কতোটা জেনেছো?

পোকাদের হাতে তুলে দিয়েছো নিজেকে, পোকারা খুবলে খুবলে ক্ষতবিক্ষত করেছে দিবানিশি,, কেউ একজন তোমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে পার করে দিবে দীর্ঘ সুখের প্রহর... এই সৌভাগ্য তোমার কখনো হবে?

এই পৃথিবীতে কতোদিন তোমাকে পেতাম বলো? কতোটাই বা নিখুঁত তুমি? অপরূপা ? পরিপূর্ণা? চুলে তেল না দিলে, চিরুনি না করলে তোমাকে পাগলি পাগলি লাগে। দাঁত না বাজলে দুর্গন্ধ বের হয়,বগল থেকে বিশ্রী গন্ধ আসে, চোখে পেচুক জমে, সাবান না দিলে ময়লার আস্তরণ পরে। টয়লেটে যেতে হয়, তোমার নাকে সর্দি আসে। ৩০-৩৫ বছর বয়স হলেই মেদ জমে হিপোপটোম্যাস হয়ে যাবে, একদিনতো চুল পেকে যাবে,চামড়া ঝুলে যাবে, ফোঁকলা দাঁতের দাদী নানী হবে।

তোমার মায়াজালে বিভ্রান্ত হয়ে ভুলতে বসেছিলাম তুমি সসীম, তুমি নশ্বর। ভুলতে বসেছিলাম এই আকাশের ওপারেও আকাশ রয়েছে। তারওপর স্বর্ণ,মনিমুক্তো আর হীরার একটা প্রাসাদ রয়েছে আমার।

সেখানে যাবার রাস্তা দুনিয়াতে নিজের বাড়ি যাবার পথের চাইতেও ভালোভাবে চিনব। প্রাসাদের কাছাকাছি যাবার পরে অসাধারণ একটি দৃশ্য দেখে আমি থমকে যাব। আমার হার্টবিট মিস হবে। পা ভারী হয়ে যাবে, নড়াচড়া করতে পারব না।

কী সেই দৃশ্য?

জান্নাতী স্ত্রী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন- অপরূপ এই দৃশ্যে আমি মুগ্ধ হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকব বছরের পর বছর। ৪০ বছর পলকহীন চোখে তাকিয়ে উপভোগ করব জান্নাতী স্ত্রীর সৌন্দর্য। এমন সৌন্দর্য, এমন রূপ যা দুনিয়ার কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায়না। কোনো মানবহৃদয় তা কখনো কল্পনাও করতে পারেনা।

আল্লাহ (সুবঃ) বলছেন, ‘ আমি তাঁদেরকে বানিয়েছি বানানোর মতো করেই। তাঁদেরকে করেছি চিরকুমারী। তাঁরা হবে সমবয়সের প্রেম সোহাগিনী’। (সূরা ওয়াকিয়াঃআয়াত ৩৫-৩৮)

আয়তনয়না হুরদের সৌন্দর্যের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ (সুবঃ) বলছেন, তাঁরা যেন লুকিয়ে রাখা মুক্তো’ (সূরা ওয়াকিয়াঃ আয়াত ২৩)

‘ এরা যেন এক একটি প্রবাল ও পদ্মরাগ’ (সূরা আররহমানঃআয়াত ৫৮)

‘তাঁরা যেন সযত্নে লুকিয়ে রাখা ডিমের কুসুমের মতো উজ্জ্বল গৌর বর্ণের সুন্দরী’ ( সূরা আছছাফফাতঃ আয়াত ৪৯ )

জান্নাতীর স্ত্রীগণ এ কারণেই সুন্দরী নয় যে তাঁরা কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। বরং স্বয়ং আল্লাহ (সুবঃ) এদের সৌনদ্রযের সার্টিফিকেট দিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জান্নাতের স্ত্রীদের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- একজন জান্নাতের হুর যদি পৃথিবীর প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করে তবে মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র স্থান এমনভাবে আলোকিত, উদ্ভাসিত হয়ে যেতো যে তাতে চন্দ্র,সূর্যয়ের আলো পর্যন্ত নিষ্প্রভ হয়ে যেতো। সমগ্র পৃথিবী সুগন্ধিতে ভরে যেত। এমনকি যদি কোনো হুর, হাতের তালু পৃথিবীর দিকে মেলে ধরে তাহলে সমস্ত জগতবাসী তাঁর নূরের আভায় সম্বিৎ হারিয়ে ফেলত’। ( বুখারী)

