Published on

তুমি এক দূরতর দ্বীপ (পঞ্চম কিস্তি)

সারাদিন বিয়ে বিয়ে করে, বউ নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগে পড়াশোনার কথা একেবারে ভুলে যেয়োনা। তার মানে আবার এই না যে সারাদিন ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করবে। মুসলিম কখনো দুনিয়াবি ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক হতে পারেনা।

দেখ ভাই, ধরো আমি যদি তোমার মা, বোনকে তুলে গালি দিলাম। এখন তুমি কী করবে? আমাকে ‘সাইজ’ করতে গেলে উলটা সাইজ হয়ে যাবে, তোমার পড়াশোনার ক্ষতি হবে এই ভেবে কী তুমি চুপ করে থাকবে?

নিশ্চয়ই থাকবেনা, তাইতো?

এখন দেখো আল্লাহ আমাদের, আমাদের মা বাবার চাইতেও বেশি ভালোবাসেন। আমাদের এতো এতো পাপের পরেও আমাদের আলো বাতাস দিয়ে যাচ্ছেন, অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের নিয়ামতের সাগরে ডুবিয়ে রেখেছেন। এখন এই আল্লাহর আইন প্রতিনিয়ত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। কাবার চাইতেও আল্লাহর কাছে একজন মুসলিমের রক্ত প্রিয়। আজ সেই মুসলিমদের রক্ত ঝরছে সারাবিশ্বজুড়ে, কুরানের মুসাহাফ ছিড়ে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হচ্ছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হচ্ছে সেই সময় কীভাবে একজন মুসলিম দিনরাত ক্যারিয়ার চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকতে পারে? বলো ভাই ?

আল্লাহর প্রতি, রাসূলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কী শুধুই লোক দেখানো? শুধুই মিথ্যে দাবী ?

পড়াশোনার অবশ্যই দরকার আছে ভাই। তবে একটু চিন্তা করা দরকার পড়াশোনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে।

এই যে আমরা ফিরিঙ্গিদের দেশ থেকে এতো এতো পিএইচডি নিচ্ছি, এতো জ্ঞান বিজ্ঞান, এতো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার আমাদের, এতো এতো গোল্ডেন এ+ ... তারপরেও দেশে কেনো দুর্নীতির মহাউৎসব, কোটি কোটি টাকা লুট, হাজার হাজার টাকা দিয়ে বালিশ কেনা? ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রম, খুন, ধর্ষণের মহামারি? ছয় সাত বছরের বাচ্চারাও ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পায়না? মাদকে টাল যুবসমাজ?

খেয়াল করলে দেখা যায় সব বড় বড় চুরি,বাটপারি, কেলেঙ্কারি, বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর মতো জানোয়ারের কাজে এগিয়ে শিক্ষিতরাই।

শিক্ষার উদ্দেশ্যতো ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ। প্রাণী থেকে মানুষ হওয়া। আমরা কেন জানি শিক্ষিত হয়ে উল্টো মানুষ থেকে প্রাণী হয়ে যাই! আলমারী ভর্তি সার্টিফিকেট অর্জন করে শুয়োর,কুকুর কিংবা তার চাইতেও নিচু স্তরে কেন নেমে যায় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ?

২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১ ঘন্টা পড়াশোনা করো। দেখবে আল্লাহ্‌ (সুবঃ) এই এক ঘন্টার পড়াতেই বারাকাহ দিয়ে দিবেন। রেগুলার পড়াশোনা কর। আল্লাহ্‌র কাছে আমলের পরিমাণ কম হলেও, নিয়মিত করা হয় এমন আমল প্রিয়। আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ কর- ইয়া আল্লাহ্‌! আমার এই ১ ঘন্টার পড়াতেই বারাকাহ দিয়ে দাও। আমার হালাল রিযিকের জন্য যথেষ্ট করে দাও। আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও’। বাবা মার চোখে পড়ে এমন জায়গায় বসে পড়বা। নিশ্চিত করবা তুমি যে রেগুলার পড়াশোনা কর এটা বাবা মা দেখছেন। উনারা খুশি হবেন। বিয়ের জন্য রাজি করাতে সুবিধা হবে তোমার।

