“ফ্যান্টাসি কিংডম ” (প্রথম কিস্তি)
- lostmodesty
- Friday 31 August 2018
- 4 MIN READ
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
-ভাই , বলেন তো কিশোর পাশা বলে বাস্তবে কেউ আছে কিনা ?
পাশের বাসার ছাদ থেকে প্রশ্নটা ভেসে আসলো । সঙ্গে একরাশ উদ্বিগ্নতা । ছাদের চিপায় নিরিবিলিতে বসে একটু আতলামী করছিলাম । অচমকা এমন প্রশ্নে ভসকাইয়া গেলাম ।
উফফ! অসহ্য - শান্তি মতো একটু পড়তেও পারবো না । খুবই বিরক্তি নিয়ে বহু কষ্টে বই থেকে মুখ উঠিয়ে তাকালাম প্রশ্নকর্তার দিকে । (আঁতেল বলে একটু সুনাম ছিল এককালে ) প্রশ্নকর্তা পাশের বাসার তূর্য । যে সময়কার কথা বলছি, তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে সে। আমি তখন তার চেয়ে দুই বছরের বড় । একই স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ি । আমাকে ওস্তাদ মানে সে ।
চোখে মুখে রাজ্যের টেনশান নিয়ে তূর্য আমার উত্তরের অপেক্ষা করছে – যেন এই প্রশ্নের উত্তরে আমি কি বলি সেটার ওপর তার বাঁচা মরা নির্ভর করছে ।
তখনো তিন গোয়েন্দা ধরিনি , এক ফেলুদাতেই মজে ছিলাম তাই মূর্খতা ঢাকার জন্য পাল্টা প্রশ্ন করলাম – কোন কিশোর পাশা ?
সাগরেদ , ওস্তাদের মূর্খতায় একটু দমে গেল ।
-ঐ যে ভাই , ঐ কিশোর পাশা !!! রকিব হাসানের লিখা “তিন গোয়েন্দা” সিরিজের প্রধান গোয়েন্দা । আমেরিকায় থাকে ।
- হুম ,তো কি হইছে ?
- আর বইলেন না ,ভাই ! আমাদের ক্লাসের মুন আছে না, মেয়েদের ক্যাপ্টেন ?
-হুঁ ...তো ?
-তারে প্রপোজ করছিলাম আজকে ...
- তুই প্রপোজ করছিলি !!! এই পিচ্চি বয়সে !!!
- হ্যাঁ ভাই । তারপর কি হইছে শোনেন না ,মুন আমাকে বলছে সে আমাকে ভালবাসতে পারবে না (অভিমানী কন্ঠস্বরে)। সে অন্য একজনকে ভালোবাসে । তার নাম কিশোর পাশা । আমেরিকায় থাকে । ‘ধলা’ রবিন মিলফোর্ড আর ‘কাউলা’ মুসা আমানের সঙ্গে মিলে গোয়েন্দাগিরি করে । বেশ নামডাক । অ্যাঁ গোয়েন্দা হইছে আমার ...... যতসব লেজকাটা টিকটিকি !!!
তিন গোয়েন্দা সিরিজের লেখক রকিব হাসানকে একসময় বেশ সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল । সমালোচকদের অবশ্য দোষ ছিল না , তিন গোয়েন্দার বই পড়ে মাথা বিগড়ে যাওয়া পোলাপান যদি এডভেঞ্চারের লোভে বাড়ী থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তাহলে সেটা সিরিয়াসলি নেওয়াই উচিত । দুষ্টু ছেলেপিলেদের যেমন কান দুটো মলে দিয়ে বাসায় ফেরত পাঠানো দরকার তেমনি লেখকে একটু বকে দেওয়াওতো দরকার ।
একসময় ফেলুদার ভূত আমার ঘাড়ে বেশ ভালোমতোই চেপেছিল । ফেলুদার মতো চিত হয়ে শুয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকতাম, আঙ্গুল মটকাতে মটকাতে ঘরময় পায়চারী করে বেড়াতাম, ভ্রূ কুঁচকে চিন্তা করার ভান করতে করতে তো আমার চেহারায় পার্মানেন্ট একটা ভাব চলে আসলো ভ্রূ কুঁচকে থাকার , এখন চেষ্টা করেও ঠিক করতে পারিনা (ফেলুদার মতো হাতের আড়ালে কায়দা করে চারমিনার ধরিয়ে তাতে দুটান দেওয়ার চেষ্টা অবশ্য কখনো করিনি! আমি বরাবরই ভালো ছেলে !)