হুর আল আইনরা এতোটাই রূপবতী যে জিব্রাইল (আঃ) এদের একজনকে একপলক দেখেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। [১] জান্নাতের স্ত্রীদের তোমার মতো শারীরিক সীমাবদ্ধতা নেই। তাদের টয়লেটে যেতে হয়না, গা দিয়ে গন্ধ বের হয়না, মুখের দুর্গন্ধ হয়না। তাঁদেরকে তো মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়নি। বরং আল্লাহ (সুবঃ) তাঁদের তৈরি করেছেন বিশেষভাবে- কস্তুরী, কর্পূর এবং জাফরান দ্বারা। এদের থুতুও মেশকের সুগন্ধ ছড়াবে। মাথার ওড়না দুনিয়া এবং এই পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম।

তোমার মতো তাঁরা কখনো বুড়িয়ে যাবেনা। কখনো তাঁদের সৌন্দর্য ম্লান হবেনা। বরং দিন দিন তাঁরা আরো বেশি রূপবতী, মায়াবতী হয়ে উঠবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমুআবারে জান্নাতী লোকেরা সেখানে একত্রিত হবে। তারপর উত্তরের হাওয়ায় সেখানকার ধুলা-বালি তাঁদের চেহারা ও কাপড়ের ওপর পড়বে। তাতে তাঁদের সৌন্দর্য বেড়ে যাবে। স্ত্রীদের নিকট ফিরে যাবার পরে তাঁদের স্ত্রীরা বলবেন, আপনারা তো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছেন’। জান্নাতী লোকেরাও স্ত্রীদের বলবেন , ‘ তোমরাও আগের চাইতে অনেক সুন্দর হয়ে গিয়েছো’। (মুসলিম)

জীবন বাবু হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথে হেঁটে মালয় সাগর, বিদর্ভ নগর ঘুরে শেষমেষ ববলতা সেনের কাছে যে শান্তি পেয়েছিলেল, আমি তোমার কাছে ঠিক সেই শান্তি পেতে চেয়েছিলাম। দিনরাত তুমি তুমি করেও অস্থিরতা,অশান্তি, নির্ঘুমরাতই কপালে জুটেছে বেশি । সবসময় সন্দেহ,ঝাড়ি,জেরা,পুলিশগিরি... এসবে শান্তি পাওয়া যায়?

জান্নাতের স্ত্রী কখনোই আমাকে তোমার মতো বকাবকি করবেনা, ঝাড়ির ওপর রাখবেনা, এটা কিনে দাও, ওইটা কিনে দাও, রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাও, সিনেমা দেখতে নিয়ে যাও ইত্যাদি আবদার করবেনা। কখনোই কটু কথা বলবেনা আমাকে। আমাকে সন্দেহ করবেনা।

‘তাঁদের সাথে থাকবে লজ্জাবতী,নম্র ও আয়তলোচনা তরুণীরা’ (সূরা আছ ছাফফাতঃআয়াত ৪৮ )

‘সেখানে তাঁরা কোনো অর্থহীন প্রলাপ শুনতে পাবেনা।বরং বলা হবে শুধু শান্তি! নিরবিচ্ছিন্ন শান্তি।’ (সূরা ওয়াকিয়াঃআয়াত ২৫-২৬)

বালিকা, তুমি যেমন আমার মৌলিক ভালোবাসা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছো জান্নাতের স্ত্রীরা কখনোই এমন করবে না। কখনোই ধোঁকা দিবেনা। আমাকে কোনো টেনশন করতে হবেনা- না জানি আমাকে ছেঁড়ে চলে যায় না জানি আমাকে ধোঁকা দেয়, না জানি আমার সাথে প্রতারণা করে। হুর আল আঈনকে তো কেবল আমার জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। না কোনো মানুষ বা জীন এদের দেখেছে আর না তাঁদের কেউ স্পর্শ করেছে।