সারাদিন কিন্তু তুমি, আমি দ্বীনের খেদমত করিনা, খেয়াল করলে দেখবে ২৪ টা ঘন্টার বেশির ভাগই আমরা পার করে দেই আলসেমি, ফেইসবুক,মেসেঞ্জার, ইউটিউবে পড়ে থেকে, বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসি, আড্ডাবাজি আর অনর্থক কাজে।

না দ্বীনের কাজ হয় না দুনিয়ার। ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র এক ঘন্টা পড়াশোনা করতে পারবোনা আমরা? রেসাল্ট খারাপ হলে, সেমিস্টার বা বছর ড্রপ হলে জীবনে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হবে। এরকম অবস্থায় বেশিরভাগ পোলাপানই হতাশায় মুষড়ে পড়ে। পাললিক মৃত্তিকার মতো ঝুরজুরে হয়ে পড়বে ঈমানী জজবা।

আরেকটা কথা, যদি ছাত্রজীবনে বিয়ে করতে না’ই পারো মানে বাবা মা কোনোমতেই রাজি না হয়, তাহলে এইটা অন্ততপক্ষে বলে রাখো যে পড়াশোনা শেষ হলেই সঙ্গে সঙ্গে যেন বিয়ে দেয়। চাকুরী করতে হবে,বাড়ি করতে হবে এরকম শর্ত যেন দিয়ে না রাখে। শেষবর্ষে এসেই মেয়ে দেখা শুরু করে দিতে বলো। অনেক সময় মেয়ে দেখতেই অনেক সময় চলে যায়।

এখন মনে কর পড়াশোনা শেষ হয়ে গিয়েছে, বেকার চাকুরী পাচ্ছোনা, বিয়েও হচ্ছেনা । তখন কি করবে?

সেই একই প্রসেস। চাকুরীর জন্যে বসে থাকবনা। টিউশনি করাবো, ব্যবসা করবো। বাবা মাকে বোঝাবো।

এখানেই আমাদের অনেক শিক্ষিত ভাইয়েরা ধরা খেয়ে যান। ছোটোবেলা থেকেই আমাদের মন মগজে একদম খোদাই করে দেওয়া হয় যে, কলম পিষে বড়লোক হতে হবে। লেখাপড়া করে যে ঘাড়িঘোড়া চড়ে সে। ভাইয়েরা পড়াশোনা শেষে চাকুরী না পেলে বেকার বসে থাকবে বছরের পর বছর, তবু ব্যবসা করতে চাইবে না। এতো এলার্জি ব্যবসার প্রতি-ব্যবসায় যদি করা লাগে তাহলে এতো পড়াশোনা করলাম কেন। তাহলে এতো পড়াশোনা করলাম কেন। তাও আবার শুধু চাকুরী পেলে হবেনা, সরকারি চাকুরী। পিওনের চাকুরী হোক, সমস্যা নেই তাও সরকারী চাকুরী লাগবে। জমি-জমা বিক্রী করে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে হোক তবু সরকারি চাকুরী লাগবে।

কোটি কোটি বেকারের এই দেশে সরকারি চাকুরী পাওয়াতো আর মুখের কিছু না। আদা জল খেয়ে সবাই সরকারি চাকুরীর পড়া পড়ে, তোতাপাখির মতো সাধারণ জ্ঞান নামের ফালতু জিনিস মুখস্ত করে, কবি সাহিত্যিকদের জন্মদিন,মৃত্যুদিন মুখস্ত করে , বছরের পর বছর চলে যায়, মাথার চুল পরে চান্দু হয়ে যায়, চাকুরী আর হয়না। শরীর তো আর বসে থাকেনা। শরীরের ক্ষুধা ঠিকই লাগে। ভালো ছেলেগুলো সবর করে। নিজেকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করে। বাকিরা পর্ণ হস্তমৈথুন বা লিটনের ফ্ল্যাটে ক্ষুধা মেটায়। হতাশার গহীনে গভীরে ডুবে যায়। কেউ মেয়ে বিয়ে দেয়না দেখে এমন ভাষায় মেয়ের বাপ ভাইদের গালি দেই যে তা শুনলে ওদের চৌদ্দগুষ্ঠি কবর ছেড়ে উঠে আসবে।