ফেলু মিত্তির , কিশোর পাশাদের দিন শেষ । মুভি /সিরিয়াল/পর্ন/আইটেম সং/ চটিগল্পের রমরমা অবস্থা এখন । এখনকার কিশোর কিশোরীরা এগুলোতেই বুঁদ হয়ে থাকে রাতদিন । ইউরোপ আমেরিকার কথা ছেড়েই দিলাম , খোদ আমাদের দেশের পর্নস্ট্যাটস দেখলে মাথা ঘুরে যায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীতে ৭৭ শতাংশ কিশোর পর্ন মুভিতে আসক্ত । বাস্তব অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ সেটা আমিও যেমন জানি তেমন আপনিও জানেন । বিস্তারিত জানার জন্য পড়ে দেখা যেতে পারে [বাংলাদেশে পর্ন-http://bit.ly/2ccXGnF ] । দেখুন যমুনা টিভির এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন - http://bit.ly/2c0TR1p
এই আসক্তি আমাদের জেনারেশানের ছেলেমেয়েদের যে কতটা ক্ষতি করে চলেছে তা আমরা বুঝি না । বোঝার চেষ্টাও করি না ।
জীবনের দশ বারোটা বসন্ত পার হয়ে যাবার পর দেহ ও মনে অন্যরকম একটা পরিবর্তন আসে । মন কি জানি চায় । ফ্রক পড়া পাশের বাসার মেয়েটার চোখদুটো একটু বেশী কালো মনে হয় ছেলেটার কাছে । সদ্য গোফের রেখা গজানো , শার্টের বোতাম খোলা কোঁকড়া চুলের ছেলেটাকে মাঝে মধ্যেই আড় চোখে দেখে ফ্রক পড়া মেয়েটাও । বিপরীত লিঙ্গের প্রতি, নারী পুরুষের শরীরটার প্রতি অদম্য একটা কৌতূহল জেগে ওঠে । কিছুদিন আগেও এই কৌতূহল মেটানো কঠিন ছিল । থ্রিজি, ফোরজির যুগে আজ সেটা পানির মতো সোজা । এখনকার ছেলেমেয়েরা দুধের দাঁত পড়ার আগেই সব কিছু জেনে ফেলছে । এটা খুব বেশী খারাপ কিছু হত না ,যদি বাবা মা বা অভিজ্ঞ কারো নিকট থেকে তারা কৌতূহল গুলো মেটাতো । কিন্তু দুঃখের বিষয় , সেক্স এডুকেশানের জন্য তারা ঢুঁ মারছে ইন্টারনেটের অন্ধকার গলিতে বা পর্ন/চটি গল্প গুলে খাওয়া কোন ইঁচড়ে পাকা বন্ধুর কাছে । আর তখনোই জ্বলে উঠছে বিশাল এক দাবানলের প্রথম অঙ্গারটা ......
জীবনের বেড়ে ওঠার এই সময়টাতে ছেলেমেয়েরা যা দেখে বা পড়ে সেটা তাদের মনোজগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে , বিষয়গুলো তারা সেরকম কোন চিন্তাভাবনা ছাড়াই ধ্রুব সত্য বলে গ্রহন করে নেয় এবং সেগুলো অনুসরন করার চেষ্টাও করে (লিখার শুরুতে এ নিয়ে বহুত প্যাচাল পেড়েছি)। পর্ন মুভি বা আইটেম সং বা চটিগল্পে নারী পুরুষের সম্পর্কটাকে খুবই বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে । বিশেষ করে নারীকে তো একেবারে পন্য (আইটেম বললে ব্যাপারটা ভালো বোঝা যায়) বানিয়ে ফেলা হয়েছে । আমাদের ছেলেরা পর্ন/ আইটেম সং দেখে, চটিগল্প পড়ে শিখছে - মেয়েরা তোমার সঙ্গে বিছানায় যেতে উদগ্রীব তুমি তার সঙ্গে যেভাবে , যখন যা মন চাই করতে পারবে , সে কখনো না করবে না , কোন আপত্তি করবে না , তুমি যদি তাকে বেধড়ক মারধোর কর, এমনকি ধর্ষণও করো তাহলেও সে তোমাকে কিছুই বলবে না , বরং সে ব্যাপারটা উপভোগ করবে । মেয়েরা শিখছে - তোমার সম্পদ এই শরীরটা । এটা তোমার হাতিয়ার । তুমি একে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে পুরুষের ওপর ছড়ি ঘুরাবে । সিড়িতে, গাড়ীতে, চিপায় চাপায়, রিকশায় একে ব্যবহার করবে , দরকার হলে লিটনের ফ্ল্যাটেও যাবে ।
আমাদের ছেলেমেয়েরা ঐসব শিখে তো বসে নেই । পর্দায় দেখা জিনিসগুলো বাস্তবেও করার চেষ্টা করছে । ১২-১৩ বছর বা আরো কম বয়সী ছেলেদেরকে আমরা মনে করি নাদান , অবুঝ শিশু , কদিন আগেও ফীডার খেত। কিন্তু এরা যে কি চীজ আমরা যদি বুঝতাম ! আশেপাশের কোন মেয়েকেই এরা রেহাই দেয় না , হোক সে কোন নিকটাত্মীয় যেমন কাজিন , মামী, চাচী বা পাড়াতো আপু , ক্লাসমেট , টিচার [ http://bit.ly/2c3OC2Y] , কাজের মেয়ে, পাশের বাসার আন্টি । সবাইকে নিয়ে ফ্যান্টাসীতে ভোগে ,মাস্টারবেট করে , চটিগল্প পড়ে , বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে , সুযোগ খোঁজে বা প্ল্যান করে এটা সেটা এবং ঐইটাও করে ফেলার । এরা কাউকে ছাড় দেয়না, কাউকে না ।
আল্লাহ্র কসম! আমি একটুকুও বাড়িয়ে বলিনি । এই ছেলেমেয়েরা যে অশ্লীলতার কতটা গভীরে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছে তা আমি আপনি কল্পনাও করতে পারবো না । কল্পনাও করতে পারবো না ।
চলবে ইনশা আল্লাহ্ ......