‘সেখানে থাকবে আয়তনয়না স্ত্রীগণ। এদের কোনো জ্বীন বা মানুষ স্পর্শ করেনি’। (সূরা রহমানঃ আয়াত ৫৬)

.জান্নাতের স্ত্রী কখনোই আমাকে ছেড়ে চলে যাবেনা। অন্য পুরুষের দিকে চোখ তুলেও তাকাবেনা। মিষ্টি সুরে আমাকে বলবে, ‘ তোমার চাইতে হ্যান্ডসাম পুরুষ আর কেউ নেই। সমস্ত প্রশংসা তো সেই আল্লাহর যিনি তোমাকে আমার স্বামী আর আমাকে তোমার স্ত্রী বানিয়েছেন’। ( ইবনে জাওযী রহ, কারা জান্নাতের কুমারীদের ভালোবাসে প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩)

.আহহা! আমার কোনো টেনশন নেই। কোনো ভাবনা নেই। জান্নাতের স্ত্রী অসীম সময় জুড়ে আমাকেই শুধু আমাকেই ভালোবাসবে, প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে আগের মুহূর্তের চেয়েও বেশী ভালোবাসবে, আমার বুকের মুখ লুকোবে, আমাকে জড়িয়ে ধরেই সুখের গল্প লিখবে।

.জান্নাততো হলো সেই রূপকথার রাজ্য যেখানে দুঃখ,কষ্ট নেই, গ্লানি,অবসাদ,বিষণ্ণতা কিছুই নেই। শুধু সুখ আর সুখ। অবিরাম বৃষ্টির মতো সুখ। যার শুরু আছে শেষ নেই। জান্নাতের নেয়ামতের কথা কল্পনা করারও ক্ষমতা নেই মাটির মানুষের। এমনই এক রাজ্য সেটি। রূপকথার মতো যেখানে- অতঃপর তাহারা চিরকাল সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে থাকিল’।

‘কেউই জানেনা চোখ জুড়ানো কি কি নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়েছে জান্নাতে ’ (সূরা সাজদাঃআয়াত ১৭)

মাঝে মাঝে উত্থাল পাথাল জোস্ন্যায় ভেসে যায় চারিদিক। চাঁদের আলো যেন হেসে হেসে গলে পড়ে যায়। রাতজাগা বাতাস বকুলমালার তীব্র গন্ধ ভাসিয়ে নিয়ে আসে। এমন রাতে ঘুমানো অপরাধ। এই অপরাধ আমি করিনা। বাইরের বারন্দায়, দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে থাকি। শত সহস্র বছরের পুরোনো নক্ষত্ররা মিটিমিটি তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। আমিও কী তাদের দিকে তাকিয়ে থাকিনা? তোমায় ভেবে কল্পনায় আনমনে লিখতে থাকিনা এক উপাখ্যান? এক অদ্ভূত,কাল্পনিক কিন্তু সত্য প্রেমের উপাখ্যান...

‘তুমিও কি সহস্র বার আমার কথা ভেবেছো? নাকি তার চেয়েও বেশি; লক্ষ কোটি বার? ধূলো মলিন মিথ্যে কথার এই পৃথিবীতে বসে আমি কতো অযুত কোটিবার তোমার কথা ভেবেছি। পুকুর ধারে জলের গন্ধে চোখ ভিজিয়েছি। আর মস্তিষ্কের প্রত্যেকটি কোষ ব্যবহার করে কল্পনা করার চেষ্টা করেছি এমন এক সুখের যা কখনো কোন মানুষ অনুভব করেনি...

তুমি এলে... পাশে বসলে আমার, সবুজ ঘাসের ওপর। একটু দূরেই টলটলে স্বচ্ছ পানির বিশাল দীঘি। আকাশ থেকে একরাশ নীল ঝরে ঝরে পড়ে একটু নীলাভ দেখাচ্ছে দীঘিটাকে। তোমার কোলে আমি মাথা রেখে শুয়ে আছি। তুমি আলতো করে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছ। দুটো প্রজাপতি সেই কখন থেকে উড়ছে। তুমি তাদের দিকে তাকিয়ে খুশিতে হেসে দিলে। আমি দুশো একান্ন বারের মতো তোমার প্রেমে পড়লাম। আমার চোখ দেখেই তুমি বুঝে ফেললে সেটা, তাইনা?