ভাই দেখ, এরকম একটা চিন্তা আমাদের অনেকের মাথাতেই আসে যে এটা তো পুরোপুরি সমাজের দোষ, সমাজই তো এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে চাকুরি (বিশেষ করে সরকারি) ছাড়া টিকে থাকা কষ্টকর। সমাজের মানুষজনই তো ঠিক করে দিয়েছে বিয়ের উপযুক্ত হবার জন্য, এস্টাব্লিশড হবার জন্য আমার সরকারি চাকুরী লাগবে। এখানে তো দোষ পুরোপুরি সমাজের। আমাদের কোনো দোষই নেই ! ঠিক?

ভুল!

ভাই তুমি দেখতো, যাদের চাকুরী নেই, যারা ব্যবসা করে, যারা কৃষিকাজ করে,মুরগীর খামার দেই, মাছ চাষ করে তাদের কি বিয়ে হয়না? হয়। তাদেরকে কে মেয়ে দেয়? তুমি, আমি সরকারি চাকুরি না করলেও কি তারা তোমাকে আমাকে মেয়ে দেবেনা? যেই লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে, নেতার পেছনে ঘুরে ঘুরে আমি চাকুরী পাবার চেষ্টা করছি, সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করলে হতোনা? আল্লাহর জমিন অনেক প্রশস্ত। তাঁর ওপর ভরসা করে মেহনত করলে, ঠিকই রিযিকের সুন্দর ব্যবস্থা হয়ে যেত ইনশা আল্লাহ। ফুসকাওয়ালা,হালিমওয়ালারা ব্যবসা করে ঢাকা শহরে বাড়ি করে ফেলে আর তুমি আমি আছো চাকুরী (সরকারী চাকুরী) নিয়ে! ভাই দোষ একা সমাজের না। আমরাও দোষী। আমরা ভাব ধরেই বসে আছি। আমাদের অহংকারী মন চিন্তা করে, এতো উচ্চশিক্ষিত হয়ে আমি কেন ঐ চাষাভূষাদের কাজ করব? এসব আমার দ্বারা হবেনা। আমার একটা সম্মান আছেনা ! আমার বাবা ওমুক আমার চাচা তমুক! আমি সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলে আর আমি কিনা না আমার দ্বারা এসব হবেনা!

এই আত্মসম্মানই খেলো আমাদের! ধামড়া ছেলে হয়েও বাবার কাছে হাতখরচের টাকা নিতে আমাদের আত্মসম্মানে লাগেনা! বছরের পর বছর বেকার জীবন কাটাই, কিছু করার মুরোদ হয়নি আমাদের – এখন আমাদের আত্মসম্মান কোথায় থাকে? আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী যখন খোঁচা মেরে কথা বলে, বাবা মা’র মাথা হেঁট হয়ে যায় তখনই বা কোথায় থাকে আমাদের আত্মসম্মান? সরকারি চাকুরি আমরা শুধু এই জন্যেই চাইনা যে এর ফলে মেয়ের বাপদের মন গলবে, আমাদের হাতে মেয়ে তুলে দিবে। আমরা এজন্যে চাই যে সমাজের লোকদের সাথে যেন ভাব মারতে পারি, আমার হাতে অনেক ক্ষমতা থাকে, আমি পুলিশ, আমি বিসিএস ক্যাডার ... আহ! ভাবই আলাদা! ইয়ো ম্যান,আই এম দ্যা বস...! সমাজের আর দশজন মানুষের মতো নই আমি, আমি আলাদা, অন্যরকম আভিজাত্যের অধিকারী। সরকারি চাকুরী ছাড়াও বিয়ে করা যায়।বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই সরকারি চাকুরী ছাড়া বিয়ে করে।(এখানে মেয়ের বাপদেরও দোষ আছে। এগুলো নিয়ে পরে আমরা একটা সিরিজ করব ইনশা আল্লাহ।)