খাম খেয়ালী মস্তান বাতাস এসে এলোমেলো করে দিল তোমার চুল। একগোছা চুল এসে পড়লো তোমার মুখের ডানপাশে। আমি ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিলাম।তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলে। দুশো বায়ান্ন বারের মতো আমি তোমার প্রেমে পড়লাম।

তোমার দুষ্টুমি ভরা চোখের তারায় নীল আকাশ তির তির করে কাঁপছিল। তুমি কি জানো, তোমার সেই সবুজাভ চোখ আমার ভেতরের কতো কিছুর মৃত্যু ঘটালো আর কতো কিছুর জীবন দিল? আড় চোখে তোমার দিকে তাকাতেই ধরা পড়ে গেলাম আবার। তোমার চোখেমুখে সবজান্তার হাসি। আমার কী দোষ বল? তোমাকে আল্লাহ যে বানিয়েছেন বানানোর মতো করেই।

বিকেলের এক নরম মুহূর্ত। তুমি আবদার ধরলে, কাউসার দেখতে যাবে। বেরিয়ে পড়লাম আমরা । নৌকায় দাঁড়িয়ে আগুন্তক বাতাসে তুমি মেলে দিলে দুই হাত। পাখির মতো। যেন এক্ষুনি গা ভাসাবে এই আগুন্তক বাতাসে। ঘোরলাগা এক আলো এসে পড়লো তোমার স্নিগ্ধ মুখটাতে। মুহূর্তেই তুমি যেন আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেলে। ছুঁতে ইচ্ছে করেনা, কথা বলতে ইচ্ছে করেনা,কাছে যেতেও ইচ্ছে করেনা। শুধু দূর থেকে দেখতে ইচ্ছে করে।

বছরের পর বছর ধরে।

দুশো তিপ্পানবারের মতো প্রেমে পড়লাম ঠিক তখনই।

.জানি তুমি আমার কল্পনার চাইতেও সুন্দর। আমার কল্পনা ধারে কাছেও যেতে পারেনা তোমার সৌন্দর্যের । তবু আমি তোমার কথা ভাবি। কল্পনায় তোমাকে ছুঁই হরদম।

হে হুর আল আঈন, হে আমার জান্নাতি স্ত্রী, তুমিও কি আমার কথা ভাবো অষ্টপ্রহর? তুমি কি কখনো প্রেমে পড়েছো আমার? জানিনা, জানতে চাইওনা। শুধু জেনে রাখো, অসীম গুণোত্তর ধারার মতো আমি তোমার প্রেমে পড়ে চলেছি, প্রেমে পড়তেই আছি।

...মাতাল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেয় গগণ শিরীষ গাছটা। ওর ডালপালার ছায়া বারন্দার জমীনে অদ্ভূত নকশা তৈরি করে। জ্যোৎস্না দুলে ওঠে। দূর থেকে ভেসে আসে পানকৌড়ির ডাক। ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আমার কল্পনার সুতো।ঠেস দিয়ে বসে থাকি আমি বারন্দায়। চোখের কোণে কী অশ্রুবিন্দু জমে? নাকি আমার মনের ভুল? কল্পনা? কি জানি!

অপেক্ষার প্রহরগুলো বড় কষ্টের। সবকিছুরই তো শেষ আছে -- তিক্ততার, শান্তির, অস্থিরতার, জীবনোপন্যাসের। দীর্ঘ অপেক্ষার তো বটেই।

তাইনা?

(শেষ)

(সত্য কাহিনী অবলম্বনে লস্টমডেস্টি টিম কর্তৃক অনুলিখিত,কিছুটা পরিবর্ধিত)

পড়ুন আগের দুটি পর্বঃ

দুশো তিপ্পান্নতম প্রেম (প্রথম পর্ব)

দুশো তিপ্পান্নতমপ্রেম (দ্বিতীয় পর্ব)

সব পর্ব একসঙ্গে পিডিএফঃ

রেফারেন্স-

[১] https://hearthis.at/raindropsmedia/18-bn-some-actions-that-lead-to-hellfire/

কৃতজ্ঞতাঃ

শেষের দুটি লাইন, একটি কবিতা থেকে নেওয়া। কবির প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।