দেখ ভাই, দোষ অনেকেরই আছে। কিন্তু দোষ ধরার সময় আগে নিজেরটাই ধরা উচিত। নিজেদের দোষ খুজে বের করব, ঠিক হব নিজেরা, তারপর এই সমাজ, এই পৃথিবীকে বদলে দেব ইনশা আল্লাহ, তাইতো?

বিয়ে একটি ইবাদাত। নামায, রোযা, হাজ্জ যাকাতের মতোই একটি ইবাদত এটি। ছাত্রাবস্থায় বেকার অবস্থাতেই বিয়ে করা যায়। মেয়েও পাওয়া যায়। চোখ কপালে তুইলোনা আমার এই কথা শুনে।

মেয়ের বাপেরা তোমার হাতে মেয়ে তুলে দেয়না দেখে তুমি তাঁদের বকাঝকা করো, সমাজকে কষে গালি দিয়ে মনের সুখ খোঁজো। সাহাবীদের উদাহরণ টানো। কতো সহজেই তাঁদের বিয়ে হয়ে যেত, অভিজাত, রূপবতী মহিলারা নিঃস্ব, পথের ফকির সাহাবীদের বিয়ে করতেন। জ্বী,এগুলো সবই সত্যি। ঐ যুগ আর এ যুগের আকাশ পাতাল তফাত। কেন তফাত সেটিও আমরা আলোচনা করেছি। কীভাবে অবস্থা পরিবর্তন করতে হবে সেটা নিয়েও কথা বলেছি। তুমি সেগুলো না করে শুধু ঘ্যানঘ্যানে সুরে এই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিও না প্লিজ। অনেক পুরুষ সাহাবীতো বিধবা, বয়সে বড়, অসুন্দর নারীদেরও বিয়ে করেছেন। তুমি একটু খুঁজে দেখ, আশেপাশে অনেক অল্পবয়স্কা বিধবা, ডিভোর্সড মেয়েদের পাবে। তুমি তাঁদের বিয়ে করে নাও। এতীমখানায় যাও। অনেক মেয়ে পাবে। তাদের বিয়ে করো। তোমার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে খুঁজে দেখ- মেয়ে পাবে। আশেপাশের পরিচিতদের মধ্যে খোজাখুজি করলেও তুমি মেয়ে পাবে। বেকার অবস্থায়, ছাত্রাবস্থাতেই তোমার সঙ্গে বিয়ে দিবে। তুমি তাদের বিয়ে করে নাও।

দেখ ভাই আমরা কী করি, আমরা সমাজের স্ট্যাটাসকে প্রাণভরে গালি দেই। গালি দিয়ে আবার সমাজের সেই স্ট্যাটাসকেই আঁকড়ে ধরি। আমরা দশ বারোটা ফিল্টার বসাই। অমুক এলাকার মেয়ে লাগবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার লাগবে, ফ্যামিলি মিলতে হবে, সোশ্যাল স্ট্যাটাস মিলতে হবে ইত্যা ইত্যাদি। প্লাস সুন্দর, ফর্সা এসব তো আছেই। এই ফিল্টার সবগুলা রেখে আমরা কীভাবে আশা করি যে আমাদেরকে সমাজের বর্তমান অবস্থায় ‘প্রতিষ্ঠিত’ হবার আগে বিয়ে দেয়া হবে? এই বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে ভাই। সমাজ পরিবর্তনের জন্য কোন পদক্ষেপ নিজে না নিয়ে আমরা কীভাবে এটা আশা করবো যে সমাজবাস্তবতা এমনি এমনি বদলে যাবে? একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখব পৃথিবী বদলে গিয়েছে? আমরা বিয়ে করতে চাই, তারমানে মোটামুটি আমাদের একটা ম্যাচুইরিটি এসেছে। এসব তো বোঝার কথা আমাদের!

ভাই, নিজের কাছে একটু সৎ হলে দেখব, আসলে দিনশেষে ইসলাম ব্যবহার করে আমরা সুবিধা নিতে চাই। অভিজাত সুন্দরী মহিলারা গরীব সাহাবীদের বিয়ে করেছেন এটা আমরা ফোকাস করি, চাই যে সমাজ এটার ওপর আমল করুক। কিন্তু অনেক পুরুষ সাহাবা যে সহায় সম্বলহীনা নারীদের বিয়ে করতেন সেটার ওপর আমরা আমল করতে চাইনা। আমরা চাই মেয়ের বাপেরা স্যাক্রিফাইস করে, মেয়ের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ফেলে আমাদের সাথে যেন বিয়ে দেয়, কিন্তু আমরা চাইনা সাহাবীদের মতো স্যাক্রিফাইস করতে- নিজের কমফোরট জোন থেকে বের হয়ে বিধবা, ডিভোর্সড, এতীমখানার কোনো মেয়ে বা কম অবস্থা সম্পন্ন ফ্যামিলির কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে। ‘বিয়ে তো জীবনে একবারই হয়, সমাজে আমার ফ্যামিলির একটা স্ট্যাটাস আছেনা, আমি কেন এরকম মেয়েদের বিয়ে করতে যাব’-এরকমভাবে চিন্তা ভাবনা করি তোমরা। ওয়েল, মেয়েদের বাপ ভাইদেরও তো সমাজে একটা স্ট্যাটাস আছে, তারা কেন আমাদের মতো ছাত্র/ বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিবে? তাদের মেয়ের বিয়েও তো একবারই হবে? আমরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো এমন গ্যারান্টি কি কোথাও আছে? আমাদের চাইতে সামাজিক অবস্থান একটু নিচুতে এমন ঘরে বিয়ে করতে আমাদের অস্বস্তি লাগলে, কেন মেয়ের বাপ/ভাইদের বেকার/ছাত্র পাত্রের হাতে মেয়ে তুলে দিতে অস্বস্তি লাগবেনা ?

এখানে কেউ হয়তো বলবে যে নারী সৌন্দর্য, বংশ, অর্থের দিকে ফোকাস করা তো জায়েজ, হাদিসে আছে। হ্যাঁ এটা সত্য। কিন্তু যখন বিয়ে করাটা আমাদের দ্বীন বাঁচানোর জন্য দরকার, গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য দরকার, এবং যখন আমরা জানি যে এই সমাজে বিয়ে কঠিন তখন আদৌ এই অজুহাত কি দেওয়া যায়? এই সবকিছুই আমরা হয়তো পাব, মেয়ে রূপকথা পাতা থেকে উঠে আসা ডানাকাটা পরীর মতো হবে, আমরা যে এলাকার চাই সে এলাকারই হবে, ফ্যামিলির স্ট্যাটাসও মিলবে কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিয়ে করতে ৩০/৩৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে। তাহলে অপেক্ষা করতে থাকো, মেনে নাও, আর কানের কাছে সারাদিন ঘ্যানঘান করা বাদ দাও।

ভাই আমরা কেন এটা নিপাতনে সিদ্ধ ধরে নিছি যে শুধু মেয়েপক্ষই স্যাক্রিফাইস করবে? কেন আমি স্যাক্রিফাইস করবোনা? কেন তুমি করবেনা? কিছু মনে করোনা ভাই, এটা কিন্তু একধরণের ভন্ডামি।

চলবে ইনশা আল্লাহ…

আগের কিস্তিগুলো-

প্রথম কিস্তি

দ্বিতীয় কিস্তি

তৃতীয় কিস্তি

চতুর্থ কিস্তি